অসম: জনপ্রিয় গায়ক জুবিন গর্গ (Zubeen Garg) আর নেই। ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তিনি চলে যান না ফেরার দেশে। কিন্তু মৃত্যুর প্রায় ২০ দিন পরেও তাঁর স্ত্রী গরিমা সাইকিয়ার জীবনে যেন থামেনি ভালোবাসার রঙ। এখনও প্রতিদিন সিঁথিতে সিঁদুর পরেন তিনি। আর এই দৃশ্য দেখেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক ও কটাক্ষের ঝড়।
গরিমা সাইকিয়া পেশায় একজন ফ্যাশন ডিজাইনার এবং অসমের গোঘাটের মেয়ে। ২০০২ সালে গায়ক জুবিন গর্গের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। জুবিনের গান শুনেই প্রথম তাঁর প্রেমে পড়েছিলেন গরিমা। সেই মুগ্ধতা থেকেই শুরু হয়েছিল এক চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ, যা সময়ের সঙ্গে রূপ নেয় এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের বন্ধনে।
সম্প্রতি জুবিনের পুরনো কিছু ছবি ও ভিডিও শেয়ার করেছিলেন গরিমা সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেখানেই অনেকে লক্ষ্য করেন, তাঁর সিঁথিতে এখনো সিঁদুর রয়েছে। আর সেই থেকেই শুরু হয় নানা মন্তব্য। কেউ প্রশ্ন তোলেন—“স্বামী মারা যাওয়ার পরও সিঁদুর কেন?” আবার কেউ বলেন—“এই ভালোবাসা অভিনব, এক অনন্য উদাহরণ।”
View this post on Instagram
শেষমেশ এই বিতর্ক নিয়ে মুখ খুললেন গরিমা নিজেই। তিনি জানান, “আমি জানি, আমার সিঁদুর নিয়ে অনেকে প্রশ্ন করছেন। প্রথমে ভেবেছিলাম কিছু বলব না। কিন্তু পরে মনে হল, মানুষকে বোঝানো দরকার। জুবিন চলে যাওয়ার দিন আমি সিঁথি ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করেছি, সারাজীবন সিঁদুর পরে থাকব। আমার মনে হয়, মৃত্যু আমাদের আলাদা করতে পারে না। আমি বিশ্বাস করি, পরের জন্মেও ওর সঙ্গেই আমার দেখা হবে।”
গরিমার এই কথাগুলি যেন এক অটুট প্রেমের প্রতিধ্বনি। মৃত্যুর পরেও যে ভালোবাসা মরে না—সেই বিশ্বাসে দৃঢ় তিনি। তাঁর কথায়, “জুবিন শুধু আমার স্বামী ছিলেন না, আমার আত্মার সঙ্গী ছিলেন। তাই এই সিঁদুর ওর প্রতি আমার চিরন্তন ভালোবাসার প্রতীক।”
১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত North-East India Festival-এ যোগ দিতে গিয়েছিলেন জুবিন গর্গ। সেখানে স্কুবা ডাইভিংয়ের সময় হঠাৎ খিঁচুনি ওঠে তাঁর। জলের মধ্যেই অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু চিকিৎসকরা তাঁকে আর বাঁচাতে পারেননি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৫২ বছর।
জুবিন গর্গের আকস্মিক মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ শুধু অসম নয়, সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারত। তাঁর গানে, কণ্ঠে এবং ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ ছিলেন কোটি ভক্ত। আর এখন তাঁর মৃত্যু যেন গরিমার জীবনে এক শূন্যতা রেখে গেছে, যা সিঁদুরেই তিনি পূরণ করতে চাইছেন—স্মৃতি ও ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে।
নেটিজেনদের একাংশ গরিমার এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে লিখেছেন, “ভালোবাসা কখনও মরে না। গরিমা সাইকিয়া সেই প্রমাণ।” কেউ আবার মন্তব্য করেছেন, “সমাজ যেভাবে নারীর সিদ্ধান্তকে প্রশ্ন করে, গরিমা সেই প্রথার বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদের নাম।”