মধুসূদনের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি ভাঙতে দেওয়া হবে না, হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছে পুরসভা

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি ভাঙার পরিকল্পনা, আর তার পরিণতি নিয়ে কলকাতা শহরে চলছে জোর আলোচনা। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি মধুসূদন দত্ত, যিনি ‘মেঘনাদবধ…

Calcutta High Court: Kolkata Municipal Corporation Approaches Court to Save Madhusudan's House

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি ভাঙার পরিকল্পনা, আর তার পরিণতি নিয়ে কলকাতা শহরে চলছে জোর আলোচনা। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি মধুসূদন দত্ত, যিনি ‘মেঘনাদবধ কাব্য’, ‘ব্রজে গোপাল’, ‘কপালকুণ্ডলা’ ইত্যাদি অসংখ্য জনপ্রিয় রচনা দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে এক নতুন দিশা দেখিয়েছেন, সেই কবির বাড়ি এখন ধ্বংসের মুখে। কলকাতার ২০বি কার্ল মার্ক্স সরণির ওই দোতলা বাড়িটিকে বেসরকারি একটি সংস্থা ভেঙে বহুতল তৈরি করার পরিকল্পনা করেছে।

মধুসূদন দত্তের এই বাড়ি সম্পর্কে অনেকের মনে প্রশ্ন উঠছে— এই ঐতিহাসিক বাড়ির গুরুত্ব কী, আর কেন তা রক্ষিত থাকা উচিত? মধুসূদনের জীবনের শেষ সময় কেটেছিল এখানে, এবং এই বাড়ি তার সাহিত্যিক জীবনের একটি অমূল্য স্মৃতি হিসেবে রয়ে গেছে। তবে, কলকাতা পুরসভার (Calcutta High Court) কাছে এমন কোনও সঠিক নথি নেই যা প্রমাণ করতে পারে যে এই বাড়িটি মধুসূদনের ছিল। এতদিন পর, পুরসভা এই বাড়ির ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য কিছু ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করছে। তবে এটি খুবই চ্যালেঞ্জিং, কারণ যথাযথ নথিপত্রের অভাব রয়েছে।

   

১৮৭৩ সালের ২৯ জুন মাইকেল মধুসূদন দত্ত মৃত্যুবরণ করেন। তিন বছর পরে, ১৮৭৬ সালে কলকাতা পুরসভা (Calcutta High Court) প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই সময় গার্ডেনরিচের পুর এলাকা ছিল খুবই সীমিত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কলকাতার বিস্তৃতি ঘটেছে, এবং বর্তমানের ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে এটি একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে, মধুসূদনের বাড়িটি কোথায় ছিল, তা নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা রয়েছে। যদিও তিনি সেখানে তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলো কাটিয়েছিলেন, তবুও শহরের ইতিহাসে এই বাড়ির অবস্থান ও তার সম্পর্ক এখনও স্পষ্ট নয়।

Advertisements

কলকাতা পুরসভা এখন হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছে। পুরসভা ঐতিহ্যবাহী এই বাড়িটি রক্ষা করার জন্য হেরিটেজ সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করে, যাতে এটি ভাঙা না যায়। যদি আদালত এই বাড়ির ঐতিহ্যকে সংরক্ষণের পক্ষে রায় দেয়, তাহলে তবেই সম্ভব হবে তার বর্তমান আঙ্গিক ও ঐতিহ্য ধরে রাখা। একদিকে, নগরায়ণের জন্য উন্নয়নমূলক প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও, অন্যদিকে, সাহিত্যিক ঐতিহ্য ও ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এমনিতেই, শহরের মধ্যে এমন অনেক ঐতিহাসিক ভবন ও স্থান রয়েছে যেগুলি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আধুনিকতার চাপের কারণে। এই পরিস্থিতিতে মধুসূদন দত্তের বাড়ি যেন ইতিহাসের একটি অমূল্য রত্ন, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। তবে, কলকাতা শহরের উন্নয়ন এবং ঐতিহ্য রক্ষার মধ্যে সঠিক ভারসাম্য তৈরি করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা, সাহিত্য প্রেমীরা, এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণকারী সংগঠনগুলো ইতোমধ্যে এই বিষয়ে আন্দোলন শুরু করেছে। তারা চাইছেন, এই বাড়ি যেন ধ্বংস না হয়, এবং এটি একটি স্মৃতিসৌধ হিসেবে রক্ষা করা হোক, যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম মধুসূদনের মহান সাহিত্যিক জীবনের পরিচয় পেতে পারে। এখন দেখার বিষয়, কলকাতা হাইকোর্ট কী সিদ্ধান্ত নেয়, এবং এই ঐতিহ্যগত বাড়ির ভাগ্য কী হয়।