ভোটের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা বিহারে এক নজিরবিহীন ঘটনা ঘিরে তৈরি হয়েছে তীব্র বিতর্ক। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল একটি স্থায়ী বাসিন্দার শংসাপত্র (রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট), যেখানে প্রাপক একজন মানুষ নন, বরং একটি কুকুর (Dog Gets Residential Certificate)! ‘ডগ বাবু’ নামক সেই কুকুরের বাবার নাম দেওয়া হয়েছে ‘কুত্তা বাবু’ এবং মায়ের নাম ‘কুতিয়া দেবী’। শংসাপত্রে স্পষ্টভাবে কুকুরটির ছবি দেওয়া রয়েছে। এই ঘটনা সামনে আসতেই দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বিস্ময়, তৈরি হয় রাজনৈতিক বিতর্ক।
এই প্রসঙ্গ টেনে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এবং সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার দিল্লি যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অভিষেক বলেন, “সাধারণ মানুষের নাম বাদ দিয়ে কুকুরের নামে রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট ইস্যু করা হচ্ছে। এই সার্টিফিকেট নির্বাচন কমিশন গ্রহণ করছে এসআইআর (স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন) প্রক্রিয়ায়।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “এইভাবে সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে ভুয়ো ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করা হচ্ছে কুকুরের নামে, যাতে ভোট লুঠ করে বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া যায়। এই ঘটনা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।” নির্বাচন কমিশন যে “বিজেপির তল্পিবাহক”-এর মতো কাজ করছে, এমন অভিযোগও তোলেন তিনি।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিহার রাজ্যেও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। পূর্ণিয়ার সাংসদ পাপ্পু যাদব বলেন, “কুকুর যখন স্থায়ী বাসিন্দার শংসাপত্র পায়, তখন মানুষকে তা দেওয়া হয় না। এটাই আমার মহান ভারত!” তাঁর এই বক্তব্যের মধ্যেই ফুটে উঠছে সাধারণ মানুষের মধ্যে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ এবং প্রশাসনিক অব্যবস্থার ইঙ্গিত।
এদিকে, বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন জেলার জেলাশাসক। তিনি জানিয়েছেন, যে আধিকারিক এই শংসাপত্র ইস্যু করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই রকম অব্যবস্থা ভোট-প্রক্রিয়াকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাচ্ছে বলেই মত বহু বিশ্লেষকের।
প্রসঙ্গত, বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধন এবং নাগরিকত্ব সংক্রান্ত কাগজপত্র নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। হাজার হাজার সাধারণ মানুষের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়ার অভিযোগ উঠছে। এরই মধ্যে এমন ঘটনা সামনে আসায় গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এই ঘটনায় আরও একবার উঠে এল প্রশাসনিক গাফিলতি ও রাজনৈতিক সুবিধার জন্য ভোটার তালিকায় কারচুপির অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা এবং ভোটাধিকার রক্ষা করাই আপাতত বড় চ্যালেঞ্জ।