ভিনরাজ্যে বাঙালিদের হেনস্থার জন্য দায়ী তৃণমূল, বিস্ফোরক বাংলাপক্ষ

ওড়িশা হোক বা উত্তরপ্রদেশ, কেরল, কর্ণাটক কিংবা মহারাষ্ট্র— এমনকি রাজধানী দিল্লিতেও হেনস্থার শিকার হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা। বাংলায় কথা বলার জন্য তাঁদের ‘বাংলাদেশি’ বলে দাগিয়ে দেওয়া…

Bangla Pokkho Blames TMC for Bengalis' Mistreatment in Other States

ওড়িশা হোক বা উত্তরপ্রদেশ, কেরল, কর্ণাটক কিংবা মহারাষ্ট্র— এমনকি রাজধানী দিল্লিতেও হেনস্থার শিকার হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা। বাংলায় কথা বলার জন্য তাঁদের ‘বাংলাদেশি’ বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। এর প্রতিবাদে বুধবার কলকাতার রাজপথে নামেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কড়া সুরে আক্রমণ করেন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে। তবে বাংলাপক্ষের (Bangla Pokkho) দাবি, ভিনরাজ্যে বাঙালিদের দুর্দশার জন্য তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারই দায়ী।

ভারতে বাঙালিদের জাতীয় সংগঠন হিসেবে পরিচিত ‘বাংলাপক্ষ’। বাঙালির দাবিদাওয়া আদায়ের পক্ষে তারা দীর্ঘদিন ধরেই লড়াই করে আসছে। পশ্চিমবঙ্গে ভূমিপুত্র সংরক্ষণের দাবিও তোলে এই সংগঠন। অনুপ্রবেশকারী ইস্যুতে ভারতীয় বাঙালিদের হেনস্থা নিয়েও তারা সরব। বাংলাপক্ষের সাংগঠনিক সম্পাদক কৌশিক মাইতি বলেন, “এর জন্য দায়ী রাজ্যের শাসকদল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বলছেন, ২২ লক্ষ মানুষ বাংলা থেকে বাইরে কাজ করতে গিয়েছেন, আর দেড় কোটি মানুষ বাইরে থেকে বাংলায় কাজ করতে এসেছেন।”

   

পশ্চিমবঙ্গের বহু মানুষ জীবিকার প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যান। তাঁদের মধ্যে অনেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁদের অনুপ্রবেশকারী বলে দাগিয়ে দেওয়া ছাড়াও নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কেউ কেউ প্রাণও হারিয়েছেন কাজের সময়ে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্য সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে বলে দাবি করলেও, কৌশিক মাইতির প্রশ্ন, “মুখ্যমন্ত্রী বলছেন ‘পরিযায়ী শ্রমিকরা ফিরে আসুন, বাংলায় কাজ দেব।’ কোথায় দেবেন কাজ? কীভাবে দেবেন? আমরা ভূমিপুত্র সংরক্ষণ চাই।” তিনি আরও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী গর্ব করে বলেন, ‘বিহারের লোকজনকে কাজ দিয়েছি।’ এটা তো বাঙালির দুর্ভাগ্য!”

দেশজুড়ে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের তাড়ানো হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে থাকা বাঙালিদের এক বড় অংশ পড়েছেন চরম সমস্যায়। অভিযোগ, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাঙালিদের টার্গেট করা হচ্ছে। ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটের আগে এই বিষয়টিকে বড় ইস্যু হিসেবে তুলে ধরতে চলেছে তৃণমূল। বিজেপিকে বাঙালি-বিরোধী বলে প্রচার করছেন ঘাসফুলের নেতারা। একুশের নির্বাচনে তৃণমূলের স্লোগান ছিল, “বাংলা নিজের মেয়েকে চাই।” এর ফলস্বরূপ ক্ষমতায় ফেরেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়— মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে হ্যাটট্রিক করেন তিনি।

Advertisements

এই প্রেক্ষিতে বাংলাপক্ষ সেই পুরনো স্লোগানকে আবারও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। কৌশিক মাইতির কথায়, “বিজেপি মারছে, আমরা তার বিরোধিতা করছি। কিন্তু ‘বাংলা নিজের মেয়েকে চাই’ বলে যারা ভোট পেয়েছে, তারা যেন আরও বেশি করে দায়িত্ব নেয়। ভোট চাইবার আগে বাঙালির কাজ নিশ্চিত করা হোক।”

একুশের বিধানসভা হোক বা চব্বিশের লোকসভা ভোট— দুই ক্ষেত্রেই তৃণমূলকে কার্যত সমর্থন করেছিল বাংলাপক্ষ। বাম-কংগ্রেসের পক্ষেও আওয়াজ তুলেছে তারা। তবে বাঙালির স্বার্থে তারা সব পক্ষকেই সমালোচনা করেছে। কৌশিক মাইতির অভিযোগ, “আগে সিপিএম, এখন তৃণমূল, তারও আগে কংগ্রেস— সবাই বহিরাগত তোষণে মেতে উঠেছে। ফলে রাজ্যের চাকরি ও কাজ বাইরের লোকজনের হাতে চলে গেছে। বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে বাঙালিকে কাজে নেওয়া হচ্ছে না। বাংলাপক্ষ ধীরে ধীরে বিভিন্ন জায়গায় পরিস্থিতির বদল ঘটাচ্ছে। কিন্তু এটা সরকারি নীতিমালার মাধ্যমে না হলে বড় কিছু করা সম্ভব নয়।”