‘মমতাই ভরসা’, ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে ফেরার পর মুখ খুললেন বিতানের বাবা-মা

শহিদ দিবসের মঞ্চে এবারে এক অন্যরকম আবেগঘন দৃশ্যের সাক্ষী রইল রাজ্যবাসী। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় নিহত পশ্চিমবঙ্গের জওয়ান বিতান অধিকারীর (Bitan Adhikari) বাবা-মাকে নিয়ে মঞ্চে উঠলেন…

‘মমতাই ভরসা', ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে ফেরার পর মুখ খুললেন বিতানের বাবা-মা

শহিদ দিবসের মঞ্চে এবারে এক অন্যরকম আবেগঘন দৃশ্যের সাক্ষী রইল রাজ্যবাসী। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় নিহত পশ্চিমবঙ্গের জওয়ান বিতান অধিকারীর (Bitan Adhikari) বাবা-মাকে নিয়ে মঞ্চে উঠলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শহিদের পরিবারের প্রতি যে গভীর সহানুভূতি এবং সংবেদনশীলতার বার্তা দিতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, তা এ দিনের ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে উঠল।

অনুষ্ঠান শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিতানের মা বলেন, “শহিদ মঞ্চে নিয়ে গিয়ে আমাদের কাঁদতে বারণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, এখন কাঁদলে চলবে না, মাথা উঁচু করে থাকতে হবে। কারণ আপনার ছেলে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে।” এই কথাগুলো বলার সময়ও তাঁর চোখে জল, গলায় আবেগের রেশ স্পষ্ট।

   

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঞ্চেই ঘোষণা করেন, তৃণমূল কর্মীদের স্বেচ্ছা অনুদানে তৈরি ফান্ড থেকে বিতানের পরিবারকে ১ লক্ষ টাকা অর্থ সাহায্য করা হবে। এই তহবিল থেকে আরও কীভাবে পরিবারকে সহায়তা করা যায়, তা নিয়েও তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানান।

বিতানের বাবা জানান, “মুখ্যমন্ত্রী নিজে আমাদের ডেকে নিয়ে গেলেন। আমাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন। শুধু কথায় নয়, কাজে করে দেখালেন তিনি আমাদের পাশে আছেন। আমাদের ছেলেকে হারিয়েছি ঠিকই, কিন্তু আজ মনে হচ্ছে আমরা একা নই।”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শহিদ পরিবারের হাতে ফুল, উত্তরীয় এবং সম্মাননা স্মারক তুলে দেন। তিনি বলেন, “দেশের জন্য যারা প্রাণ দেয়, তারা আমাদের গর্ব। বিতানের আত্মবলিদান যেন বৃথা না যায়। সরকার ও দল তাঁদের পরিবারের পাশে সবসময় থাকবে।”

বিতানের মায়ের কথায় উঠে এল মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা। তিনি জানান, “ছেলের মৃত্যুর পর আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফোন করে খোঁজ নিয়েছেন, কী প্রয়োজন, কী সমস্যা সব জানতে চেয়েছেন। আমাদের ওষুধ-পথ্য, ছেলের শ্রদ্ধাঞ্জলির সব ব্যবস্থা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে।”

Advertisements

২১ জুলাই শহিদ দিবসের এই বিশেষ মুহূর্ত শুধু রাজনীতি নয়, এক মানবিক বার্তা দিল গোটা রাজ্যবাসীকে—যেখানে একজন নেত্রী নিজের রাজনৈতিক অবস্থান ছেড়ে পাশে দাঁড়ান এক শহিদের পরিবারের, সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেন শোকস্তব্ধ মা-বাবার দিকে।

অনুষ্ঠানের পরে তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা জানান, “বিতানরা আমাদের ভাই। তাঁদের ছেলে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে। আজ আমরা তাঁদের পাশে দাঁড়াতে পেরে গর্বিত।”

এই দৃশ্য বারবার প্রমাণ করে দিল, শহিদ দিবস শুধু রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার মঞ্চ নয়, বরং এটা একটি চেতনার স্থান—যেখানে বেদনা, সম্মান এবং দায়িত্ববোধ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।

বিতান অধিকারীর পরিবার যেন নতুন করে এক আশার আলো দেখতে পাচ্ছে, আর সেই আলোয় তাঁদের পথপ্রদর্শক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।