কলকাতা মেট্রো (Kolkata Metro) শহরের প্রাণস্রোত। প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী এই পাতাল রেলপথে ভরসা রেখে গন্তব্যে পৌঁছন। কিন্তু সম্প্রতি এই লাইফ লাইন যেন পরিণত হয়েছে যাত্রীদের জন্য এক নতুন ভোগান্তির কারনে। বিশেষত দক্ষিণেশ্বর থেকে কবি সুভাষগামী যাত্রীদের জন্য শহীদ ক্ষুদিরাম মেট্রো স্টেশন হয়ে যাতায়াত এখন এক দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে দক্ষিণেশ্বর থেকে কবি সুভাষের পথে যাত্রীদের শহীদ ক্ষুদিরাম মেট্রো স্টেশনে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কারণ কবি সুভাষ আর শহীদ ক্ষুদিরামের মধ্যে মেট্রো ঘোরানোর (রিভার্সাল) জন্য নির্দিষ্ট ব্যবস্থার অভাব। ফলে আপাতত শহীদ ক্ষুদিরাম স্টেশন প্রান্তিক স্টেশন হিসাবে কাজ করছে। এখানেই সমস্যার সূত্রপাত।
শহীদ ক্ষুদিরাম স্টেশনে যাত্রী নামানোর পর মেট্রো রেক অন্তত চার মিনিট দাঁড়িয়ে থাকে। এরপর খালি রেক এগিয়ে যায় কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশনের দিকে, যেখানে রিভার্সাল পয়েন্ট রয়েছে। সেখানে পৌঁছে পয়েন্ট সেটিং সম্পন্ন হয়। এসময় একটি বড় টেকনিক্যাল শর্তও মানতে হয়—প্ল্যাটফর্মে রেক ঢোকার আগে বিপরীতমুখী ট্রেনের জন্য পয়েন্ট সেট হবে না। ফলে সিগন্যাল পেতে সময় লাগছে বেশি।
পয়েন্ট সেট হওয়ার পরে ক্রস ওভার দিয়ে আপ লাইনে ঢুকে মেট্রো ধীরে ধীরে ফিরে আসে শহীদ ক্ষুদিরাম স্টেশনের আপ প্ল্যাটফর্মে। নিরাপত্তার কারণে সামনে থাকা রেকের সঙ্গে অন্তত ১৮০ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হয়। তারপর আরও অন্তত চার মিনিট দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলতে হয়, এবং শেষে রওনা দেয় দক্ষিণেশ্বরের দিকে।
এই অতিরিক্ত টেকনিক্যাল ধাপের কারণে প্রতিদিন দক্ষিণেশ্বর–কবি সুভাষ রুটে ট্রেনের সময়সূচি বিপর্যস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে ডাউন লাইনে একাধিক স্টেশনে ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। নিত্যযাত্রী অনুষ্কা রায় অভিযোগ করে বলেন,
“প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট দেরিতে চলছে মেট্রো। ভিড় এতটাই বেড়ে যাচ্ছে যে, উঠেই দাঁড়িয়ে থাকা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে যাতায়াত করা দুঃসহ হয়ে উঠছে।” অতিরিক্ত সময়ের এই বিলম্ব যাত্রীদের শুধু অসুবিধাই নয়, অফিসে দেরি, ট্রেন মিস, এমনকি স্বাস্থ্যগত চাপও সৃষ্টি করছে।
মেট্রো রেল সূত্রে খবর, সমস্যার সমাধানে শহীদ ক্ষুদিরাম মেট্রো স্টেশনে একটি নতুন রিভার্সাল পয়েন্ট তৈরি করার পরিকল্পনা চলছে। এর ফলে এখানে সরাসরি ট্রেন ঘোরানো সম্ভব হবে, এবং কবি সুভাষ স্টেশনে ফাঁকা রেক পাঠানোর দরকার হবে না। ফলে যাত্রী নামানো ও ওঠানোর সময়ও কমবে, এবং সামগ্রিকভাবে ট্রেন চলাচল আরও দ্রুত হবে।
মেট্রো কর্তৃপক্ষের আশা, রিভার্সাল পয়েন্ট তৈরি হলে শুধু সময়মত ট্রেন চলাচলই নয়, বরং যাত্রীদের ভোগান্তিও অনেকটাই কমে যাবে।
নিত্যযাত্রীরা বলছেন, মেট্রো কলকাতার জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই পরিষেবা সময়মত ও নির্বিঘ্নে চালানো শহরের জন্য অপরিহার্য। শহীদ ক্ষুদিরাম রিভার্সাল পয়েন্ট দ্রুত বাস্তবায়ন হলে, দক্ষিণেশ্বর–কবি সুভাষ রুটের যাত্রীরা আবারও স্বস্তিতে যাতায়াত করতে পারবেন বলে আশা করছেন সবাই।