জমি না দিলে থমকে যাবে পার্পল লাইনের কাজ, রাজ্যের সিদ্ধান্তে হতাশ কর্তৃপক্ষ

কলকাতা মেট্রো (Metro) রেলের নতুন পার্পল লাইন নিয়ে বড় বাধার সম্মুখীন হল রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড (RVNL)। খিদিরপুর মেট্রো (Metro) স্টেশন নির্মাণের জন্য রাজ্য সরকারের…

Kolkata Metro

কলকাতা মেট্রো (Metro) রেলের নতুন পার্পল লাইন নিয়ে বড় বাধার সম্মুখীন হল রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড (RVNL)। খিদিরপুর মেট্রো (Metro) স্টেশন নির্মাণের জন্য রাজ্য সরকারের তরফ থেকে চাওয়া জমি না মেলায় এই স্টেশন বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।

Advertisements

আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সের ভিতরে ৮৩৭ বর্গমিটার জমি পাওয়ার কথা ছিল রেলের, কিন্তু রাজ্য সরকারের সাফ জানিয়ে দেওয়া, এই জমি দেওয়া হবে না। ফলত খিদিরপুর স্টেশন ছাড়াই পরিকল্পনা করতে বলা হয়েছে আরভিএনএল-কে।

   

জোকা থেকে বিবাদীবাগ পর্যন্ত ১৪.১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পার্পল মেট্রো (Metro) লাইন ইতিমধ্যেই আংশিকভাবে চালু হয়েছে। জোকা থেকে তারাতলা পর্যন্ত প্রায় ৭ কিমি রুটে চলছে যাত্রী পরিষেবা। পরবর্তী ধাপে মোমিনপুর, খিদিরপুর, ভিক্টোরিয়া, পার্ক স্ট্রিট হয়ে বিবাদীবাগ পর্যন্ত মেট্রো চালানোর পরিকল্পনা ছিল। এর মধ্যে মোমিনপুর পর্যন্ত এলিভেটেড (উঁচু) এবং খিদিরপুর থেকে বিবাদীবাগ পর্যন্ত অংশটি ভূগর্ভস্থ হওয়ার কথা।

কিন্তু সেই পরিকল্পনায় বড় ধাক্কা দিল রাজ্য সরকার। তারা জানিয়ে দিয়েছে, খিদিরপুর স্টেশন নির্মাণের জন্য আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সের জমি দেওয়া যাবে না।

সম্প্রতি রাজ্য সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে আরভিএনএল কর্তৃপক্ষকে। মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ-সহ একাধিক পদস্থ আধিকারিক ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে রেল বোর্ড এবং আরভিএনএল-এর আধিকারিকরাও ছিলেন।

মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজার পি উদয়কুমার রেড্ডি এই সিদ্ধান্তে প্রকাশ্যে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত থেকেই পরিষ্কার, তারা খিদিরপুরে মেট্রো স্টেশন চায় না। অথচ আমাদের হিসেব বলছে, এখানে প্রতিদিন গড়ে ৪৪ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতেন। এই স্টেশন না হলে শহরের বড় অংশ পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হবে।’’

খিদিরপুর স্টেশন বাতিল হলে, মোমিনপুর ও ভিক্টোরিয়া স্টেশনের মধ্যে দূরত্ব দাঁড়াবে প্রায় ৩.৬ কিলোমিটার। অথচ রেল সেফটি কমিশনের (CRS) নিয়ম অনুযায়ী, দু’টি ভূগর্ভস্থ স্টেশনের মধ্যে এতটা দূরত্ব রাখা যায় না। এর ফলে সেই পথে পরিষেবা চালু করাও কঠিন হয়ে পড়বে।

আরভিএনএল-এর ইঞ্জিনিয়ারদের মতে, রেসকোর্সের পাশে স্টেশন তৈরি হতে পারে বিকল্প হিসাবে। কিন্তু সেটাও জটিল। কারণ, রেসকোর্স এলাকা ব্যবহার হয় ভিভিআইপি হেলিকপ্টার অবতরণের জন্য, ফলে সেখানে কোনও নির্মাণ নিষিদ্ধ।

শেষ চেষ্টা হিসেবে মোমিনপুর ও ভিক্টোরিয়া স্টেশনের মাঝামাঝি কোনও অংশে ভেন্টিলেশন শাফট ও ইভাকুয়েশন শাফট (জরুরি অবস্থায় যাত্রী বের করার ব্যবস্থা) তৈরি করার পরিকল্পনা করছে রেল। তাও কঠিন এবং ব্যয়বহুল।

পর্যবেক্ষকদের মতে, খিদিরপুর স্টেশন তৈরি না হলে শুধু ওই এলাকার মানুষেরই নয়, শহরের বহু যাত্রীর অসুবিধা হবে। কারণ ওই স্টেশন ভিক্টোরিয়া, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, চৌরঙ্গি এবং বালিগঞ্জ সংযুক্ত করত। পাশাপাশি পার্পল লাইনের সঙ্গে ব্লু লাইনের মেট্রোর সংযোগ আরও জটিল হয়ে যাবে।

রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে রেল এবং যাত্রী—উভয়েরই ক্ষতি। খিদিরপুর স্টেশন বাদ দিলে পরিকল্পনায় বড় পরিবর্তন আনতে হবে, বাড়বে খরচ ও সময়। মেট্রো প্রকল্পের পরবর্তী ধাপগুলি নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। শহরের উন্নয়ন এবং পরিবহণ ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করতে হলে রাজ্য ও রেলের মধ্যে আরও সহযোগিতা প্রয়োজনমত পরিবহণ বিশেষজ্ঞদের।

খিদিরপুর স্টেশন হবে কি না, তা নিয়ে এখন জোর চর্চা প্রশাসনিক মহলে। আপাতত মেট্রো (Metro) প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে রাজ্য ও রেলের সমঝোতার উপর।