শহর কলকাতায় ফের একবার উর্ধ্বমুখী সোনার দর। শুক্রবার ২৪ ক্যারাটের পাকা সোনার বাটের ১০ গ্রামের দাম দাঁড়াল ৯৭,০০০ টাকা। আগের দিন, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার এই সোনার দর ছিল ৯৬,২০০ টাকা। একদিনে প্রায় ৮০০ টাকার বৃদ্ধি লক্ষ করা গেল। এই দামবৃদ্ধি সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে যেমন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তেমনই বিনিয়োগকারীদের কাছে এটি এক ইতিবাচক ইঙ্গিত।
বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ার পাশাপাশি ভারতীয় বাজারেও তার প্রভাব পড়ছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ডলারের দামের ওঠানামা, বিশ্ব রাজনীতির টানাপোড়েন, এবং মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হারের সম্ভাব্য পরিবর্তনের জল্পনার জেরেই সোনার দর এই মুহূর্তে চড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিশ্বজুড়ে মানুষ আবার সোনার দিকে ঝুঁকছেন। তার প্রভাবেই কলকাতা-সহ ভারতের বিভিন্ন শহরে বাড়ছে হলুদ ধাতুর দাম।
শুধু ২৪ ক্যারাট নয়, ২২ ক্যারাট সোনার দামেও পরিবর্তন এসেছে। শুক্রবার কলকাতায় ২২ ক্যারাট সোনার ১০ গ্রামের দাম প্রায় ৮৯,০০০ টাকার কাছাকাছি। যার অর্থ, গহনা তৈরির জন্য যাঁরা সোনা কিনতে চাইছেন, তাঁদেরকেও বেশি খরচ করতে হচ্ছে।
কেন এই দাম বাড়ছে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, সোনার দামের এই ঊর্ধ্বগতি সাময়িক হলেও কিছু কারণকে দায়ী করা যায়—
1. আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি: ইউরোপ, আমেরিকাসহ নানা দেশে মূল্যবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়ছে। বিনিয়োগকারীরা শেয়ার, বন্ড থেকে বেরিয়ে সোনায় লগ্নি করছেন।
2. মার্কিন ডলারের দুর্বলতা: ডলারের দাম কিছুটা কমলে সোনার দাম বাড়ে, কারণ তখন অন্যান্য মুদ্রায় সোনা কিনতে সুবিধা হয়।
3. চীন ও ভারতীয় বাজারের চাহিদা: বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই সোনার ক্রেতা দেশ এই দুই দেশ। এখানে উৎসবের মরসুমে চাহিদা বাড়ে, বিশেষ করে ভারতের ক্ষেত্রে।
সাধারণ ক্রেতাদের প্রভাব
এই দামের উত্থানে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে মধ্যবিত্তদের উপর। যাঁরা গহনা কেনার পরিকল্পনা করছিলেন বা সামনের পূজো, বিয়ে বা অন্নপ্রাশনের জন্য সোনা জমাতে চাইছিলেন, তাঁদের খরচ অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে। অনেকেই এখন বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন।
তবে, যাঁরা আগে থেকেই সোনায় বিনিয়োগ করেছেন, তাঁদের কাছে এটি একপ্রকার লাভজনক পরিস্থিতি। কারণ সোনার বর্তমান বাজারমূল্য তাঁদের সম্পদের মূল্য বৃদ্ধি করেছে।
আগামী দিনে কী হতে পারে?
সোনা ব্যবসায়ীদের মতে, সামনের দিনগুলোতেও সোনার দরে অস্থিরতা থাকতে পারে। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের রাজনৈতিক অবস্থা, মার্কিন সুদের হার বৃদ্ধি বা হ্রাস এবং ঘরোয়া বাজারে চাহিদা সবকিছু মিলিয়ে সোনার দর আরও বাড়তে পারে বা কিছুটা স্থিতিশীলও হতে পারে।