কলকাতা: দূরপাল্লা হোক বা লোকাল (Indian Railways)। ট্রেনের মধ্যে দেখা যায় নানান হকার। নানাবিধ পণ্যের পসরা সাজিয়ে তাঁরা সামিল হন যাত্রীদের সামনে। ঝালমুড়ি, ঘটিগরম, ছোলা, ঘুগনি কিংবা নানান স্বাদের মিষ্টি। অনেক প্রকারের খাবার পাওয়া যায় রেলের কামরায়। তবে সেই চিরাচরিত প্রথা বন্ধ হতে চলেছে খুব শীঘ্রই। কারণ রেল নিয়ে আসতে চলেছে নয়া নিয়ম।
দেশের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি যাত্রী যাতায়াত করে শিয়ালদহ স্টেশন দিয়ে। পূর্ব রেলের এই স্টেশনে দৈনিক গড়ে প্রায় ২০ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করে থাকেন। সেই সঙ্গে ওই লাইনের স্টেশনে যাত্রী ওঠানামার সংখ্যা আরও বেশি। তাই হকারদের বাজার খুব একটা মন্দ না। রেলের কামরাও একটা বড় বাজার। যার অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। খাবার ছাড়াও কসমেটিকস থেকে শুরু করে রেলের হকার কাছে পাওয়া যায় আরও নানাবিধ অনেক প্রয়োজনীয় সামগ্রী। সেই সবকিছুর ভরসা হকার। আর সেই হকারদের উপরেই জারি হচ্ছে নতুন কড়া নিয়ম।
জানা যাচ্ছে, ট্রেনে হকারির স্বত্বও বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিতে চলেছে কেন্দ্র। যার মাধ্যমে এককালীন একটা বড় অঙ্কের টাকা রেলের হাতে আসবে। সেই সঙ্গে হকারদের সমস্যার দায় থাকবে না রেলের উপরে। হকারদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হবে এক বেসরকারি সংস্থাকে। যারা সমগ্র বিষয়টি পরিচালনা করবে। ওই সংস্থাকে মাসিক টাকা দিয়ে রেলের কামরায় ব্যবসা করতে হবে।
সূত্রের খবর, রেলের কামরায় ব্যবসা করার অনুমতি বাবদ প্রি হকারকে প্রত্যেক মাসে এক হাজার টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন পুনর্নবীকরণ করাতে হবে। এমনকী পাঁচদিন দেরি হলে গুনতে হবে ৫০০ টাকা জরিমানাও। এখানেই শেষ নয়, এখন থেকে হকারদেও কাটতে হবে ট্রেনের টিকিট। যা খুশি সামগ্রী বিক্রি করতে পারবেন না হকাররা। শুধুমাত্র প্যাকেটজাত দ্রব্যই বিক্রি করা যাবে। যাতে সর্বোচ্চ মূল্য এবং মেয়াদ ফুরানোর তারিখ লেখা থাকবে। সুতরাং ঠোঙায় ঝালমুড়ি থেকে পাঁপড়, ঘুগনি বা মিষ্টির বিক্রি বন্ধ হতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
নিঃসন্দেহে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বড় অঙ্কের টাকা ঢুকবে রেলের ভাঁড়ারে। তবে হকারদের উপরে চাপ বাড়তে পারে। এমন অনেক হকার রয়েছেন যাদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা নেই। সূত্রের খবর, পূর্ব রেলে হকারির স্বত্ব নিজেদের হাতে নিতে টেন্ডার বাবদ কয়েক কোটি টাকা ইতিমধ্যেই রেলকে তুলে দিয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থা। যদিও এই বিষয়ে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী বলেছেন, ‘পুরো বিষয়টি পরিকল্পনা স্তরেই রয়েছে। পরবর্তী কোনও সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না খোঁজ নিয়ে দেখব।’
এই খবর চাউর হতেই রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, ‘আমরাও চাই, হকারদের পরিচয়পত্র দিয়ে তাঁদের বৈধভাবে ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়া হোক। কিন্তু তা বলে বেসরকারি সংস্থার হাতে সব তুলে দিতে হবে? সরকারি জায়গায় ব্যবসা করতে কেন বেসরকারি সংস্থাকে টাকা দিতে হবে? কেন তাঁরা নিজেদের ইচ্ছামতো ব্যবসা করতে পারবেন না? আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’