Cold Wave Alert: দক্ষিণবঙ্গে শীতের প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। গত কয়েক দিন ধরে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তরফ থেকে বিভিন্ন সতর্কবার্তা জারি করা হচ্ছিল যে শীতের তীব্রতা বাড়বে এবং সেইমতো দক্ষিণবঙ্গে তাপমাত্রার পতন ঘটতে শুরু করেছে। গতকাল থেকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে শীত অনুভূতির তীব্রতা বেড়ে গেছে, বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা এবং উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি অঞ্চলে ঠান্ডার প্রভাব আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আজ, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫ এর আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, দক্ষিণবঙ্গে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা কমে গিয়ে পুরুলিয়াতে পৌঁছেছে ৮.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। কলকাতার তাপমাত্রা ছিল ১৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। আর উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে তাপমাত্রা আরও কমে ৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়িয়ে। যদিও উত্তরবঙ্গের হিমালয়ান অঞ্চলগুলিতে তুষারপাতের কোনো সম্ভাবনা নেই, তবে সেখানে ব্যাপক ঠান্ডা অনুভূত হবে বলে জানা গেছে।
দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলের ৬টি জেলায় শৈত্যপ্রবাহের সতর্কতা
আজকের আবহাওয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চল বিশেষত পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, ঝাড়গ্রাম এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় শৈত্যপ্রবাহের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের জানানো মতে, আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এই অঞ্চলগুলোতে বিক্ষিপ্তভাবে শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে। তাপমাত্রা আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায়, বিশেষত ৯ থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত শীতের তীব্রতা আরও বাড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
এছাড়া, পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য অঞ্চলেও শীতের প্রকোপ বাড়বে, তবে পশ্চিমাঞ্চলের তুলনায় পূর্বাঞ্চলের তাপমাত্রা কিছুটা বেশি থাকতে পারে। কলকাতা শহরের পাশাপাশি, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, হুগলি, হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং উত্তর ২৪ পরগনার কিছু এলাকাতেও শীতের তীব্রতা বাড়বে, কিন্তু সেখানে শৈত্যপ্রবাহের কোনও আশঙ্কা নেই।
শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব ও সতর্কতা
শৈত্যপ্রবাহের কারণে এই অঞ্চলে তীব্র ঠান্ডা অনুভূত হবে। বিশেষ করে সকালে ও সন্ধ্যায় কুয়াশা এবং শীতল বাতাসের কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় প্রভাব পড়বে। শৈত্যপ্রবাহের ফলে বিভিন্ন জেলায় পাথরের মতো জমে যেতে পারে ঠান্ডা, ফলে স্থানীয় জনজীবন ব্যাহত হতে পারে।
অভিজ্ঞ আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, শৈত্যপ্রবাহের ফলে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে বৃদ্ধ মানুষ, শিশু এবং অন্যান্য শারীরিকভাবে দুর্বল ব্যক্তিরা অতিরিক্ত ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। ঠান্ডায় সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া এবং শ্বাসকষ্টজনিত রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে। তাই, বিশেষজ্ঞরা সবাইকে স্বাস্থ্যসম্মত শীতকালীন পোশাক পরিধান করতে এবং বাইরে বের হলে গরম কাপড় ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন।
আবহাওয়া দফতরের মতে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহের পরিস্থিতি আরও তীব্র হতে পারে, তাই স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগকে বিশেষ প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। জেলার হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রস্তুতি আরও জোরদার করার পাশাপাশি, ঠান্ডায় অসুস্থ হওয়া রোগীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
কীভাবে শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষা পাবেন
যেহেতু ঠান্ডার প্রকোপ বাড়ছে, তাই জনসাধারণকে বিশেষ কিছু সাবধানতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শীতের সময় উপযুক্ত পোশাক পরিধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত ঠান্ডায় রোগ থেকে রক্ষা পেতে বেশ কিছু সাধারণ স্বাস্থ্যসচেতনতাও মেনে চলা উচিত।
১. গরম কাপড় পরিধান করুন: শীতের সময় উষ্ণতা বজায় রাখার জন্য গরম কাপড় যেমন সোয়েটার, হুডি, শাল এবং উলের মোজা পরিধান করা জরুরি।
২. ঠান্ডা থেকে বাঁচুন: অনেক সময় ঠান্ডা বাতাস সরাসরি শরীরের উপর প্রভাব ফেলে, তাই গরম কাপড়ের মধ্যে নিজেকে রক্ষা করুন।
৩. গরম জল পান করুন: ঠান্ডার প্রভাব থেকে বাঁচতে প্রতিদিন গরম জল পান করতে হবে। এটি শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
৪. ফুটসো বা মশলার কুসুম: শীতে শরীরকে উষ্ণ রাখার জন্য ফুটসো এবং মশলার কুসুম পান করতে পারেন। এটি শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখার পাশাপাশি ঠান্ডা-জনিত অসুস্থতা থেকেও রক্ষা করতে পারে।
৫. সতর্ক থাকুন শীতের সময়: কুয়াশা বা ঘন শীতের মধ্যে চলাচলে সতর্ক থাকতে হবে, বিশেষ করে রাস্তার যান চলাচলে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। শীতের কারণে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে, তাই সাবধানে চলতে হবে।
যেহেতু দক্ষিণবঙ্গে শীতের তীব্রতা বাড়ছে এবং শৈত্যপ্রবাহের সতর্কতা জারি হয়েছে, তাই আবহাওয়া দফতরের নির্দেশিকা অনুযায়ী সবাইকে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সকলকে সুস্থ ও নিরাপদ থাকার জন্য শীতকালীন প্রস্তুতি নিতে হবে এবং নিজেকে এবং পরিবারকে ঠান্ডার প্রভাব থেকে রক্ষা করতে হবে।