বিশেষ প্রতিবেদন: কথায় আছে- রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় আর উলু খাগড়ার প্রাণ যায়৷ আর তার হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন আফগানিস্তানের আম-আদমি৷ ১৫ অগস্ট দেশে তালিবানদের দখলদারির পর দেশবাসী জীবন-মরণের লড়াই লড়ছেন৷ অন্যদিকে, যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়া আফগান প্রেসিডেন্ট আশরফ গনির কন্যা বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন মার্কিন মুলুকে বসে৷
তালিবানদের দখলে চলে যাওয়ার পর আফগানিস্তানের মানুষের জীবন মাঝখানে আটকে গিয়েছে। প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি তার লোকদের তালিবানদের হাতে তুলে দিয়ে দেশ ত্যাগ করেছেন। ঠিক এই সময় তার মেয়ে মরিয়ম ঘানি নিউ ইয়র্কে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন।
‘দ্য নিউইয়র্ক পোস্টে’র রিপোর্ট অনুযায়ী, ৪২ বছর বয়সী ঘানি-কন্যা মরিয়ম ব্রুকলিনের ক্লিনটন হিলের পাড়ায় থাকেন। তাঁর আমেরিকায় জন্ম এবং পড়াশুনা৷ মরিয়ম পেশায় একজন শিল্পী এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা। মরিয়ম আফগানিস্তানের মহিলাদের থেকে একেবারেই আলাদা জীবনযাপন করে। ২০১৫ সালে নিউইয়র্ক টাইমস মরিয়মের সাক্ষাৎকার নিয়েছিল। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত মেরির বাড়ির তাক বইয়ে ভরা। তাঁর বাড়িতে সিরিয়ার আলেপ্পো থেকে বালিশ এবং তাঁর বাবার দেওয়া তুর্কমেনিস্তান থেকে গালিচায় মোড়া নিউ ইয়র্কের বিলাসবহুল আবাস৷
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মরিয়ম তার ফ্রিজ থেকে শুরু করে সমস্ত সামগ্রী ম্যাগনেটিক মোটিভেনসাল কোটস দিয়ে সাজিয়েছেন৷ তাঁর রান্নাঘর সবুজ টমেটোতে ভরা ছিল। সেই সময়ে দেওয়া তাঁর সাক্ষাৎকারে, মরিয়ম তার জীবনধারা সম্পর্কে কথা বলার সময় নিজেকে ‘ব্রুকলিন ক্লিশ’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
বর্তমানে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি নন মরিয়ম। তিনি আমেরিকার মানুষকে আফগানদের অধিকারের জন্য রুখে দাঁড়ানোর জন্য সচেতন করছেন। এই জন্য তিনি একটি বিশেষ প্রচারণাও চালাচ্ছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করে মরিয়ম জানতে চেয়েছেন, ‘আফগানদের সাহায্য করার জন্য আমরা এখন কী করতে পারি?’
মরিয়ম বলেছেন, তিনি তার পরিবার, বন্ধু এবং আফগানিস্তানে বসবাসকারী সহকর্মীদের নিয়ে চিন্তিত। মরিয়ম আফগানদের জন্য বিশেষ অভিবাসন ভিসা ত্বরান্বিত করার প্রচেষ্টায়ও কাজ করছেন। আরেকটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘গত কয়েক দিনে যারা সংযমী দেখিয়েছে, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমার কাছ থেকে যা সম্ভব, আমি অবশ্যই তা করব।
ব্রুকলিনে জন্ম নেওয়া ঘানি-কন্যা মেরিল্যান্ডে বেড়ে ওঠেন এবং তার কর্মজীবন শিল্প ও শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত। মরিয়ম নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ম্যানহাটনের স্কুল অফ ভিজ্যুয়াল আর্টসে পড়াশোনা করেছেন। তাঁর কাজ লন্ডনের টেট মডার্ন এবং নিউইয়র্কের গুগেনহাইম এবং এমওএমএ -এ বিশ্বের অনেক জাদুঘরে প্রদর্শিত হয়েছে। ২০১৮ সালে তিনি ভারমন্টের বেনিংটন কলেজে অনুষদ সদস্য হন। একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রবাসে বেড়ে ওঠা মরিয়ম ২০০২ সালে প্রথমবার আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন৷ যখন তার বয়স ছিল ২৪ বছর। তবে, তাঁর শিল্প আফগানিস্তানে অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছে।
সম্প্রতি নিউইয়র্ক পোস্টের সাংবাদিকরা তার ব্রুকলিন বাড়িতে মরিয়মের সঙ্গে দেখা করেন৷ সাংবাদিকরা আফগানিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে তার মন্তব্য চান। তবে তিনি কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি। তিনি তার বাবা সম্পর্কে কোনও তথ্য দিতেও অস্বীকার করেন৷ ২০১৫ সালের একটি সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর বাবাকে ‘অসাধারণ ব্যক্তিত্ব’ সম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।
মরিয়ম বলেন, তিনি বিভিন্ন সংস্কৃতির মাঝে বড় হয়েছেন এবং তাঁর শিল্পের মাধ্যমে তা দেখানোর চেষ্টা করেন। ২০১৫ সালে নিউইয়র্ক টাইমস মরিয়মকে একজন নারীবাদী এবং কর্মী হিসাবে উল্লেখ করেছিল। সেই সময় মরিয়ম বলেছিলেন, আমি একজন শিল্পী হতে চেয়েছিলাম৷ কারণ আমি অনুভব করেছি যে, একজন শিল্পী হয়ে আমি আরও অনেক কিছু করতে পারি।
খবরে প্রকাশ, তালিবানদের আগমনের পর মরিয়মের বাবা এবং আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি কোটি কোটি টাকা এবং চারটি গাড়ি নিয়ে দুবাই পালিয়ে গিয়েছেন। যদিও একটি ভিডিওর মাধ্যমে ঘানি এই সব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, তাঁকে “মানবিক কারণে” দুবাইয়ে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। গণি বলেন, দেশকে রক্তপাত থেকে বাঁচাতে তিনি দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।