বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানটির সুর-বদল করার জন্য অস্কারজয়ী সঙ্গীত পরিচালক এআর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কবির পরিবার।নির্মাতাদের সঙ্গে ২০২১ সালে হওয়া একটি চুক্তিপত্রও পরিবারের সদস্যরা সামনে এনে অভিযোগ করছেন যে ওই চুক্তিতে একাধিক অসঙ্গতি তারা খুঁজে পেয়েছেন।
কলকাতায় সাংবাদিক সম্মেলন করে কাজী নজরুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা জানান ভারতে মামলা হবে পাশাপাশি বাংলাদেশে জনস্বার্থ মামলা করার প্রস্তুতিও চলছে। মঙ্গলবার রাতে সিনেমার নির্মাতাদের তরফে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে ।সেখানে তারা লিখেছেন যে তারা গানটিকে যেভাবে ব্যাখ্যা করেছে, “তা যদি ভাবাবেগে আঘাত দিয়ে থাকে, তাহলে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইছি।“ক্ষমা চাওয়ার কথা বলেও তারা কিন্তু এটা উল্লেখ করছে যে পরিবারের কাছ থেকে যথাযথ অনুমতি নিয়ে, লিখিত চুক্তি করেই তারা গানটি ব্যবহার করেছিল।
তবে চুক্তিপত্র নিয়ে কাজী পরিবারে বড়সড় ফাটল সামনে এসেছে। চুক্তি নিয়ে অসঙ্গতির কথা সামনে এনেছেন কাজী নজরুলের পরিবার।তারা বলছেন, প্রথমত নথিটি কোনও স্ট্যাম্প পেপারে ছাপা নয়, যদিও ওপরে লেখা আছে “[অন স্ট্যাম্প পেপার]” শব্দগুলি।সিনেমা নির্মাতাদের সঙ্গে চুক্তি বলে যেটি দাবী করা হচ্ছে, সেটা শুরুই হয়েছে কল্যাণী কাজীকে সম্বোধন করে, চিঠির আকারে।
কাজী নজরুল ইসলামের পরিবারের চতুর্থ প্রজন্মের সদস্য অভীপ্সা কাজী বলেন, “কল্যাণী কাজী যেখানে সই করেছেন, তাতে কোনও তারিখ উল্লেখ করা নেই, অথচ ওই চিঠিটির তারিখ রয়েছে আটই সেপ্টেম্বর।””আবার আশ্চর্যজনকভাবে সাক্ষী হিসাবে কাজী অনির্বাণ যেখানে সই করেছেন, সেখানে তারিখ লেখা চৌঠা সেপ্টেম্বর । তার মানে কি চুক্তি লেখার আগেই সাক্ষী সই করে দিয়েছিলেন?”
কল্যাণী কাজীকে সম্বোধন করে লেখা ওই চিঠি / চুক্তিকে একবার লেখা হয়েছে, “আপনার দাদু প্রয়াত শ্রী কাজী নজরুল ইসলাম”, অথচ কল্যাণী কাজী তো আসলে কাজী নজরুল ইসলামের পুত্রবধূ।অভীপ্সা কাজী প্রশ্ন তুলছেন, “তার মানে কী আসলে আলোচনা এবং চুক্তিটা কাজী অনির্বাণের সঙ্গেই হয়েছিল? কল্যাণী কাজীকে দিয়ে শুধু সই করিয়ে নেওয়া হয়েছিল?”
চুক্তিপত্রে অসঙ্গতিগুলির প্রসঙ্গে কল্যাণী কাজীর ছেলে কাজী অনির্বাণ বলছেন, “কোথায় তারিখ নেই, বা তারিখে অসঙ্গতি, মা কে কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি বলে কেন সম্বোধন করা হল, এইসব আইনি খুঁটিনাটি আমি খতিয়ে দেখিনি। বিশ্বাস করে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। আর সব কিছুর জন্য আমাকে কেন দায়ী করা হচ্ছে?”
কথিত চুক্তিটিতে যে শর্তের ফলে ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানটির সুর বদল করা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, সেই “রিক্রিয়েট”, “এডিট” এবং “রিফর্ম্যাট” শব্দগুলি সম্বন্ধে কাজী অনির্বাণ বলেন, “এই শব্দগুলো যে রয়েছে, সেটা মা নিশ্চিতভাবেই খেয়াল করেছিলেন।”
“তিনি আমাকে বলেছিলেন যে এ আর রহমান তো মিউজিক নিয়ে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন, সেরকমই কিছু হয়তো করবে। মা ভাবতেই পারে নি যে ওই শর্তের সুযোগে সুর বদল করে দেওয়া হবে। জেনে শুনে এধরনের অনুমতি মা কখনই দিত না।”
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশে বসবাসকারী কাজী নজরুলের নাতনি খিলখিল কাজী এবং ভারতে বসবাসকারী কবির নাতি কাজী অরিন্দম বলেন এআর রহমান এবং ‘পিপ্পা’ সিনেমাটির নির্মাতা সংস্থাকে ক্ষমা চাইতে হবে কাজী নজরুলের গানটিকে ‘বিকৃত’ করার ‘গর্হিত অপরাধে’।কাজী নজরুল ইসলামের গানকে তো এভাবে আমরা ছাড় দিতে পারি না।
কাজী নজরুলের নাতি কাজী অরিন্দম আবার বলছিলেন, “এটা তো শুধু একটা গান নয়, এটা একটা আন্দোলন, একটা ইতিহাস। বহু স্বাধীনতা সংগ্রামীর ইতিহাস এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। ‘পিপ্পা’ ছবির নির্মাতাদের গানটির ইতিহাস অধ্যয়ন করা উচিত ছিল। আমরা চাইব গানটি সিনেমা থেকে প্রত্যাহার করে মূল সুরটি ফিরিয়ে আনা হোক।”