উত্তরপ্রদেশের বাহরাইচ জেলায় চাঞ্চল্যকর ঘটনা (Yogi Police)। প্রাক্তন জেলা পঞ্চায়েত সদস্য বিজয় সিং-এর হত্যার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। সম্প্রতি বাহরাইচের কুন্ডাসার ভিটা এলাকায় এসটিএফ এবং কৈসারগঞ্জ থানার পুলিশের সঙ্গে তিন শুটারের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
এই ঘটনায় এক শুটার গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় এবং গ্রেফতারের সময় চিৎকার করে বলে ওঠে, “আমি পরশুরাম!” পুলিশ তিনজন শুটারকে গ্রেফতার করেছে এবং তাদের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনা বাহরাইচে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
স্থানীয় সূত্র এবং পুলিশের বিবৃতি অনুযায়ী, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে এসটিএফ জানতে পারে যে প্রাক্তন জেলা পঞ্চায়েত সদস্য বিজয় সিং-এর হত্যার জন্য তিন শুটার রেকি করছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে এসটিএফ এবং কৈসারগঞ্জ থানার পুলিশ যৌথভাবে অভিযান শুরু করে। অভিযানের সময় কুন্ডাসার ভিটা এলাকায় শুটারদের সঙ্গে পুলিশের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুটাররা প্রথমে পুলিশের উপর গুলি চালায়, যার জবাবে এসটিএফ-ও পাল্টা গুলি চালায়। এই গোলাগুলির সময় এক শুটার গুলিবিদ্ধ হয়। আহত শুটারকে গ্রেফতারের সময় তিনি চিৎকার করে বলেন, “আমি পরশুরাম!” এই ঘটনায় তিনজন শুটারকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের নাম প্রদীপ যাদব, আলোক সিং এবং সাকেত রাওয়াত।
পুলিশ তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল, কার্তুজ এবং হত্যার পরিকল্পনা সম্পর্কিত কিছু নথি উদ্ধার করেছে।পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, এই হত্যার ষড়যন্ত্রের পিছনে রয়েছে ১০ লক্ষ টাকার সুপারি। আলোক সিং নামে এক ব্যক্তি এই হত্যার জন্য শুটারদের নিয়োগ করেছিলেন। তদন্তে আরও জানা গেছে, অভিযুক্তদের মধ্যে একজনের সঙ্গে বিজয় সিং-এর পরিবারের সম্পর্ক রয়েছে, যা এই ঘটনাকে আরও জটিল করে তুলেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিজয় সিং-এর পূর্বের ব্যবসায়িক বিরোধ এবং রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এই হত্যার ষড়যন্ত্রের পিছনে মূল কারণ হতে পারে। তবে, পুলিশ এই বিষয়ে আরও তদন্ত করছে এবং অন্যান্য সম্ভাব্য সন্দেহভাজনদের খোঁজ চালাচ্ছে।এই ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া শুটারদের মধ্যে আহত ব্যক্তিকে বাহরাইচ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বাহরাইচের পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট বৃন্দা শুক্লা জানিয়েছেন, “আমরা তিনজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছি। মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন আহত হয়েছে। তদন্ত চলছে এবং আমরা এই ষড়যন্ত্রের পিছনের মূল কারণ উদঘাটন করব।” তিনি আরও বলেন, এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।বাহরাইচে এই ধরনের ঘটনা নতুন নয়।
জেলাটি অতীতে একাধিক সাম্প্রদায়িক এবং অপরাধমূলক ঘটনার জন্য খবরে এসেছে। গত বছর অক্টোবরে বাহরাইচের মহসী এলাকায় দুর্গাপুজোর মিছিলের সময় সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ২২ বছর বয়সী রাম গোপাল মিশ্র নিহত হন। সেই ঘটনায়ও পুলিশ এবং এসটিএফ-এর তৎপরতায় পাঁচজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
এই ঘটনার পর বাহরাইচে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে।বিজয় সিং-এর হত্যার ষড়যন্ত্রের এই ঘটনায় স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বিজেপির স্থানীয় নেতা ও মহসী বিধানসভার বিধায়ক সুরেশ্বর সিং বলেছেন, “এই ধরনের অপরাধমূলক কার্যকলাপ কোনওভাবেই সহ্য করা হবে না। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও দাবি করেছেন যে বিজয় সিং-এর জনপ্রিয়তা এবং রাজনৈতিক প্রভাবই এই ষড়যন্ত্রের কারণ হতে পারে।এই ঘটনায় বিরোধী দলগুলি সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সমালোচনা করেছে। সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব বলেছেন, “এই ধরনের ঘটনা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার ব্যর্থতার প্রমাণ। সরকার এনকাউন্টারের নামে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করছে।”
তবে, পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা আইনানুগভাবে কাজ করছে এবং এই এনকাউন্টারের বৈধতা আদালতে প্রমাণ করা হবে।বাহরাইচের এই ঘটনা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকে মনে করছেন, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অপরাধমূলক কার্যকলাপের কারণে এলাকার শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে।
“মেরুদণ্ডহীন”! প্রধানমন্ত্রীর চিন সফরে কংগ্রেসের কটাক্ষ
পুলিশ এবং এসটিএফ-এর এই সাফল্য সত্ত্বেও, জেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার দাবি উঠেছে। তদন্ত চলমান রয়েছে এবং পুলিশ এই ষড়যন্ত্রের পিছনে অন্যান্য সম্ভাব্য সন্দেহভাজনদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।