পুজো মণ্ডপে নিরাপদ বৈদ্যুতিক সংযোগের আবেদন করলেন মন্ত্রী

বিধাননগর: শহরজুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি। মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে প্রতিমা গড়ার কাজ ও প্যান্ডেল সাজানোর তোড়জোড়। পুজো মণ্ডপের নিরাপত্তা এবং বিদ্যুৎ পরিষেবার নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ…

পুজো মণ্ডপে নিরাপদ বৈদ্যুতিক সংযোগের আবেদন করলেন মন্ত্রী

বিধাননগর: শহরজুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি। মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে প্রতিমা গড়ার কাজ ও প্যান্ডেল সাজানোর তোড়জোড়। পুজো মণ্ডপের নিরাপত্তা এবং বিদ্যুৎ পরিষেবার নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যেই তৎপর হয়েছে রাজ্য সরকার। বুধবার বিধাননগরের বিদ্যুৎ দপ্তরে সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা (WBSEDCL), সিইএসসি (CESC) এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের শীর্ষ আধিকারিকরা।

মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বৈঠকে জানান, প্রতিবছরের মতো এ বছরও দুর্গাপুজোর সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ইতিমধ্যেই ডিভিসি, এনটিপিসি, রেল কর্তৃপক্ষসহ একাধিক দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় বৈঠক হয়েছে। পুজো কমিটিগুলিকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে বিদ্যুতের যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকুর জন্যই যেন তারা আবেদন করেন। কারণ অনেক সময় কম বিদ্যুতের জন্য আবেদন করার ফলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থেকে যায়।

   

তিনি জানান, WBSEDCL-এর আওতায় ২০১১ সালে যেখানে ২০,৯৭০টি দুর্গাপুজো হত, সেখানে মাত্র ২১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হত। বর্তমানে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০,৫৫০টি পুজোয়, যেখানে প্রয়োজন ১,৩৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। অর্থাৎ বিদ্যুতের চাহিদা গত এক দশকে প্রায় ৫৪২ শতাংশ বেড়েছে। সিইএসসি-র পরিষেবা এলাকায় ২০২৪ সালে ৫,৪৮৪টি পুজোয় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে, যার জন্য প্রয়োজন হয়েছিল ৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সব মিলিয়ে সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী এবছর রাজ্যে ৫৬,০৩৪টি দুর্গাপুজো মণ্ডপে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে হাজার হাজার বাড়ি ও ছোট ক্লাবের পুজো, যেখানে আলাদা করে বিদ্যুৎ সংযোগের প্রয়োজন হয় না।

গত বছর দুর্গাপুজোর তৃতীয়া এবং চতুর্থীতে বিদ্যুতের চাহিদা সর্বাধিক বেড়েছিল। চতুর্থীতে চাহিদা পৌঁছেছিল ৯,৯১২.৭১ মেগাওয়াটে। এবছর সেই চাহিদা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা। বিদ্যুৎমন্ত্রী জানান, ২০২৫ সালের দুর্গাপুজোয় প্রায় ১২,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হতে পারে এবং তার জন্য WBSEDCL এবং CESC সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

Advertisements

মন্ত্রী আরও জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই ঘোষণা করেছিলেন যে পুজো কমিটিগুলিকে বিদ্যুৎ বিলের উপর ৮০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে। দুর্গাপুজোর সময় পরিষেবাকে আরও গতিশীল করতে ১,৬১৬ জন সিনিয়র অফিসার ২৪ ঘণ্টা ডিউটিতে থাকবেন। এছাড়া মোট ৭৩,৭১৪ জন কর্মী রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে দুর্গাপুজোর সময় বিদ্যুৎ পরিষেবা সামলাবেন। যেকোনও জরুরি পরিস্থিতির মোকাবিলায় ৩,৪৫০টি মোবাইল ভ্যান মোতায়েন করা হবে।

বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলে WBSEDCL-এর হেল্পলাইন ১৯১২১-এ ফোন করা যাবে অথবা হোয়াটস্যাপ নম্বর ৮৯০০৭৯৩৫০৪-এ মেসেজ পাঠিয়ে অভিযোগ জানানো যাবে। সিইএসসি-র গ্রাহকদের জন্য জরুরি যোগাযোগ নম্বর ৯৮৩১০৭৯৬৬৬। মন্ত্রী ক্লাব কর্তাদের অনুরোধ করেছেন, মণ্ডপে যেন দাহ্য পদার্থ কম ব্যবহার করা হয় এবং সমস্ত বৈদ্যুতিক সংযোগ নিরাপদভাবে স্থাপন করা হয়।

শহরের পুজো মণ্ডপগুলিতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় সামাল দিতে এবং বিদ্যুৎ পরিষেবা সচল রাখতে রাজ্য সরকার ও বিদ্যুৎ সংস্থাগুলি এবার বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে রাজ্যজুড়ে বিদ্যুতের চাহিদার এই নজিরবিহীন বৃদ্ধি রাজ্যের উৎসবমুখর আবহের প্রতিফলন বলেই মনে করছে বিদ্যুৎ দপ্তর।