‘নির্বাচনী কমিশন নিরপেক্ষ নয়’, ফের ক্ষোভ উগরে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী

কলকাতার হৃদয়ে মেয়ো রোড। বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) সেই ঐতিহাসিক মঞ্চেই ফের একবার জমে উঠল রাজনীতি। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত সভা থেকে দলনেত্রী…

“Bengalis’ Talent Is Unmatched: Mamata Banerjee Strikes Emotional Chord at TMCP Rally”

কলকাতার হৃদয়ে মেয়ো রোড। বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) সেই ঐতিহাসিক মঞ্চেই ফের একবার জমে উঠল রাজনীতি। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত সভা থেকে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শাসক-প্রতিপক্ষ, কেন্দ্র ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানালেন। তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে গেল—২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখেই এবার থেকে আগাম প্রস্তুতি শুরু করে দিল তৃণমূল।

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

   

সভামঞ্চে উঠে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি নিশানা করলেন জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে। তাঁর অভিযোগ, কমিশন এখন নিরপেক্ষ নয়, বরং শাসক দলের হয়ে কাজ করছে। তিনি বলেন, “বড়রা কোনও দলের হয়ে ললিপপ খেলে মানায় না। কমিশনের কাজ হওয়া উচিত ভোট প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা, কিন্তু তার পরিবর্তে তারা একতরফাভাবে বিজেপির খাতা ভরাচ্ছে।” রাজনৈতিক মহলের মতে, মমতার এই মন্তব্য শুধুমাত্র রাজ্য রাজনীতিতে নয়, জাতীয় স্তরেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে চলেছে।

অমিত শাহকে সরাসরি আক্রমণ

এরপর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে একহাত নিলেন মমতা। তাঁর অভিযোগ, “পরিবারতন্ত্রের বুলি যারা আওড়ায়, তারা নিজেরাই পরিবারতন্ত্রে ডুবে আছে।” অমিত শাহের পুত্র জয় শাহের নাম টেনে মমতা বলেন, “ক্রিকেট থেকে ব্যবসা—সব জায়গাতেই তাঁদের পরিবারের দাপট। অথচ বাংলার তৃণমূলকে আঙুল তোলেন!” মমতার এই বক্তব্যে উপস্থিত ছাত্র-যুবদের ভিড় হাততালি দিয়ে সমর্থন জানায়।

তৃণমূলের লড়াইয়ের ডাক

তৃণমূল সুপ্রিমো এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, আগামিদিনের রাজনৈতিক যাত্রাপথে কোনওভাবেই পিছিয়ে আসবে না তাঁর দল। তাঁর হুঙ্কার, “বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চি জায়গা ছাড়বে না তৃণমূল কংগ্রেস। মানুষ আমাদের শক্তি, আর সেই শক্তির ভরসাতেই আমরা লড়ব।” রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই ভাষণ কার্যত ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সুর বেঁধে দিল।

Advertisements

ছাত্র-যুবদের ভূমিকা

মমতা এদিন বিশেষভাবে ছাত্র ও যুব সমাজকে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আজকের ছাত্ররাই আগামী দিনের নেতৃত্ব দেবে। তোমরাই বাংলার ভবিষ্যৎ। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাই তোমাদের প্রথম দায়িত্ব।” ছাত্র-যুবদের এভাবে সামনে আনার মাধ্যমে তিনি স্পষ্ট বার্তা দিলেন যে, তৃণমূলের আগামী লড়াইয়ের মেরুদণ্ড হবে তরুণ প্রজন্ম।

২০২৬-এর প্রস্তুতির ইঙ্গিত

মেয়ো রোডের সভা সাধারণত প্রতিবারই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জন্মদিনকে কেন্দ্র করে হয়। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এবারের অনুষ্ঠান অন্য মাত্রা পেল। মমতার বক্তৃতা থেকে শুরু করে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি—সব মিলিয়ে স্পষ্ট, তৃণমূল এখন থেকে ২০২৬ সালের ভোটের প্রস্তুতিতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে।

রাজনৈতিক মহলের প্রতিক্রিয়া

অন্যদিকে, বিরোধীরা অবশ্য মমতার বক্তব্যকে তীব্র সমালোচনা করেছে। বিজেপি নেতাদের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথার মধ্যেই তাঁর অস্বস্তি পরিষ্কার। নির্বাচন কমিশনকে আগেভাগেই আক্রমণ করে তিনি আসন্ন ভোটে হারের আশঙ্কা ঢাকতে চাইছেন। কংগ্রেস ও সিপিএমও বলছে, তৃণমূল-বিজেপি আসলে একে অপরের পরিপূরক, সাধারণ মানুষের সমস্যা কোনও দলই সমাধান করতে পারছে না।