কালীপুজো কলকাতার একটি জনপ্রিয় উৎসব, যা প্রতিবারই বিপুল উদ্দীপনার সাথে পালিত হয়। কিন্তু এই উৎসবের সময় শব্দ ও বায়ুদূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এবারের কালীপুজোর রাত যত বাড়ল ততোই দ্বিগুণ পাল্লা দিয়ে বাড়ল শব্দের প্রকোপ। কালীপুজোর রাতে কলকাতায় ছাড়িয়ে গেল শব্দদূষণের (Diwali Noise Pollution Kolkata) মাত্রা। গতকাল রাতে কলকাতায় দূষণের মাত্রা কেমন ছিল সেই তথ্যই এবার তুলে ধরব আমরা।
কালীপুজোর রাতে শহরের বিভিন্ন অংশে শব্দদূষণের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু এলাকায় শব্দের মাত্রা ১০০ ডেসিবেলেরও বেশি পৌঁছেছে। সেন্ট্রাল কলকাতার মতো এলাকাগুলিতে বাজির আওয়াজ ও অন্যান্য উৎসবের শব্দ মিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়। তাহলে এবার দেখে নেওয়া যাক, কোথায় কতটা পেরোল শব্দদূষণের মাত্রা? সেন্ট্রাল কলকাতা: এখানে শব্দদূষণের মাত্রা ছিল ৯৫-১০০ ডেসিবেল এবং বায়ু মান সূচক ছিল ৩০০-এর কাছাকাছি।
উত্তর কলকাতা: শব্দদূষণ ৮০-৯০ ডেসিবেল পর্যন্ত পৌঁছায়, বায়ু মান সূচক ২৫০-২৭০-এর মধ্যে ছিল। দক্ষিণ কলকাতা: এখানে শব্দদূষণের মাত্রা ছিল ৮০ ডেসিবেল, কিন্তু বায়ু মান সূচক ২০০-এর নিচে ছিল। আরজি কর হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় রাত ১২টায় শব্দের মাত্রা ছিল ৭২.৭ ডেসিবেল। রাত সাড়ে ১২টায় এসএসকেএম হাসপাতালের দিকে শব্দ ছিল ৫৮.২ ডেসিবেল। টালিগঞ্জে রাত সাড়ে ১২টায় শব্দ ছিল ৭৮.৮ ডেসিবেল, রাত ১২টা ১০ মিনিটে তারাতলায় শব্দ ছিল ৭১ ডেসিবেল।
নিউ মার্কেট চত্বরে রাত ১২টা ২০ মিনিটে শব্দ পৌঁছেছিল ৭০.৭ ডেসিবেলে। রাত ১২টায় সল্টলেকে ৫৬.১ ডেসিবেল, পাটুলিতে ৬৯.৪ ডেসিবেল, বিরাটিতে ৭৫.৪ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দ হয়। রাত ১টা থেকে আড়াইটে পর্যন্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শব্দদূষণের দিক থেকে এগিয়ে কসবা। ২টো ২০ মিনিটে সেখানে শব্দ ছিল ১০৩.২ ডেসিবেল পর্যন্ত। সেইসময়ে সল্টলেকে ৫৭ ডেসিবেল, টালিগঞ্জে ৭৩.৪ ডেসিবেল, বিরাটিতে ৫৬.৮ ডেসিবেল ছিল শব্দদূষণের মাত্রা। রাত ১টা ২০ মিনিটে বাগবাজারে শব্দদূষণ ছিল ৭৮.৫ ডেসিবেল।
তারাতলায় রাত আড়াইটে নাগাদ শব্দ ছিল ৭০.১ ডেসিবেল। রাত ২টো ৪০ মিনিটে নিউ মার্কেট এলাকায় শব্দ ছিল ৭২.৫ ডেসিবেল। এসএসকেএম চত্বরে ১টা ৫০ মিনিটে শব্দদূষণ ছিল ৫৮.২ ডেসিবেল। তবে জানা যাচ্ছে, এই শব্দের তাণ্ডব চলেছে ভোররাত পর্যন্ত। তবে শব্দদূষণের পাশাপাশি বায়ুদূষণেরও সমস্যা বৃদ্ধি পায়। বাজি পোড়ানোর ফলে বাতাসে কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড এবং অতি সূক্ষ্ম কণার (PM2.5) পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
অতি সূক্ষ্ম কণার (PM2.5) উপস্থিতি বৃদ্ধি পায়, যা শ্বাসযন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক। কলকাতার বিভিন্ন এলাকার বায়ুর মান সূচকগুলি রেকর্ড করে দেখা গেছে, কিছু অঞ্চলে বায়ুর মান ‘অত্যন্ত খারাপ’ স্তরে পৌঁছে গেছে। কালীপুজোর পরবর্তী দিনে বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করে জানিয়েছেন, বায়ুদূষণের কারণে শ্বাসকষ্ট, এলার্জি, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।এমনিতে কলকাতার বায়ুর মান সাধারণত ভাল নয় এবং কালীপুজোর সময় এটি আরও খারাপ হয়ে যায়।
পরিবেশবিদরা সতর্ক করেছেন যে, এই ধরনের দূষণের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক হতে পারে। অনেক মানুষ যারা পূর্বেই শ্বাসকষ্ট বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন, তারা বিশেষভাবে বিপদে পড়েন। তাই শব্দ এবং বায়ুদূষণ কমাতে সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি নিজেদেরও সতর্ক হতে হবে।