সংবাদদাতা, বিশাখাপত্তনম: শহরের এক অভিজাত এলাকায় পুলিশের হানায় ধরা পড়ল এক বড়সড় দেহব্যবসার চক্র (Visakhapatnam spa raid)। শহরের ভিআইপি রোডের কাছে অবস্থিত নামী স্পা সেন্টার ‘অর্কিড ওয়েলনেস অ্যান্ড স্পা’–র আড়ালে চলছিল অবৈধ যৌন ব্যবসা। টাস্ক ফোর্স ও থার্ড টাউন পুলিশ যৌথভাবে এই অভিযান চালায়, যার ফলে দুই ম্যানেজার এবং এক গ্রাহককে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সূত্রের খবর, ৪ নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে অভিযানে নামে বিশাখাপত্তনম সিটি পুলিশের বিশেষ টিম। গোপন সূত্রে জানা গিয়েছিল, ওই স্পা সেন্টারে সরকারি নিয়ম লঙ্ঘন করে বেআইনি কার্যকলাপ চলছে। তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে গিয়েই পুলিশের হাতে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রাথমিক তল্লাশিতেই স্পা সেন্টারটির প্রশাসক কল্লুরু পবন কুমার (৩৬) এবং জানা শ্রীনিবাস (৩৫)-কে আটক করা হয়। তারা পালানোর চেষ্টা করলেও পুলিশের জালে ধরা পড়ে যায়।
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা স্বীকার করেছে, মালিক কাসিরেড্ডি অরুণ কুমার এবং রাহুলের নির্দেশেই এই অবৈধ কার্যকলাপ চলছিল। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের মাধ্যমে নির্দিষ্ট গ্রাহকদের কাছে মহিলাদের পাঠানো হত এবং অর্থের বিনিময়ে যৌন পরিষেবা দেওয়া হত। প্রতিটি গ্রাহকের কাছ থেকে আনুমানিক ৩,০০০ টাকা করে নেওয়া হত বলে জানা গেছে।
তল্লাশির সময় আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য মেলে। একটি কক্ষে পুলিশ এক পুরুষ গ্রাহক, চিলি রামচন্দ্র প্রসাদ (৪৩)-কে এক মহিলা কর্মীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় ধরে ফেলে। ওই সময় প্রাঙ্গণ থেকে মোট নয়জন মহিলা উদ্ধার করা হয়, যাদের মধ্যে অনেকেই নির্যাতিত বলে দাবি করেছে। পুলিশ তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে সুরক্ষায় নিয়েছে এবং স্থানীয় মহিলা হেল্প সেন্টারে পাঠানো হয়েছে।
অভিযানের পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ জব্দ করে। উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ৭,০০০ টাকা নগদ অর্থ, তিনটি মোবাইল ফোন (একটি আইফোন ১৩, একটি নাথিং ফোন এবং একটি স্যামসাং ফোন)। পুলিশের মতে, এই ফোনগুলিতেই ছিল গ্রাহক যোগাযোগ এবং বুকিং সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য, যা তদন্তের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে এই অবৈধ ব্যবসার মূলচক্রী দুই ব্যক্তি— কাসিরেড্ডি অরুণ কুমার এবং রাহুল। তারা বর্তমানে পলাতক। পুলিশ ইতিমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে এবং তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। দুই মালিকের আর্থিক লেনদেন ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের ডিটেলস খতিয়ে দেখা হচ্ছে, যাতে বোঝা যায় এই চক্রটি কতটা বিস্তৃত এবং আর কতগুলি স্পা বা ওয়েলনেস সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত।
পুলিশ সূত্রে আরও জানা গেছে, এই পতিতাবৃত্তির চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে শহরের বিভিন্ন অভিজাত স্পা সেন্টারের আড়ালে সক্রিয় ছিল। বাহ্যিকভাবে ম্যাসেজ পরিষেবা দিলেও ভেতরে গোপনে চলত যৌন পরিষেবা। অনেক সময় বাইরের রাজ্য থেকেও মহিলাদের এনে এখানে কাজে লাগানো হত। এই চক্রের মাধ্যমে একদিকে যেমন নিরীহ মহিলাদের শোষণ করা হচ্ছিল, তেমনি শহরের আইনশৃঙ্খলার ওপরও পড়ছিল নেতিবাচক প্রভাব।
বিশাখাপত্তনম সিটি পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, “এটি কেবল একটি স্পা সেন্টারের ঘটনা নয়। আমরা খতিয়ে দেখছি আরও কতগুলি সেন্টারে একই ধরনের বেআইনি ব্যবসা চলছে। সমাজে এ ধরনের অপরাধমূলক কার্যকলাপ বরদাস্ত করা হবে না।”
বর্তমানে গ্রেপ্তার তিনজনকে আদালতে তোলা হয়েছে এবং রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। তদন্তকারীরা আশা করছেন, এই জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে স্পা কাণ্ডের পেছনের বৃহত্তর চক্র এবং তাদের আর্থিক উৎস সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।
এই ঘটনার পর বিশাখাপত্তনমের অন্যান্য স্পা ও ওয়েলনেস সেন্টারেও নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। ইতিমধ্যেই শহরের বেশ কিছু এলাকায় হঠাৎ তল্লাশি শুরু হয়েছে। পুলিশের বার্তা স্পষ্ট — বৈধতার নামে অবৈধ কাজ করলে কাউকেই ছাড়া হবে না।


