তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনে ‘পদ বিক্রি’ নিয়ে অস্বস্তি, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে প্রতিবাদ

তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে আবার নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে, যখন দলের এক শিক্ষক নেতা গুরুতর অভিযোগ করেছেন যে, শিক্ষকদের সংগঠনের পদ বিক্রি করা হয়েছে অর্থের বিনিময়ে।…

Complaints and Counter-Complaints Over Post Allocations in TMC Teachers' Organization Stir Controversy Within the Party

তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে আবার নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে, যখন দলের এক শিক্ষক নেতা গুরুতর অভিযোগ করেছেন যে, শিক্ষকদের সংগঠনের পদ বিক্রি করা হয়েছে অর্থের বিনিময়ে। কাজী মনোয়ার ফারুক, বেলডাঙ্গা রামেশ্বর পুর হাই স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক এবং পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক তৃণমূল শিক্ষক সমিতির সদস্য, এই অভিযোগে সরব হয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠন ‘পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক তৃণমূল শিক্ষক সমিতি’-র রাজ্য স্তরের অনেক পদ অযোগ্য ও অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে।

মনোয়ার ফারুক তাঁর প্রতিবাদপত্রে অভিযোগ করেছেন যে, অনেক যোগ্য শিক্ষককে সংগঠন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে এবং তাঁদের জায়গায় এসেছে সেইসব মানুষ, যারা অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি বলেছেন, “যারা দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনে কাজ করেছেন, তাদের জায়গা হয়েছে না। আর যারা বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাদের রাজ্য স্তরের পদ দেওয়া হয়েছে।” তাঁর দাবি, সংগঠনের রাজ্য সভাপতি বিজন সরকারের কাছে অনেক পদ এসেছে ‘তোষামোদ’ এবং ‘অর্থের বিনিময়ে’।

   

মনোয়ার আরও বলেন, “যাদের রাজনীতির অঙ্গ হিসেবে অনেক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড রয়েছে, তাদেরকে পদ দেওয়া হয়েছে। আর যারা দিনের পর দিন সংগঠনে কাজ করেছেন, তাদের বাইরে রাখা হয়েছে। এমনকি যাদের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাদেরকেও বড় পদ দেওয়া হয়েছে।”

এতদিন ধরে যারা শিক্ষক সংগঠনের জন্য নিরলস পরিশ্রম করেছেন, তাঁদের সঙ্গে অবিচার হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। মনোয়ার বলেন, “আমরা যারা সংগঠনের জন্য কাজ করেছি, আমাদের জায়গা সরে গিয়ে বিতর্কিত ব্যক্তিরা পদ পেয়ে গেছেন। আমরা কোথায় যাব?” এরই মধ্যে তিনি এই বিষয়ে তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন, যাতে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে সংগঠনের সভাপতি বিজন সরকার জানিয়েছেন, “দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশে রাজ্য এবং জেলা কমিটি গঠিত হয়েছে। কোনও এক শিক্ষক নেতার অভিযোগ ভিত্তিহীন। হাজার হাজার শিক্ষক যখন কাজ করছে, তখন একমাত্র একজনের অভিযোগ গুরুত্ব পাওয়ার বিষয় নয়।” তাঁর মতে, তৃণমূলের শিক্ষকদের সংগঠন ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে প্রচারে আরও সক্রিয় হবে।

তবে শিক্ষক সংগঠনের একাংশের দাবি, এই অভিযোগের পিছনে মুর্শিদাবাদের এক প্রাক্তন শিক্ষক নেতা রয়েছেন, যিনি জেলা তৃণমূলের রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত। তাঁর মতে, এই অভিযোগপত্রের আড়ালে ওই নেতা কাজ করছেন, যার ফলে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বও বিষয়টি নিয়ে অবগত। ফলে, সংগঠনের সভাপতি বিজনের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনা নেই।

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এই অভিযোগগুলিকে ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁর মতে, সংগঠনে কোনো ধরনের দুর্নীতি হয়নি। এর ফলে তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনে একটা চাপা গুমোট পরিবেশ তৈরি হলেও, শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্যের পর কিছুটা হালকা হয়েছে পরিস্থিতি।

তবে প্রশ্ন থেকেই যায়— সংগঠন কি সত্যিই দলীয় রাজনৈতিক চাপের কারণে পদ বিতরণ করছে? রাজ্য এবং জেলা স্তরে শিক্ষকদের মধ্যে যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, তা কী দীর্ঘদিনের অনিশ্চিত পরিস্থিতি তৈরি করবে? প্রশ্ন উঠছে, আসলেই কি তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বের মধ্যে এই ধরনের অরাজনৈতিক পদক্ষেপের সুযোগ রয়েছে?