শমীক ভট্টাচার্য রাজ্য বিজেপির সভাপতি হওয়ার পর থেকেই ফের গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন দলের একসময়ের দাপুটে নেতা দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। এবার সেই জল্পনায় আরও জ্বালানি যোগাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দুর্গাপুর সফর। আগামী ১৮ জুলাই মোদির দুর্গাপুর সভায় আমন্ত্রণ পেয়েছেন দিলীপ। কিন্তু যাবেন কি তিনি? এই প্রশ্ন ঘিরেই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে চর্চা।
মঙ্গলবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দিলীপ ঘোষ জানান, রাজ্য বিজেপির নেতৃত্বের তরফে তাঁকে অফিসিয়ালি কিছু জানানো হয়নি। তাঁর কথায়, “আমাকে দলের পক্ষ থেকে কেউ কিছু বলেনি। অফিসিয়ালি কোনও আমন্ত্রণ নেই।” কিন্তু এই অবস্থান থেকেই ঘুরে দাঁড়িয়ে তিনি জানান, “আমি কর্মী। কর্মীদের সঙ্গে থাকব। সভায় যাব, কর্মীদের মাঝেই থাকব।”
এখানেই শেষ নয়। বিজেপির অন্দরমহলে দিলীপ ঘোষের অনুপস্থিতি নিয়ে নানা জল্পনা ছিল দীর্ঘদিন ধরেই। বিশেষ করে একের পর এক বড় সভা বা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাঁকে দেখা না যাওয়ায় মনে করা হচ্ছিল, হয়তো দিলীপ ঘোষ দলের মূল স্রোত থেকে সরে এসেছেন। এমনকী, কিছুদিন আগে তাঁর তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদানের জল্পনাও উড়ে এসেছিল রাজনৈতিক মহলে। যদিও তা পরবর্তীতে খারিজ হয়ে যায়।
তবে শমীক ভট্টাচার্য বিজেপির রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর দৃশ্যপট বদলাতে শুরু করে। শমীক নিজেই কয়েকদিন আগে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, দুর্গাপুরে মোদির সভায় দিলীপ ঘোষ উপস্থিত থাকবেন। এরপরেই জানা যায়, দিলীপের কাছে সভার আমন্ত্রণপত্র পৌঁছেছে। এমনকি ১৭ জুলাই রাতেই তিনি দুর্গাপুরে পৌঁছবেন, এমন খবরও ঘুরতে থাকে রাজনৈতিক মহলে।
তবে মঙ্গলবার সকালে দিলীপ ঘোষ যেভাবে ‘আমন্ত্রণ না পাওয়া’র ইঙ্গিত দিয়েছেন, তা থেকেই অনেকেই মনে করছেন রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে এখনও তাঁর দূরত্ব পুরোপুরি মেটেনি। অথচ, কিছুদিন আগেই দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনে রাজ্য সরকারের সৌজন্য আমন্ত্রণে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন তিনি। এই সৌজন্য রক্ষার কারণে রাজ্য বিজেপির একাংশের রোষেও পড়েছিলেন তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দিলীপ ঘোষ এখনও রাজ্য বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ মুখ। তাঁর জনভিত্তি এবং সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা দলের পক্ষে সম্পদ। শমীক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে নতুন করে সংগঠন সাজাতে গেলে দিলীপ ঘোষের সঙ্গে সমন্বয় অপরিহার্য। তাই আগামী ১৮ জুলাইয়ের মোদির সভায় দিলীপের উপস্থিতি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। তবে তিনি ‘কর্মী’ হিসেবে সভায় থাকবেন নাকি বিজেপি নেতৃস্থানীয় কেউ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করবেন — সেটাই এখন দেখার বিষয়।
মোদির সভা ঘিরে একদিকে যেমন রাজ্য রাজনীতির উত্তাপ বাড়ছে, তেমনই দিলীপ ঘোষের বক্তব্য ফের আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে। শাসক বনাম বিরোধী লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজ্য বিজেপির অভ্যন্তরীণ সমীকরণও যে নতুন মোড় নিতে চলেছে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে দিন দিন।