বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা। পুজোর মাস খানেক আগেই বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে আয়োজিত একটি বৈঠকে রাজ্যের সমস্ত পুজো কমিটির সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনা করেন তিনি। সেখানেই রাজ্য সরকারের তরফে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী—এবছর দুর্গাপুজোর অনুদান আরও বাড়ানো হচ্ছে। এবার প্রতিটি পুজো কমিটি পাবে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। গত বছরের তুলনায় এই অনুদান ২৫ হাজার টাকা বেশি। ফলে উৎসবের আবহে এই সিদ্ধান্তে স্বভাবতই খুশির হাওয়া ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্যের পুজো উদ্যোক্তাদের মধ্যে।
পুজোর খরচে বড় স্বস্তি
এবার শুধুমাত্র আর্থিক অনুদানই নয়, সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে যা পুজো কমিটিগুলিকে আর্থিক দিক থেকে অনেকটাই স্বস্তি দেবে। যেমন—
বিদ্যুৎ খরচ ৮০ শতাংশ ছাড়: রাজ্য সরকার পুজো প্যান্ডেলের বিদ্যুৎ সংযোগ ও ব্যবহারে বিলের ৮০ শতাংশ খরচ মকুব করবে। ফলে প্যান্ডেল আলোকসজ্জা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় খরচ অনেকটাই কমবে।
ফায়ার লাইসেন্স এবং অন্যান্য সরকারি ফি মকুব: রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, এবছর পুজো কমিটিগুলিকে ফায়ার লাইসেন্সের জন্য আলাদা করে ফি দিতে হবে না। এছাড়াও অন্যান্য অনুমতিমূলক খরচগুলিও রাজ্য সরকার মাফ করে দিয়েছে।
উৎসবকে ঘিরে রাজ্যের দায়বদ্ধতা
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, “এটা শুধু একটা ধর্মীয় উৎসব নয়, দুর্গাপুজো এখন বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে। ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়া এই উৎসব আজ গোটা বিশ্বের কাছে বাংলার গর্ব।” মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে বাংলার লক্ষ লক্ষ মানুষ জড়িয়ে থাকেন—প্যান্ডেল নির্মাণ, শিল্প, বাদ্যযন্ত্র, আলোকসজ্জা, পোশাক ব্যবসা, খাবারের দোকান—সব মিলিয়ে এটি একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক আন্দোলন। তাই পুজো উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়ানো রাজ্যের দায়িত্ব।”
বিসর্জন ও কার্নিভাল সংক্রান্ত ঘোষণা
পুজো পরবর্তী পর্ব নিয়েও এদিন মুখ্যমন্ত্রী বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেন। তিনি জানান—
২, ৩ ও ৪ অক্টোবর: রাজ্যে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের জন্য বরাদ্দ থাকবে।
৫ অক্টোবর: সেই দিন অনুষ্ঠিত হবে রাজ্য সরকারের আয়োজিত বিসর্জন কার্নিভাল। প্রতি বছরের মতো এবারও এই কার্নিভাল রঙিন সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় ভরপুর হবে, যেখানে অংশ নেবে নির্বাচিত কিছু পুজো কমিটি।
উদ্যোক্তাদের মুখে হাসি
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় স্বভাবতই খুশি রাজ্যের হাজার হাজার পুজো কমিটি। কলকাতা থেকে মেদিনীপুর, মালদা থেকে মালবাজার—সর্বত্রই এই ঘোষণার পর নতুন করে জোর কদমে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। অনেক উদ্যোক্তা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত অনুদান ও বিদ্যুৎ ছাড় পেয়ে প্যান্ডেল ও থিমের মান আরও ভালো করার সুযোগ মিলবে।
আগাম শুভেচ্ছা
সকল পুজো কমিটিকে আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে মমতা বলেন, “সকলের সহযোগিতায় দুর্গাপুজো হোক আরও সুরক্ষিত, সুন্দর এবং পরিবেশবান্ধব। শুভ দুর্গাপুজো!”
রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে এবারের শারদোৎসবকে করে তুলছে আরও আনন্দময়, আরও স্মরণীয়।