সোমবার সকালে কলকাতা হাইকোর্টের এজলাসে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্যের সাক্ষী থাকল সবাই। কলকাতা পুলিশের প্রতি ভরসা ও আস্থার বার্তা দিলেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। ধর্মতলায় তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ দিবসের সমাবেশের আগে যান চলাচলে যে ধরণের হট্টগোল, ট্রাফিক জ্যাম ও বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করা হচ্ছিল, বাস্তবে তা হয়নি—এমনটাই মত আদালতের। বরং পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতায় নাগরিকদের স্বাভাবিক চলাফেরা নিশ্চিত হয়েছে বলে আদালতের পর্যবেক্ষণ।
যান নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে হাইকোর্ট যে কঠোর মনোভাব দেখিয়েছিল কয়েক দিন আগেই, তা সকলেরই জানা। গত শনিবার হাইকোর্ট জানিয়েছিল, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা যেন কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির জন্য ব্যাহত না হয়। বিশেষ করে অফিসযাত্রী, চিকিৎসা সংক্রান্ত জরুরি যাত্রা বা আদালতের কাজে আসা আইনজীবীদের যেন কোনওরকম অসুবিধা না হয়, সে বিষয়ে কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতিরা। কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, দেওয়া হয়েছিল গাইডলাইন।
কিন্তু সোমবারের ছবিটা ছিল একেবারেই ভিন্ন। এ দিন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ নিজের এজলাসে বসেই বলেন, “আজ সকালে রাস্তায় বেরিয়ে দেখে মনে হয়েছে, সব কিছু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক, কোনও বড় জট নেই। এটা অবশ্যই প্রশাসনের দক্ষ ব্যবস্থাপনার ফল।” এই মন্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত আইনজীবী ও আদালত কর্মীদের মধ্যে স্বস্তি ও প্রশংসার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।
নিউ আলিপুর থেকে আসা এক আইনজীবী নিজেই আদালতে সাক্ষ্য দেন, তিনি প্রতিদিনের মতোই সময়মতো বাড়ি থেকে বেরিয়ে, কোনও সমস্যা ছাড়াই গাড়িতে চেপে আদালতে পৌঁছেছেন। এমন অভিজ্ঞতা একাধিক আইনজীবী এ দিন আদালতের সামনে তুলে ধরেন। কেউ বলেন, ধর্মতলার সমাবেশ ঘিরে যে ভয় বা আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল, বাস্তবে তার কোনও প্রতিফলন রাস্তাঘাটে দেখা যায়নি। বরং পুলিশ যে গাইডলাইন মেনে কাজ করেছে, তার ফলে শহরের স্বাভাবিক ছন্দ বজায় রাখা গেছে।
এই প্রসঙ্গে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ বলেন, “আমি বরাবরই বলে থাকি, কলকাতা পুলিশের উপর আমার একটা বিশেষ ভরসা আছে। বহু সময়েই তারা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষমতা দেখিয়েছে। এ বারও তার ব্যতিক্রম হল না।” তাঁর এই বক্তব্য কলকাতা পুলিশের জন্য কার্যত একপ্রকার সার্টিফিকেট বলেই মনে করছেন আইন মহল।
অনেকের মতে, কলকাতা পুলিশের এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে আগাম পরিকল্পনা, অঞ্চলভিত্তিক রুটম্যাপ তৈরি, গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন এবং বিকল্প রুট চালুর মতো পদক্ষেপ। এছাড়াও, সাধারণ মানুষের জন্য বিশেষ হেল্পলাইন, ট্রাফিক আপডেট এবং মিডিয়ার মাধ্যমে তথ্য প্রচারের দিকেও নজর দেওয়া হয়েছিল।
২১ জুলাইয়ের রাজনৈতিক তাৎপর্য এবং ভিড়ের হিসেব মাথায় রেখে এমন সাবলীল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অনেকেই বলছেন, কলকাতা পুলিশ প্রমাণ করেছে—যদি সদিচ্ছা, প্রস্তুতি এবং সঠিক নেতৃত্ব থাকে, তাহলে রাজনৈতিক কর্মসূচিও জনজীবনকে ব্যাহত না করেই সম্পন্ন করা সম্ভব।
সোমবার হাইকোর্টের এই মন্তব্যে কলকাতা পুলিশ যেমন স্বস্তি পেল, তেমনই এই বার্তায় রাজনৈতিক দলগুলির কাছেও এক স্পষ্ট বার্তা গেল—জনসাধারণের দুর্ভোগ না ঘটিয়েও গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করা যায়।