আগস্ট থেকেই বাংলায় ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা। আর এই প্রক্রিয়াকে ঘিরেই রাজ্য রাজনীতিতে চড়ছে উত্তাপ। এবার সেই উত্তাপ পৌঁছে গেল সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভাতেও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বুথ লেভেল অফিসারদের (BLO) হুঁশিয়ারি দেওয়ার অভিযোগ তুলে সংসদে সরব হলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি ও সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য (Samik Bhattacharya)। তাঁর অভিযোগ, এই মন্তব্যের মাধ্যমে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এক সাংবিধানিক সংস্থার স্বায়ত্বশাসনের উপর সরাসরি আঘাত করেছেন।
শমীক রাজ্যসভায় (Samik Bhattacharya) মুলতবি প্রস্তাব জমা দিয়ে বলেন, জাতীয় নির্বাচন কমিশনের মতো একটি সংস্থার কর্তৃত্বকে প্রকাশ্যে প্রশ্ন করছেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকী রাজ্যের আধিকারিকদের কাছে বার্তা দেওয়া হচ্ছে যে, তারা যেন কমিশনের নির্দেশে কাজ না করে শুধুমাত্র রাজ্য সরকারের প্রতি জবাবদিহি করেন। শমীকের কথায়, “এটি শুধু সাংবিধানিক সংকট নয়, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপর এক গভীর আঘাত।” তিনি আরও দাবি করেন, স্বচ্ছ ভোটার তালিকার বিরোধিতা করে রাজ্য সরকার আসলে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের ভোটব্যাঙ্ক নিশ্চিত করতে চাইছে।(Samik Bhattacharya)
এই পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে দ্রুত রাজ্যসভায় (Samik Bhattacharya) আলোচনার দাবি জানিয়েছেন শমীক। তাঁর দাবি, পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন কমিশনের অধীনে কাজ করা আধিকারিকদের স্বাধীনতা রক্ষা করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে রাজ্যে ভোটার তালিকায় ভুয়ো ভোটার সংযোজনের অভিযোগ নিয়েও তদন্ত দাবি করেছেন তিনি।
এই অভিযোগের পেছনে প্রেক্ষাপট হিসেবে উঠে এসেছে বোলপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “ভোটার লিস্টটা দেখবেন, মানুষকে যেন হেনস্থা করা না হয়।” পাশাপাশি তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছিলেন, নির্বাচন সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্ত রাজ্য প্রশাসনকে না (Samik Bhattacharya) জানিয়ে নেওয়া চলবে না। মুখ্যসচিবকে না জানিয়েই যদি কাউকে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয় বা হঠাৎ করে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়, তাহলে তা মেনে নেওয়া হবে না বলেও মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকী তিনি বলেন, “ভয় দেখালেই আপনারা ভয় পাবেন? তাহলে ঘরে বসে থাকুন।”
এই বক্তব্য ঘিরেই শুরু হয় রাজনৈতিক তরজা। বিজেপি(Samik Bhattacharya) দাবি করে, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য আসলে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ এবং বিএলওদের ভয় দেখানোর প্রয়াস। বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, “নির্বাচন কমিশনের অধিকার রয়েছে দেশের যে কোনও রাজ্যের BLO-কে প্রশিক্ষণে ডাকতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই অধিকারে হস্তক্ষেপ করছেন।”
তবে পাল্টা দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, “ভুয়ো ভোটার ও বাইরে থেকে আসা ভোটারদের বিরুদ্ধে প্রথম সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। তিনিই প্রথম বলেছিলেন, বৈধ ভোটারদের বাদ দেওয়া চলবে না, আবার অবৈধদের অন্তর্ভুক্তিও বরদাস্ত করা হবে না।” কুণালের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বদাই স্বচ্ছ ও নির্ভুল ভোটার তালিকার পক্ষে। ভোটার তালিকা যেন নিখুঁত হয়, সঠিক মানুষ যেন ভোটাধিকার পান—এই নীতিতেই অটল রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এই প্রসঙ্গে রাজনৈতিক(Samik Bhattacharya) বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা সংশোধনকে কেন্দ্র করে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে সংঘাত আরও বাড়তে পারে। নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য প্রশাসনের সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। আগামী দিনে এই বিষয়টি আদালত বা সংসদে কতদূর গড়ায়, সেদিকেই নজর রাজনৈতিক মহলের।