Kolkata: মারণ নেশায় আসক্ত শতাধিক খুদেকে ‘মানুষ’ গড়ছেন কলকাতার মৈত্রী

তারা থেকেও যেন নেই। রেল স্টেশন, বাস স্টপ, মাল্টিপ্লেক্সে বাইরে তারা রয়েছে আবহমানকাল ধরে। তবুও তাদের অস্তিত্ব সিংহভাগ শহুরেদের (Kolkata) কাছে থেকেও যেন নেই। তারা…

তারা থেকেও যেন নেই। রেল স্টেশন, বাস স্টপ, মাল্টিপ্লেক্সে বাইরে তারা রয়েছে আবহমানকাল ধরে। তবুও তাদের অস্তিত্ব সিংহভাগ শহুরেদের (Kolkata) কাছে থেকেও যেন নেই। তারা পথ শিশু। 

দামী জামা কাপড়ের পাশে ওদের খড়ি পড়া মলীন হাত দুটো বড়ই বেমানান। সভ্য জগতের অনেকেই তাই এড়িয়ে চলেন ফুটপাথের খুদেদের। মৈত্রী ব্যানার্জী ব্যতিক্রম। তিনি এড়িয়ে যাননি। কাছে টেনে নিয়েছেন প্রান্তিক ছেলে-মেয়েদের। জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টায় চালিয়ে যাচ্ছেন সংগ্রাম। 

একটি ভিডিও নিবেদনে উঠে এসেছে মৈত্রীর সংকল্প, অভিজ্ঞতার কথা। মৈত্রী জানিয়েছেন, “আমরা কাজ করতে নেমে দেখি ছোটো ছোট বাচ্চা, ১০-১২ বছরের, ডেনড্রাইট নিচ্ছে। তখন আমরা তাদের জিজ্ঞাসা করি ‘তোরা কেন ডেনড্রাইট নিচ্ছিস?”

উত্তরে সেই পথ শিশুরা জানায়, “দিদি আমাদের খুব খিদে পায়। ডেনড্রাইটটা নিলে আর খিদে পায় না।” 

কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে আসে মৈত্রীর। ভিজে যায় চোখ। জল মুছে আবার বলতে শুরু করেন তাঁর অভিজ্ঞতা। “দেখছিলাম বহু বাচ্চা মাটি কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে”। 

মৈত্রীর মতো অনেকেই চেষ্টা করেছেন বা করছেন ছেলে-মেয়েগুলোর জন্য। মৈত্রীরাও যোদ্ধা। নেমেছেন এক অসম লড়াইয়ে। সমাজ যাদের ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে আস্তাকুঁড়ে, তাদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা। কিন্তু এভাবে কতোদিন? মৈত্রী যে ধরে বাচ্চাদের ‘মানুষ’ করছেন, সেই ঘরেও দারিদ্রতার ছাপ। ইটে পড়েছে শ্যাওলা। সবজেটে দেওয়ালের মাঝে মাঝে ফাঁকফোকর। ধরে এসে পরে এক ফালি সূর্যের কিরণ। চক, স্লেট হতে পড়াশুনা করান মৈত্রী। সাদা খড়ির ছোঁয়ায় ফুটে ওঠে ‘অ আ ক খ’। 

অক্ষর জ্ঞান দেওয়ার পরে কী হবে? অনেক বাচ্চার বয়স তুলনামূলক বেশি। গড়পড়তা স্কুল কালচার হয়তো মেনে নেবে না তাদের। যে ক্লাব ঘরে মৈত্রী তাদের বড় করছেন সে জয়গটাও সীমিত। ইতিমধ্যে ১১০ জনের বেশি পথশিশুকে উদ্ধার করেছেন তিনি। সময় বাড়ার সঙ্গে সংখ্যাটা যে আরও বাড়বে এ কথা তিনি জানেন। রাখবেন কোথায়, পরের পদক্ষেপ কী হবে কিংবা লক্ষ্মীর ভাঁড়ারের রসদ আর কতোদিন চলবে সে ইত্যাদি নানা প্রশ্ন ঘিরে ধরে মৈত্রীকে। সাহায্যের হাত দরকার। দরকার মৈত্রীর মতো মানুষদের সমবেত এক প্রচেষ্টা।