‘জনগণের কষ্ট কি চোখে পড়ে না?’ — ২১ জুলাইয়ের সভা নিয়ে ক্ষোভ হাইকোর্টের

আসন্ন শহিদ দিবসের সভা ঘিরে তৃণমূল কংগ্রেসের ঐতিহ্যবাহী কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কলকাতা হাইকোর্টে উঠল অসন্তোষের সুর। ২১ জুলাই শহরে তৃণমূল সরকারের বার্ষিক সমাবেশ উপলক্ষে রাস্তাঘাটে…

TMC Calls for Preparation Meeting on June 14 Ahead of 21st July Shahid Diwas

আসন্ন শহিদ দিবসের সভা ঘিরে তৃণমূল কংগ্রেসের ঐতিহ্যবাহী কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কলকাতা হাইকোর্টে উঠল অসন্তোষের সুর। ২১ জুলাই শহরে তৃণমূল সরকারের বার্ষিক সমাবেশ উপলক্ষে রাস্তাঘাটে সম্ভাব্য যানজট এবং আদালত চত্বরে আইনজীবীদের চলাচলে বিঘ্ন নিয়ে এক জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ মৌখিকভাবে জানিয়ে দিলেন, সভায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার বিষয়টি তিনি বিবেচনা করতে পারেন।

মামলাটি দায়ের করেছে আইনজীবীদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সংগঠন, যাদের দাবি— প্রতি বছর ২১ জুলাইয়ের সভার ফলে কলকাতার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় যান চলাচলে বিপর্যয় ঘটে। বিশেষ করে আদালতে যাতায়াতকারী আইনজীবীরা ব্যাপক সমস্যায় পড়েন।

   

আবেদনকারীর আইনজীবী আদালতে জানান, তাঁরা আগেই পুলিশকে বিষয়টি জানিয়ে একটি লিখিত আবেদন করেছিলেন, যাতে আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকে এবং যানজট রোধ হয়। কিন্তু তাঁদের সেই আবেদনকে গুরুত্ব দেয়নি প্রশাসন। এই পরিস্থিতিতে হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, রাজ্যের পক্ষে উপস্থিত অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, “এ ধরনের সভা-সমাবেশ বা প্রতিবাদ কর্মসূচিতে কিছুটা অসুবিধা হওয়াই স্বাভাবিক। ২০১১ সাল থেকে প্রতি বছর এই সভা হয়ে আসছে। এর জন্য আলাদা করে নিষেধাজ্ঞা জারি করার কোনও প্রয়োজন নেই। পুলিশ যথাসাধ্য চেষ্টা করবে যাতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কম হয়।”

তবে, আদালতের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল একেবারেই ভিন্ন। বিচারপতি ঘোষ মন্তব্য করেন, “রাজ্য কি বলতে পারে, কোনও যানজট হবে না? পুলিশ কমিশনারকে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে যে কোনওভাবেই যান চলাচল বিঘ্নিত হবে না। যদি তা না পারেন, তাহলে আমি নির্দিষ্ট কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করব। তবে মঞ্চের জায়গা পরিবর্তন করব না।”

এই মন্তব্য থেকেই পরিষ্কার যে, শহরের সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটলে আদালত এবার কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।

Advertisements

উল্লেখযোগ্য, শহিদ দিবসের সভাটি তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম রাজনৈতিক নজরকাড়া কর্মসূচি, যার মূল উদ্দেশ্য ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই কংগ্রেস-তৃণমূল যৌথভাবে আয়োজিত এক বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিচালনার ঘটনায় নিহত ১৩ জন কর্মীর স্মরণে। সেই সময়কার ঘটনাকে রাজনৈতিক সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরে প্রতি বছর ধর্মতলার বুকেই এই সভার আয়োজন করা হয়।

তবে জনজীবনে বারবার এর প্রভাব পড়ায় এই সভা ঘিরে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিরা।

আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, রাজনৈতিক আবেগকে সম্মান জানানো যেতে পারে, কিন্তু তা যেন নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ও জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে ব্যাঘাত না ঘটায়।

আগামী দিনে কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে যদি এই বিষয়ে উপযুক্ত হলফনামা না আসে, তাহলে আদালতের পক্ষ থেকে কতটা কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে রাজ্যবাসী।