দূষিত তালিকায় দেশের সেরা দশে নেই বাংলার কোনও শহর

কলকাতা: দেশের বাতাসের গুণগত মান নিয়ে চিন্তা বাড়ছে দিন দিন। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, ভারতের সর্বাধিক দূষিত শহরগুলোর তালিকায় প্রথম দশে পশ্চিমবঙ্গের…

West Bengal air quality

কলকাতা: দেশের বাতাসের গুণগত মান নিয়ে চিন্তা বাড়ছে দিন দিন। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, ভারতের সর্বাধিক দূষিত শহরগুলোর তালিকায় প্রথম দশে পশ্চিমবঙ্গের কোনও শহরের নাম নেই (West Bengal Air Quality)। এই তথ্য সামাজিক মাধ্যমে এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা পেয়েছে। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) এবং পরিবেশ সংরক্ষণ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (CREA)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে দেশের শীর্ষ দশ দূষিত শহরের তালিকায় মেঘালয়ের বায়র্নিহাট প্রথম স্থানে রয়েছে, যেখানে বায়ুমণ্ডলে PM2.5 এবং PM10-এর মাত্রা উচ্চতম। এর পরে দিল্লি, বিহারের হাজীপুর, গাজিয়াবাদ, গুরগাঁও, সাসারাম, পাটনা, ওড়িশার তালচের ও রৌরকেলা এবং রাজগীরের নাম রয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, হাওড়া বা অন্যান্য শিল্পনগরী এই তালিকায় স্থান পায়নি, যা রাজ্যের জনগণের জন্য একটি স্বস্তির খবর।

বাংলার বায়ুমণ্ডলের উন্নতি

পশ্চিমবঙ্গে বায়ু দূষণের চিত্র গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে রাজ্য সরকারের পদক্ষেপ এবং জনগণের সচেতনতা। কলকাতা, যেটি একসময় ভারতের সর্বাধিক দূষিত শহরগুলোর একটি হিসেবে পরিচিত ছিল, এখন তার বায়ুমণ্ডলের মান মোটামুটি গ্রহণযোগ্য স্তরে রয়েছে। Prana Air-এর তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান AQI (Air Quality Index) স্তর ৯৪, যা “মাঝারি” বিভাগে পড়ে। তবে গত রাত ১২:১০টায় এটি একবার ১১১ (কম কঠিন) স্তরে পৌঁছেছিল। এই তথ্য থেকে বোঝা যায় যে, রাজ্যে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে কিছুটা সাফল্য পাওয়া গেছে, তবে এখনও সতর্ক থাকার প্রয়োজন রয়েছে।

   

রাজ্য সরকার গত কয়েক বছর ধরে বায়ু দূষণ কমানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। কলকাতার সড়কগুলোতে বৃক্ষরোপণ, শিল্প কারখানাগুলোর নির্গত ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ এবং জ্বালানি গাড়ির ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা আরোপের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডল পরিষ্কার রাখার চেষ্টা চলছে। এছাড়া, মেট্রো রেল এবং বাস পরিবহন ব্যবস্থার সম্প্রসারণও দূষণ কমাতে সাহায্য করেছে। জনগণের মধ্যেও পরিবেশ সংরক্ষণের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এই উন্নতির একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

দেশের দূষিত শহরগুলোর চিত্র

এদিকে, দেশের দূষিত শহরগুলোর তালিকায় বিহারের চারটি শহর (হাজীপুর, সাসারাম, পাটনা, রাজগীর) থাকা ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অঞ্চলে নির্মাণ কাজ এবং খারাপ রাস্তার অবস্থা PM2.5 এবং PM10-এর মাত্রা বাড়িয়েছে। মেঘালয়ের বায়র্নিহাটের মতো শহরের শীর্ষ স্থানে থাকা অবাক করা সত্ত্বেও, এর কারণ হিসেবে সীমান্তবর্তী শিল্পক্ষেত্র এবং যানবাহনের ভারসাম্যহীন ব্যবহারের দিকে ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে। দিল্লি, যেটি একসময় দূষণের রাজধানী হিসেবে পরিচিত ছিল, এবার দ্বিতীয় স্থানে নেমে গেছে, যা IQAir-এর ২০২৪ বিশ্ব বায়ুমণ্ডল গুণগত প্রতিবেদনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

Advertisements

ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ এবং সমাধান

যদিও পশ্চিমবঙ্গ এখন দূষিত শহরগুলোর তালিকা থেকে বাদ পড়েছে, তবুও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। বায়ু দূষণ একটি গতিশীল সমস্যা, এবং শিল্পায়ন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে এর প্রভাব বাড়তে পারে। রাজ্য সরকারের কাছে এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে শিল্পক্ষেত্রে নির্গত ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ এবং গাড়ির নিঃসরণ কমানো। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন যে, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থার আরও সম্প্রসারণ এবং শক্তিশালী পরিবেশ নীতি প্রয়োগ করা দরকার।

জনগণের তরফে নিজেদের স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতনতা বাড়ানোর জন্য এবং বায়ু পরিষ্কার রাখতে গাছ লাগানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা উচিত। স্কুল ও কলেজগুলোতে পরিবেশ শিক্ষা প্রচার করা এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা রাজ্যের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।

পশ্চিমবঙ্গের শহরগুলো দূষিত তালিকার শীর্ষে না থাকা একটি ইতিবাচক সংকেত, কিন্তু এটি স্থায়ী সাফল্য নয়। বায়ু দূষণের বিষয়ে সরকার ও নাগরিকদের যৌথ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে রাজ্যের বায়ুমণ্ডল আরও পরিচ্ছন্ন হতে পারে। আগামী দিনে এই সাফল্যকে ধরে রাখতে এবং উন্নত করতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।