ভারতের (India) নিরাপত্তা সংস্থাগুলি নিশ্চিত করেছে যে পহেলগাম হামলায় (Pahalgam attack) জড়িত তিনজন নিহত জঙ্গি পাকিস্তানি (Pakistan) নাগরিক। সোমবার কর্মকর্তারা জানান, পাকিস্তান সরকারের জারি করা নথি ও নাদ্রার (জাতীয় ডাটাবেস ও নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ) বায়োমেট্রিক রেকর্ড সহ একাধিক প্রমাণ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
কর্মকর্তারা জানান, নিহতরা লস্কর-ই-তৈয়বার (এলইটি) জ্যেষ্ঠ সদস্য এবং ২৮ জুলাই শ্রীনগরের উপকণ্ঠে দাচিগাম জঙ্গলে ‘অপারেশন মহাদেব’-এ নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে এনকাউন্টারে মারা যায়। তারা ২২ এপ্রিল বৈসরান তৃণভূমিতে পহেলগামের নৃশংস হামলার পর থেকে ওই অঞ্চলে লুকিয়ে ছিল, যে হামলায় ২৬ জন নিহত হয়।
নিহত সন্ত্রাসীরা হলেন, সুলেমান শাহ ওরফে ‘ফয়জল জাট’, একজন A++ ক্যাটাগরির সন্ত্রাসী, মাস্টারমাইন্ড এবং লিড শ্যুটার; তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী আবু হামজা ওরফে ‘আফগান’, একজন A-গ্রেড কমান্ডার এবং দ্বিতীয় বন্দুকধারী; এবং ইয়াসির ওরফে ‘জিবরান’, যিনি একজন A-গ্রেড কমান্ডার এবং তৃতীয় বন্দুকধারী।
তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের জারি করা ভোটার স্লিপ, যা যথাক্রমে লাহোর (NA-125) ও গুজরানওয়ালা (NA-79) আসনের ভোটার তালিকার সঙ্গে মিলে গেছে।
কর্মকর্তাদের মতে, উদ্ধার হওয়া মাইক্রো-এসডি কার্ডে নাদ্রা সংযুক্ত স্মার্ট-আইডি চিপে তিন জঙ্গির বায়োমেট্রিক তথ্য (আঙুলের ছাপ, মুখের টেমপ্লেট, বংশতালিকা) ছিল, যা তাদের পাকিস্তানি নাগরিকত্ব ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের রাওয়ালকোটের কোইয়ান গ্রামের ঠিকানা নিশ্চিত করেছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাকিস্তানে তৈরি ব্যক্তিগত জিনিসপত্র যেমন ‘ক্যান্ডিল্যান্ড’ এবং ‘চোকোম্যাক্স’ চকোলেটের মোড়ক একই ব্যাগে পাওয়া গেছে যেখানে অতিরিক্ত ম্যাগাজিন ছিল। তারা আরও জানান, মোড়কে মুদ্রিত লট নম্বরগুলি ২০২৪ সালের মে মাসে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদে পাঠানো একটি চালানের সাথে সম্পর্কিত বলে প্রমাণিত হয়েছে।
ব্যালিস্টিক পরীক্ষায় বৈসরান হামলায় ব্যবহৃত ৭.৬২x৩৯ মিমি কার্তুজ তিন জঙ্গির কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া AK-103 রাইফেলের সঙ্গে ১০০% মিলে গেছে। এছাড়া বৈসরান থেকে উদ্ধার এক ছেঁড়া শার্টের রক্তের ডিএনএ প্রোফাইল তিন মৃতদেহের সঙ্গেই অভিন্ন ছিল।
তদন্তে উঠে এসেছে, জঙ্গিরা ২০২২ সালের মে মাসে গুরেজ সেক্টর দিয়ে নিয়ন্ত্রণ রেখা (LoC) অতিক্রম করেছিল। আটক দুই কাশ্মীরি সহযোগী — পারভেজ ও বশির আহমেদ জোথা — স্বীকার করেছেন, তারা ২১ এপ্রিল জঙ্গিদের আশ্রয় ও খাবার দিয়েছিল।
শাহের গারমিন ডিভাইস থেকে উদ্ধারকৃত জিপিএস ডেটা প্রত্যক্ষদর্শীদের জানানো গুলি চালানোর স্থানের সঙ্গে মিলেছে। এছাড়া একটি হুয়াওয়ে স্যাটেলাইট ফোন (IMEI 86761204-XXXXXX) এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিদিন রাতে ইনমারস্যাট-৪ F1-এ সক্রিয় ছিল, যা হারওয়ান বনের চার বর্গকিলোমিটার এলাকায় সংকেত পাঠাত।
কর্মকর্তারা জানান, লস্কর-ই-তৈয়বার দক্ষিণ কাশ্মীর প্রধান সাজিদ সাইফুল্লাহ জাট (চাঙ্গা মাঙ্গা, লাহোর) পুরো অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। উদ্ধার হওয়া স্যাট-ফোন থেকে পাওয়া ভয়েস নমুনা পূর্ববর্তী তার কলের সঙ্গে মিলে গেছে।
তারা আরও জানান, ২৯ জুলাই রাওয়ালকোটে লস্করের স্থানীয় প্রধান রিজওয়ান আনিস নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে ‘গাইবানা নামাজ-এ-জানাজা’ (অনুপস্থিত জানাজা) আয়োজন করেছিলেন, যার ভিডিও এখন ভারতের ডজিয়ারের অংশ।