কলকাতা: কসবা সাউথ ক্যালকাটা ল- কলেজে (Kasba Law College) ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় নতুন করে সামনে এলো একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। তদন্তে নেমে ‘সিট’ বা বিশেষ তদন্তকারী দল জানতে পেরেছে, মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র এবং তার দুই সহযোগী জায়েব আহমেদ ও প্রমিত মুখোপাধ্যায় শুধু নির্যাতিতাকে নয়, এর আগেও বহু ছাত্রীকে ব্ল্যাকমেল করেছে অশ্লীল ছবি এবং ভিডিওর মাধ্যমে।
পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, কলেজের (Kasba Law College) ছাত্রীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই অশালীন আচরণ করত মনোজিৎ এবং তার গোষ্ঠী। তাঁদের সঙ্গে জোর করে ছবি তোলা হত, এমনকি বিভিন্ন সময়ে ভিডিও রেকর্ড করে সেইসব ফুটেজ দেখিয়ে ছাত্রীদের ভয় দেখানো হত। জানা গিয়েছে, কাউকে যদি এ নিয়ে মুখ খুলতে দেখা যেত, তাহলে ভিডিও ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিত তারা।
এমনকি সম্প্রতি যে নির্যাতিতার ওপর নৃশংস ঘটনা ঘটে, তার ক্ষেত্রেও একই কৌশল ব্যবহার করা হয়েছিল। ঘটনার দিন ধর্ষণের সময় দু’টি ভিডিও করা হয়েছে বলে অভিযুক্তরা নিজেরাই স্বীকার করেছে। পুলিশের সন্দেহ, আরও বেশ কিছু অশ্লীল ভিডিও ও ছবি অভিযুক্তদের ল্যাপটপ, মোবাইল এবং পেন ড্রাইভে সেভ করে রাখা হয়েছে।
এই কারণেই রবিবার অভিযুক্ত প্রমিত মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে হাওড়ার চ্যাটার্জিহাটে তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালায় ‘সিট’। এলাকার বাসিন্দারা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁরা পুলিশের সামনেই অভিযুক্তের কঠোর শাস্তির দাবি তোলেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রমিতের বাড়ি থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং নথি উদ্ধার করা হয়েছে। একইভাবে কালীঘাটে মনোজিৎ এবং তিলজলায় জায়েবের বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়েছে। অভিযুক্তদের মোবাইল, ল্যাপটপ, পেন ড্রাইভসহ একাধিক গ্যাজেট খতিয়ে দেখছে ফরেনসিক টিম।
তদন্তে জানা গেছে, ধর্ষণের ভিডিও ছাড়াও ঘটনাস্থল তথা কলেজের গার্ডরুম, ইউনিয়ন রুম এবং বাথরুম এলাকা থেকে রক্তের দাগ, ছেঁড়া চুল সহ একাধিক আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযুক্ত তিনজনের পোশাক এবং জুতোও ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া, তদন্তকারীরা জানতে পেরেছে, ধর্ষণের ঘটনা ঘটানোর আগে মনোজিৎ এবং তার দুই সঙ্গী দীর্ঘদিন ধরেই পরিকল্পনা করছিল। শুধু তাই নয়, মনোজিৎ এর আগে বিভিন্ন সময় সহপাঠীদের মারধর, কলেজে অশান্তি ছড়ানো এমনকি থানায় তাণ্ডব চালানোর অভিযোগে গ্রেফতারও হয়েছিল। তবে জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের কলেজে ঘুরে বেড়াত সে।
মনোজিতের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগও রয়েছে। জানা গেছে, দক্ষিণ কলকাতার অন্য এক কলেজে ভর্তির নাম করে দুই ছাত্রের কাছ থেকে টাকা আদায় করেছিল সে। ২০২২ সালে তার বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের আরও একটি মামলা চলমান রয়েছে, তারও তদন্ত চলছে।
পুলিশের মতে, অভিযুক্তদের অপরাধের পরিধি দিন দিন বেড়েছে। ‘সিট’ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তদের সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপেও কিছু ভিডিও শেয়ার করা হয়েছিল। সেই গ্রুপের বাকি সদস্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এই মুহূর্তে পুলিশ, সাইবার ক্রাইম বিভাগ এবং ফরেনসিক টিম মিলে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহে ব্যস্ত। রাজ্য জুড়ে এই ঘটনায় চরম ক্ষোভ ও উদ্বেগ ছড়িয়েছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি উঠছে।