Rudranil Ghosh: ‘পশ্চিমবঙ্গে মাতাল সরকার চলছে, মদ এখানে একমাত্র শিল্প’

আদিত্য ঘোষ, কলকাতা: লোকসভা ভোটের মুখে kolkata 24×7 এর মুখোমুখি অভিনেতা এবং বিজেপি নেতা রুদ্রনীল ঘোষ (Rudranil Ghosh)। কিছুদিন আগে তিনি খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন,…

Rudranil Ghosh

আদিত্য ঘোষ, কলকাতা: লোকসভা ভোটের মুখে kolkata 24×7 এর মুখোমুখি অভিনেতা এবং বিজেপি নেতা রুদ্রনীল ঘোষ (Rudranil Ghosh)। কিছুদিন আগে তিনি খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন, দলের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ ছাড়ার কারণে তাকে নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল। তিনি কি অভিমান করেছিলেন? তিনি কি দল ছাড়তে পারেন? প্রচুর প্রশ্ন ওঠে। একসময় এমনও রটনা রটে যে তিনি নাকি রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নিয়ে নিতে পারেন।

তবে kolkata 24×7-এর মুখোমুখি হয়ে তিনি জানালেন, “আমি তো আজকেও কয়েকটা গ্রুপ ছাড়লাম।  যে কোনও কেউ আমাকে যে কোনও  গ্রুপে যুক্ত করে নিচ্ছে। বুঝতে হবে কোনটা কাজের গ্রুপ আর কোনটা নয়। তাই বেশ কয়েকটা গ্রুপ থেকে বিদায় জানিয়েছি।” জিজ্ঞাসা করলাম, ” সামনেই লোকসভা ভোট, এই ভোট নিয়ে আপনি কী ভাবছেন?” তিনি একটু সময় নিলেন। ভাবলেন। তারপরে বললেন, ” প্রতিটা ভোটই সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটা ভোটেই মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে। এটা নিয়ে আলাদা করে বলবার কিছু নেই।”

তিনি আবার থামলেন। তারপরে ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, ” আসলে পশ্চিমঙ্গের দিকে তাকালে নিজের কষ্ট হয়। এককালে এই রাজ্যকে মানুষ চিনত পড়াশুনার জন্য। শিল্পের জন্য।সাহিত্যের জন্য। সংস্কৃতির জন্য। আর এখন চেনে চোরদের জন্য। নিজেরই লজ্জা হয়।” প্রশ্ন করলাম, “এই বছরের ভোটে সন্দেশখালির প্রভাব পড়বে?” তিনি জানালেন, ” সন্দেশখালি তো একটা নাম। বাংলার প্রতিটা গলি সন্দেশখালি। বাংলার ঘরে ঘরে খুঁজলে এইরকম নির্যাতিত মহিলাদের খুঁজে পাওয়া যাবে।” তিনি দীর্ঘশ্বাস নিলেন। একটু সময় নিয়ে আবার বললেন, ” এই রাজ্যে সরকারী মদতে চুরি হয়। আর চোরদের পাহাড়া দেয় পুলিশ।সরকারী প্রকল্প হচ্ছে চুরির মাধ্যম। যে মাধ্যমে সরকারী অফিসার থেকে তৃণমূলের ছোট, বড়, মেজো নেতারা জড়িত।” তিনি থামলেন। জিজ্ঞাসা করলাম, ” বলতে চাইছেন তৃণমূলে কোনও সৎ নেতা নেই? কেউই প্রতিবাদ করছে না? মিডিয়া খবর দেখাচ্ছে না?”

 

তিনি একটু হাসতে হাসতে বললেন, ” তৃণমূলে যারা প্রতিবাদ করছে তারা দলে কোণঠাসা। ওই জন্যই তো জনগর্জন সভায় লোক হয়নি। দলের বিভিন্ন স্তরের নেতারা আসেনি। আর মিডিয়ার কথা?” তিনি একটি হাসলেন। তারপরে বললেন, ” যে মিডিয়ার লোক এই খবর করবে তাকে ধরে জেলে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে প্রতিদিন সাংবাদিক নির্যাতন চলছে। নিজের লজ্জা হয় এইসব ঘটনা দেখলে।” প্রশ্ন করার আগেই আমাকে থামিয়ে দিয়ে রুদ্রনীল বললেন, “বাংলায় দুর্নীতির উৎসব চলছে, নিয়ম করে সেই উৎসব পালিত হচ্ছে।” তাঁকে প্রশ্ন করার আগে তিনি নিজেই আমাকে প্রশ্ন করে বললেন, ” বলতে পারো কোন রাজ্যের প্রধান শিল্প মদ? আসলে পশ্চিমবঙ্গে মাতাল শিল্প চলছে। মদই এখানের একমাত্র শিল্প।”

জিজ্ঞাসা করলাম, ” স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প আর আয়ুষ্মান ভারত নিয়ে তো বিরাট রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে। এই নিয়ে কী বলবেন?” তিনি জানালেন, ” স্বাস্থ্য সাথী কি কারুর পারিবারিক সম্পত্তি? কে পাবে, কে পাবে না! কার গায়ের রঙ কেমন। কে কোনও ধর্মের তার ভিত্তিতে কি কেউ স্বাস্থ্য সাথী পাবে? কিন্তু এই সরকার এর ভিত্তিতেই এইসব করছে। অন্যদিকে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প কিন্তু সবার জন্যে। কোনও বিভেদ নেই।” তিনি আবার একটু থামলেন। কিছু ভাবলেন। তারপরে বললেন, ” এই রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী চোরদের বীর সম্মান দেয়। ভাবা যায়? এই রাজ্যে শিক্ষা নেই, চাকরি নেই। যুবকেরা বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিছু করতে গেলেই সেখানে কাটমানি। এককালে সিপিএম সিন্ডিকেট শুরু করেছিল, তৃণমূল এখন সেটাই উৎসবে পরিণত করে ফেলেছে। তৃণমূল আসলে সরকার না। তারা চুরি করার একটি সিস্টেম।”

জিজ্ঞাসা করলাম, ” বিজেপি জমানায় তো প্রতিদিন নিত্যনতুন জিনিসের দাম বাড়ছে। সমীক্ষা অনুযায়ী বেকারের সংখ্যা তো বাড়ছে?” তিনি বললেন,” নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম তো বাড়ছেই। এটাই সহজ হিসেব। আর আজকাল ভারতের যুব সমাজ ব্যবসা করার দিকে ঝুঁকছে। দীর্ঘ পড়াশুনা তাদের এখন অপছন্দ।” জিজ্ঞাসা করলাম, ” বাংলা ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই তো অন্য দলের প্রার্থী। আপনার সঙ্গে তাঁদের কাজ করতে অসুবিধা হয় না।” তিনি বললেন, “একদম না। কাজের ক্ষেত্রটা আলাদা। আর রাজনীতিটাও আলাদা।” সবশেষে জিজ্ঞাসা করলাম, “বিজেপি রাজ্যে কেমন ফলাফল করবে?” তিনি বেশ বলিষ্ঠ কণ্ঠে বললেন, “সময়ই বলবে।”