নতুন করে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হওয়ায় ফের উদ্বেগ বাড়ছে রাজ্যে। মৌসুমি অক্ষরেখার সক্রিয় অবস্থান এবং বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণাবর্ত একত্রে প্রভাব বিস্তার করায় আবহাওয়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলেছে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই ঘূর্ণাবর্ত আগামী সোমবারের মধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। আর এর ফলে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি ওড়িশা সংলগ্ন জেলাগুলিতেও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠছে।
ঘূর্ণাবর্ত ও মৌসুমী অক্ষরেখার যৌথ প্রভাব
বর্তমানে মৌসুমী অক্ষরেখা ফের বাংলার উপর দিয়ে বিস্তৃত হয়েছে। এর ফলে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প ঢুকছে রাজ্যের বায়ুমণ্ডলে। ঘূর্ণাবর্তের সঙ্গে এই মৌসুমি অক্ষরেখার সক্রিয়তা মিলিত হয়ে প্রবল বর্ষণের পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় আগামী কয়েকদিন ধরে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
উত্তরবঙ্গেও এর প্রভাব দেখা দিতে পারে। দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা থাকায় স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
উপকূলবর্তী এলাকায় সতর্কবার্তা
আবহাওয়া দফতরের পক্ষ থেকে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকায় বিশেষ সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। সমুদ্র ক্রমশ উত্তাল হয়ে উঠছে। তাই শুক্রবার ও শনিবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। সমুদ্রে যাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে বলে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে হাওয়া অফিস। পাশাপাশি উপকূলবর্তী অঞ্চলের মানুষদেরও অযথা সমুদ্রের ধারে ঘোরাফেরা না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চাষাবাদ ও কৃষকদের দুশ্চিন্তা
এমন পরিস্থিতিতে কৃষকরাও নতুন করে উদ্বেগে পড়েছেন। কয়েকদিনের প্রবল বৃষ্টিপাত কৃষিজমিতে জল জমিয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে আমন ধান, পাট ও শাকসবজির চাষে এর প্রভাব পড়তে পারে। তবে আবহবিদদের একাংশের মতে, যেহেতু দীর্ঘদিন ধরেই দক্ষিণবঙ্গে কার্যত শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করছিল, তাই এই বর্ষণ কৃষিজমিতে কিছুটা উপকারও এনে দিতে পারে। কিন্তু কোথাও যদি অতিবৃষ্টি হয়, তবে ক্ষতির আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
শহুরে জীবনে প্রভাব
কলকাতা-সহ শহরাঞ্চলেও এই আবহাওয়ার প্রভাব পড়তে চলেছে। ইতিমধ্যেই হাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত একাধিক দফায় প্রবল বর্ষণ হতে পারে। এর ফলে রাস্তায় জল জমে যান চলাচলে সমস্যার সৃষ্টি হবে। অফিসযাত্রী থেকে শুরু করে স্কুল পড়ুয়া—সবাইকে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
প্রশাসনের প্রস্তুতি
আবহাওয়া দফতরের সতর্কবার্তার পরই রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর নড়েচড়ে বসেছে। উপকূলবর্তী জেলা প্রশাসনকে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। নীচু এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রের দিকে না যেতে সচেতন করা হচ্ছে গ্রামে গ্রামে মাইকিং করে।