বিধাননগর এলাকায় দুদিনের মধ্যেই খুলতে হবে হোডিং, কড়া নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের

কলকাতা হাই কোর্ট (Advertisement Hoarding) বৃহস্পতিবার একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে। আদালত নির্দেশ দিয়েছে, আগামী দু’দিনের মধ্যে বিধাননগর পুরসভা এলাকার সমস্ত বেআইনি হোর্ডিং (Advertisement Hoarding)খুলে ফেলতে…

bengal govt moves to high court on rg kar case

কলকাতা হাই কোর্ট (Advertisement Hoarding) বৃহস্পতিবার একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে। আদালত নির্দেশ দিয়েছে, আগামী দু’দিনের মধ্যে বিধাননগর পুরসভা এলাকার সমস্ত বেআইনি হোর্ডিং (Advertisement Hoarding)খুলে ফেলতে হবে। যদি কোনও বিজ্ঞাপন সংস্থা এই নির্দেশ অমান্য করে হোর্ডিং(Advertisement Hoarding) খুলতে না চায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি এবং জরিমানা আরোপ করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

এদিন, হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন। আদালত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, যেসব বিজ্ঞাপন সংস্থা বেআইনি হোর্ডিং (Advertisement Hoarding)স্থাপন করেছে, তাদেরকে অবিলম্বে সেগুলি খুলে ফেলতে হবে। এবং, রাজ্যকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে আদালতকে রিপোর্ট জমা দিতে হবে, যাতে তারা নিশ্চিত করতে পারে যে বেআইনি হোর্ডিংগুলো খুলে ফেলা হয়েছে।

   

এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বার্থ মামলা, যা দায়ের করেছিলেন আইনজীবী দিবায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, বিধাননগর পুরসভা(Advertisement Hoarding) এলাকার বিভিন্ন জায়গায় বেআইনি হোর্ডিং স্থাপন করা হচ্ছে, যা পুরসভার নিজস্ব নির্দেশিকার বিরোধিতা করে। তিনি আদালতে দাবি করেন যে, এই বেআইনি হোর্ডিংগুলির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব উপার্জন হয়, তবে তা সত্ত্বেও পুরসভা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

এদিনের শুনানিতে রাজ্য সরকার জানায়, বিধাননগর পুরসভা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় ৩৫১টি বেআইনি হোর্ডিংয়ের খোঁজ পাওয়া গেছে। এসব হোর্ডিং খুলে ফেলার জন্য সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলিকে নোটিস দেওয়া হয়েছে। এমনকি, সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছে, যাতে সাধারণ জনগণ এবং সংস্থাগুলির কাছে বিষয়টি পৌঁছাতে পারে।

হাই কোর্টে এই মামলার শুনানি চলাকালে প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম মন্তব্য করেন, “বেআইনি হোর্ডিং নিয়ে পুরসভা কেন পদক্ষেপ করছে না? কি তারা ইচ্ছে করেই নীরব রয়েছে?” তিনি আরও বলেন, “বেআইনি হোর্ডিং সাফ না করলে, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলিকে গ্রেফতার করা উচিত।” প্রধান বিচারপতির এই মন্তব্যের পর, রাজ্য সরকার আশ্বাস দেয় যে, যদি কোনও বিজ্ঞাপন সংস্থা নিয়ম না মেনে কাজ করে, তবে পুরসভা দ্রুত পদক্ষেপ নেবে এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

আইনজীবী দিবায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতকে জানান, অনেক সময় দেখা যায়, পুরসভা খেয়াল না করে বেআইনি হোর্ডিং স্থাপন করার কারণে শহরের সৌন্দর্য নষ্ট হয় এবং যান চলাচলে সমস্যা তৈরি হয়। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলিতে বেআইনি হোর্ডিংয়ের কারণে ট্রাফিক ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়, যা সাধারণ মানুষের চলাচলে সমস্যার সৃষ্টি করে। এর ফলে শুধু শহরের সৌন্দর্য ক্ষুণ্ণ হয় না, বরং মানুষের নিরাপত্তাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠে।

বিধাননগর এলাকায় বেআইনি হোর্ডিংয়ের প্রবণতা নতুন নয়। কয়েক বছর ধরে, বিভিন্ন বিজ্ঞাপন সংস্থা এই বেআইনি হোর্ডিং স্থাপন করে চলে আসছে, যেগুলি একদিকে পুরসভার রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও, অন্যদিকে শহরের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। অভিযোগ, পুরসভা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনেক সময় উদ্যোগী হয়নি বা যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি।

এখন, কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে এই সমস্যার সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। রাজ্য এবং পুরসভাকে একযোগে কাজ করতে হবে যাতে শহরের সুষ্ঠু চলাচল নিশ্চিত করা যায়। এই বেআইনি হোর্ডিং সাফ না করলে শুধু যানজট এবং শহরের সৌন্দর্য নষ্ট হবে না, বরং মানুষের নিরাপত্তাও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

এছাড়াও, এই মামলার মাধ্যমে আদালত আরেকটি বার্তা দিয়েছে যে, বেআইনি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধুমাত্র রাজস্ব আদায় নয়, শহরের প্রশাসনিক কার্যক্রমের স্বচ্ছতা এবং জনস্বার্থের দিকে নজর রেখে সকলকে আইন মেনে চলতে হবে। আদালতের এই নির্দেশ রাজ্য এবং পুরসভার কাছে একটি বড় পরীক্ষা হতে চলেছে, যা তাদের কার্যকারিতা এবং দায়িত্ববোধকে এক নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করবে।

এখন দেখার বিষয় হলো, রাজ্য সরকার এবং পুরসভা কিভাবে এই নির্দেশ বাস্তবায়িত করে এবং বেআইনি হোর্ডিংয়ের সমস্যার স্থায়ী সমাধান বের করে।