উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ (Yogi Adityanath) ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম খোদাই করেছেন, রাজ্যের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে। স্বাধীন ভারতের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী পণ্ডিত গোবিন্দ বল্লভ পন্থের ৮ বছর ১২৭ দিনের রেকর্ড ভেঙে, যোগী আদিত্যনাথ ৮ বছর, ৪ মাস এবং ১০ দিনের অবিচ্ছিন্ন ও প্রভাবশালী শাসনকাল সম্পন্ন করেছেন।
তাঁর এই কৃতিত্ব রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গতিশীল শাসনের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা সংস্কার, স্বচ্ছতা এবং অটল প্রতিজ্ঞার মাধ্যমে চিহ্নিত। যোগী সরকারের নেতৃত্বে, একসময় অপরাধ ও বিশৃঙ্খলায় জর্জরিত উত্তরপ্রদেশ একটি ‘নতুন উত্তরপ্রদেশ’-এ রূপান্তরিত হয়েছে, যেখানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত এবং সুশাসন নতুন মানদণ্ড হয়ে উঠেছে।
২০১৭ সালের ১৯ মার্চ ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিপুল জয়ের পর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন যোগী আদিত্যনাথ। ২০২২ সালে বিজেপি আবারও বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরে আসেন, যা উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বিরল কৃতিত্ব। তাঁর নেতৃত্বে গত আট বছরে রাজ্য পরিকাঠামো, বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
গোরখপুরে এআইআইএমএস প্রতিষ্ঠা, পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ে, বুন্দেলখণ্ড এক্সপ্রেসওয়ে এবং ফিল্ম সিটির মতো যুগান্তকারী প্রকল্পগুলো রাজ্যের উন্নয়নের চিত্র বদলে দিয়েছে। এছাড়াও, গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে, জেওয়ার বিমানবন্দর এবং আয়োধ্যা ও কুশিনগরে নতুন বিমানবন্দর টার্মিনাল রাজ্যকে বিনিয়োগ-বান্ধব এবং লজিস্টিক-প্রস্তুত রাজ্যে রূপান্তরিত করেছে।
যোগী সরকারের ‘অপারেশন ক্লিন-আপ’-এর মাধ্যমে সংগঠিত অপরাধ, জমি মাফিয়া এবং গ্যাংস্টার-রাজনীতিবিদদের নেক্সাসের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মুখতার আনসারি এবং আতিক আহমেদের মতো কুখ্যাত ব্যক্তিদের আইনি এবং পুলিশি পদক্ষেপের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। ‘বুলডোজার বিচার’ নামে পরিচিত তাঁর সরকারের কঠোর নীতি অবৈধ দখল এবং মাফিয়া সম্পত্তির বিরুদ্ধে প্রতীক হয়ে উঠেছে, যা প্রশংসার পাশাপাশি সমালোচনাও কুড়িয়েছে।
যোগী আদিত্যনাথের শাসনকালে রাজ্যের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউপি ইনভেস্টরস সামিট এবং গ্লোবাল ইনভেস্টরস সামিট ২০২৩-এর মাধ্যমে ইলেকট্রনিক্স, ডেটা সেন্টার, প্রতিরক্ষা উৎপাদন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং নবায়নযোগ্য শক্তির মতো ক্ষেত্রে ব্যাপক বিনিয়োগ আকর্ষিত হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশ, যিনি একসময় ‘বিমারু’ রাজ্য হিসেবে পরিচিত ছিল, এখন ব্যবসা-সহজতার র্যাঙ্কিং এবং জিএসডিপি বৃদ্ধির তালিকায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে।কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলো যোগী সরকারের শাসনের একটি মূল স্তম্ভ। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য বাসস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে। বিনামূল্যে রেশন বিতরণ এবং উজ্জ্বলা যোজনা দরিদ্র পরিবারগুলোর জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছে।
কন্যা সুমঙ্গলা এবং মিশন শক্তির মতো প্রকল্পগুলো নারী ক্ষমতায়ন এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই প্রকল্পগুলো রাজ্যের লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে বাস্তব পরিবর্তন এনেছে।রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যোগী আদিত্যনাথের এই দীর্ঘ শাসনকাল শুধু সময়ের হিসেবে নয়, স্থিতিশীলতা এবং ধারাবাহিকতার দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ।
লখনউ-ভিত্তিক রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানী ড. বিনয় কুমার বলেন, “যোগী আদিত্যনাথ ধর্মীয় প্রতীকবাদের সঙ্গে কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপের এক অনন্য মিশ্রণ তৈরি করেছেন।” তাঁর নেতৃত্বে রাম মন্দিরের উদ্বোধন এবং কাশী বিশ্বনাথ ধাম করিডোরের মতো প্রকল্পগুলো হিন্দুত্ব এবং উন্নয়নের সমন্বয়কে তুলে ধরেছে।
নগদ কেলেঙ্কারি, সুপ্রিম কোর্টে বর্মার আবেদন বিতর্কে!
২০২৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে, যোগী আদিত্যনাথের এই রেকর্ড তাঁর রাজনৈতিক আধিপত্য এবং জনগণের সমর্থনের প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তিনি কেবল উত্তরপ্রদেশেরই নয়, জাতি গঠনের ক্ষেত্রেও একটি শক্ত ভিত্তি স্থাপন করেছেন।