কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত ওয়াকফ সংশোধনী বিল (Waqf Amendment Bill 2024) নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতির তীব্র উত্তাপ তৈরি হয়েছে, যা আসন্ন শীতকালীন বিধানসভার অধিবেশনকে কেন্দ্র করে আরও জোরালো হতে পারে। এই বিলটি কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে সংসদে পেশ করার পর, তা আইনে পরিণত করার আগে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এতেই বিক্ষুব্ধ হয়ে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন যে রাজ্য সরকার ওয়াকফ সংক্রান্ত একটি পৃথক বিল পেশ করবে এবং তা পাশ করানোর চেষ্টা করবে। মমতার এই সিদ্ধান্তের পরেই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে সেই বিলের বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়ে গেছে।
প্রমাণ ছাড়াই নিজ্জর হত্যা মামলায় মোদীকে দায়ী করল কানাডার সংবাদমাধ্যম
কেন্দ্রীয় সরকার গত বছর সংসদে একটি ওয়াকফ সংশোধনী বিল পেশ করেছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল ওয়াকফ বোর্ডের কার্যকারিতা ও পরিচালনা আরও কার্যকর ও স্বচ্ছ করা। তবে, এই বিলটি রাজ্যের অধিকার ও সংবিধানের বিধানগুলির সঙ্গে কিছুটা অমিল সৃষ্টি করেছে, যা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা দাবি করেছেন যে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত ওয়াকফ সংশোধনী বিলটি রাজ্য সরকারের ভূমিকা খর্ব করতে পারে এবং এতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণের অধিকারও সংকুচিত হতে পারে। রাজ্য সরকার মনে করছে, কেন্দ্রীয় বিলটি যদি আইনে পরিণত হয়, তবে পশ্চিমবঙ্গের ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতা অনেকাংশে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে, যা রাজ্য সরকারের শাসকীয় ক্ষমতাকে সীমিত করবে।
লাওসে রাজনাথের সঙ্গে বৈঠক চিনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর, সীমান্ত সুরক্ষা নিয়ে আলোচনা দুপক্ষের
এই পরিস্থিতিতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন যে রাজ্য সরকার একটি স্বতন্ত্র ওয়াকফ বিল পেশ করবে, যা রাজ্যের স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সমাজের আস্থা বজায় রাখবে। তিনি জানান, এই বিলটি রাজ্য বিধানসভায় ২৫ নভেম্বর শুরু হতে চলা শীতকালীন অধিবেশনে পেশ করা হবে এবং তৃণমূল সরকার এর মাধ্যমে রাজ্যের ওয়াকফ বিষয়ক সিদ্ধান্ত নিজস্বভাবে গ্রহণ করার অধিকার ফিরিয়ে আনবে।
মমতার এই পদক্ষেপের পর কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দফতর রাজ্য সরকারের প্রস্তাবিত বিলটির বিষয়ে জানার চেষ্টা শুরু করেছে। অমিত শাহ এবং তার দফতর চাইছেন, রাজ্য সরকারের বিলটি কোথায় কোথায় কেন্দ্রীয় আইনের সঙ্গে সংঘাত তৈরি করতে পারে এবং তার ফলে ভারতের সংবিধান ও আইনি কাঠামোর কী প্রভাব পড়বে, তা বিশ্লেষণ করা।
একটি সরকারি সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার এই বিষয়টি খুব সতর্কতার সঙ্গে দেখছে। রাজ্য সরকারের ওয়াকফ বিলের প্রতি আগ্রহের মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের সেই উদ্বেগ, যে রাজ্য যদি নিজের মতে বিল পাস করে, তবে তা সামগ্রিকভাবে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ এবং সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
আমেরিকায় ঘুষকাণ্ড! আদানীকে গ্রেফতারের দাবিতে সরব রাহুল গান্ধী
ওয়াকফ বোর্ড সংক্রান্ত এই বিতর্কের রাজনৈতিক গুরুত্ব পশ্চিমবঙ্গে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, যেখানে ধর্মীয় রাজনীতি এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই ধরনের বিলের বিরোধিতা করা, মূলত রাজ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থা জোগানোর প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা যাচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেস দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যে মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের সমর্থন লাভের চেষ্টা করে আসছে, এবং এই বিলের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান সেই লক্ষ্যে।