প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডি-র হাতে গ্রেপ্তার হওয়া সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র (Sujoykrishna Bhadra), যাকে শহরে ‘কালীঘাটের কাকু’ (Kali Ghat Kaku) হিসেবে পরিচিত, তার জন্য কলকাতা হাইকোর্টে (Kolkata High Court) আগাম জামিনের আবেদন উত্থাপন করেছিলেন। তিনি সিবিআই-এর গ্রেপ্তারি থেকে বাঁচতে এবং তাঁদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ঠেকানোর জন্য এই আবেদন করেন। কিন্তু, সোমবার কলকাতা হাইকোর্ট তার আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয়। এর ফলে, সিবিআই-র তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ এবং ‘শোন অ্যারেস্ট’ দেখানো ঠেকানোর জন্য সুজয়কৃষ্ণের কোনো আইনি রক্ষাকবচ রইল না।
গত মে মাসে, ২০২৩ সালে, নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে ইডি-র হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র (Sujoykrishna Bhadra)। ইডি-র মামলায় জামিন পাওয়ার পর, সিবিআই নতুন করে তাকে হেফাজতে নিতে চেয়েছিল, যাতে তাঁর বিরুদ্ধে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে পারে এবং আরও তদন্ত করতে পারে। কিন্তু সুজয়কৃষ্ণ অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে পাঁচ বার নিম্ন আদালতে হাজিরার নির্দেশ অমান্য করেন। এর পরেই সিবিআই তাঁর গ্রেপ্তার ঠেকানোর জন্য কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেছিল।
কলকাতা হাইকোর্টের (Kolkata High Court) ডিভিশন বেঞ্চে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং গৌরাঙ্গ কান্থ এই মামলার শুনানি করেন। শুনানির সময়, আদালত প্রশ্ন তুলেছিল, কেন গত দেড় বছর ধরে অভিযুক্ত ইডি মামলায় আটকে থাকার সময় সিবিআই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি? আদালত সিবিআইকে নির্দেশ দেয়, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের বিরুদ্ধে নতুন কোনো তথ্য পাওয়া গিয়েছে কিনা, তা আদালতে জমা দেওয়ার জন্য।
আদালতের এই প্রশ্ন এবং নির্দেশ সত্ত্বেও, শেষমেশ ‘কালীঘাটের কাকু’ অর্থাৎ সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়। এর ফলে, সিবিআই-র জন্য সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা এখন আর আইনি বাধায় আটকে থাকবে না। আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, কলকাতা হাইকোর্টের (Kolkata High Court) এই রায়ের পর সিবিআই খুব শীঘ্রই সুজয়কৃষ্ণকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করতে পারে।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডি-র গ্রেপ্তারি এবং সিবিআইয়ের নতুন তদন্তঃ
২০২৩ সালের মে মাসে, প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে গ্রেপ্তার করেছিল ইডি। এই মামলায় ইতিমধ্যেই তিনি জামিন পেয়েছেন, তবে সিবিআই তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। সিবিআই জানায়, তারা সুজয়কৃষ্ণকে হেফাজতে নিয়ে নতুন তথ্য সংগ্রহ করতে চায় এবং এর জন্য আদালতে আবেদন জানিয়েছিল। যদিও সুজয়কৃষ্ণ অসুস্থতার অজুহাতে বারবার নিম্ন আদালতের নির্দেশ অমান্য করেন, তবে আদালত এ বিষয়ে কোনো বিশেষ পদক্ষেপ নেননি।
এই মামলায় সিবিআই-র তৎপরতার বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টের (Kolkata High Court) ডিভিশন বেঞ্চে প্রশ্ন উঠেছিল। আদালত জানতে চেয়েছিল, “গত দেড় বছর ধরে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ইডি-র হেফাজতে থাকার পর কেন সিবিআই তার বিরুদ্ধে কোনো তদন্তের উদ্যোগ নেয়নি?” এই প্রশ্নে সিবিআইয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছিল, কারণ মামলার প্রেক্ষিতে এমন কোনো উদ্যোগ না নেওয়া তদন্তকারী সংস্থার কার্যক্রম নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
আইনি পরিণতি: সুজয়কৃষ্ণের জন্য আইনি বাধা কাটলোঃ
কয়েকটি সূত্রের মতে, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের বিরুদ্ধে নতুন তথ্য বা প্রমাণ উঠে আসতে পারে, যার কারণে সিবিআই তাকে হেফাজতে নিয়ে আরও বিস্তারিত তদন্ত করতে চাইছে। এই পরিস্থিতিতে, আদালতের খারিজ করা জামিনের আবেদন সিবিআই-কে তার তদন্তের কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে। সুজয়কৃষ্ণের পক্ষে তাঁর আইনজীবীও আশাবাদী ছিলেন যে, হাইকোর্ট জামিন মঞ্জুর করবে, কিন্তু আদালতের এই রায় আসার পর তাঁর আশা ভঙ্গ হয়।
এদিকে, ‘কালীঘাটের কাকু’ বা সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের পরিচিতি কলকাতায় এক ধরনের বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তিনি নিজে রাজনৈতিক এবং সামাজিক জীবনে সক্রিয় ছিলেন এবং বেশ কিছু সময় ধরে জনসমক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। যদিও তিনি ইডি-র হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাঁর কর্মকাণ্ডে অনেক প্রশ্ন উঠেছে, কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে লাগানো সব অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে।
কালীঘাটের কাকু: রাজনৈতিক প্রভাব ও বিতর্কঃ
সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ‘কালীঘাটের কাকু’ নামে পরিচিত, যেহেতু তিনি কালীঘাট এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। এই প্রভাবের কারণে অনেকেই মনে করেন, তিনি রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে এক শক্তিশালী অবস্থান বজায় রেখেছিলেন। তবে, নিয়োগ দুর্নীতি মামলার প্রেক্ষিতে যখন তাঁর নাম উঠে আসে, তখন থেকে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ শুরু হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে যুক্ত ছিলেন এবং প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের দুর্নীতির সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল।
এই মামলার পর, সুজয়কৃষ্ণের বিরুদ্ধে আরও তদন্ত শুরু হয়েছে এবং সিবিআই তার বিরুদ্ধে আরও তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে। কলকাতা হাইকোর্টের (Kolkata High Court) রায় এবং সিবিআই-এর তদন্তের পরবর্তী পদক্ষেপগুলো এখন জনগণের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সুজয়কৃষ্ণের ভবিষ্যত এবং সিবিআইয়ের তদন্তঃ
কলকাতা হাইকোর্টের (Kolkata High Court) এই রায়, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যদিও তাকে ইতিমধ্যেই ইডি-র মামলায় জামিন দেওয়া হয়েছে, তবে সিবিআইয়ের তদন্তের নতুন পর্ব শুরু হতে চলেছে। তার বিরুদ্ধে আরও নতুন তথ্য আসলে, তা তাঁর আইনি অবস্থানকে আরও বিপদে ফেলতে পারে। এখন সব দৃষ্টি রয়েছে সিবিআইয়ের তদন্তের ওপর, যেহেতু এটি আরও নানা গুরুত্বপূর্ণ দিক উন্মোচন করতে পারে।