শনিবারের মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। অভিযোগ উঠেছে যে মন্ত্রীর গাড়িতে চাপা পড়ে আহত হয়েছেন এক প্রথম বর্ষের ছাত্র এরপরই রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বিরুদ্ধে ছাত্রদের ক্ষোভের আগুনে আরও ঘি পড়েছে । এই ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হওয়া পরীক্ষা বর্জন করে ছাত্ররা দাবি জানিয়েছে, তাদের সহপাঠী, ইন্দ্রানুজ রায়, যিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তার উপর আক্রমণের প্রতিবাদে একটানা ধর্মঘট চলবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত তিনটি ছাত্র সংগঠন রাজ্যব্যাপী ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয়। তারা দাবি করেছে শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির চাকায় আহত হওয়া ছাত্রের প্রতি সঙ্গত সমবেদনা দেখানো উচিৎ, এবং এমন ঘটনাকে নস্যাৎ করা উচিত। ধর্মঘটের ফলে সোমবার ক্যাম্পাসের শ্রেণীকক্ষে এবং পরীক্ষার হলগুলিতে একেবারে শুনসান নীরবতা দেখা যায়।
কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের এক ছাত্র জানায়, “আমি জানি, আমাদের সহপাঠীর প্রতি ন্যায়বিচার হওয়া জরুরি। কিন্তু পরীক্ষা বর্জনের ফলে যদি শিক্ষাকর্মকর্তা দীর্ঘদিন শাসন করেন, তবে আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সমস্যা হতে পারে। পরীক্ষা পিছিয়ে গেলে পরবর্তী সেমিস্টারের ক্লাস শুরুর সময়ও সমস্যা হবে।”
অন্য একজন ছাত্র বলেন, “আমাদের পরিবারও চিন্তিত। আন্দোলনে যোগ দিতে চাই, কিন্তু অতিরিক্ত বিশৃঙ্খলা হলে আমার পড়াশোনার ক্ষতি হতে পারে।”
তবে আন্দোলনকারীরা একমত ছিলেন যে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করা অত্যন্ত জরুরি। একটি বিশাল পোস্টারে লেখা ছিল: “লেখাপড়া করলেই গাড়ির তলায় পড়বে!”—এটি ছিল হাস্যকর অথচ এটি তীব্র সমালোচনার বিষয়।
যদিও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের মধ্যে রাজনৈতিক বিভেদ রয়েছে, কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীরা ইন্দ্রানুজের উপর আক্রমণের পর ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে অংশ নেন। সিএমপির ছাত্র সংগঠন এসএফআই ক্যাম্পাসে পোস্টার ঝুলিয়ে, মন্ত্রী বিরুদ্ধে সরব হয়েছে।
এসএফআই’র রাজ্য কমিটির সদস্য শুভদ্বীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “আমরা শুধু ছাত্রদের অধিকার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র নির্বাচন পুনরায় শুরু করার দাবিতে আন্দোলন করছি, কিন্তু যেই ছাত্রটির উপর হামলা হয়েছে, তার প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।”
এদিকে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ঘটনাটি দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন এবং আহত ছাত্রের দ্রুত সুস্থতার কামনা করেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, “এই ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক, তবে মন্ত্রীত্বের প্রতি আমার শত্রুতা নেই, ছাত্রদের সাথে আলোচনা করে সমাধান চাই।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ভাস্কর গুপ্ত রোগের কারণে ক্যাম্পাসে আসতে পারেননি, তবে শিক্ষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একজন শিক্ষক জানান, “আমরা ছাত্রদের ক্ষোভের প্রতি সহানুভূতিশীল, কিন্তু আমরা চাই না যে এই আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী হোক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য ছাত্রদের শিক্ষার দিকে মনোনিবেশ করা।”
যদিও শিক্ষার্থীরা একে অপরকে সমর্থন জানিয়ে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন, তবে তাদের মধ্যে কিছু উদ্বেগও রয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমের স্থবিরতা তৈরি করতে পারে। ক্ষোভের মধ্যে এমনও শিক্ষার্থী আছেন, যারা আন্দোলন চালিয়ে যেতে চান, কিন্তু একই সঙ্গে শিক্ষার ক্ষতির আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন।