গত ২২ জুলাই নয়া উপগ্রহ চিত্র প্রকাশ করেছে সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি। সেখানেই দেখা যাচ্ছে, প্যাংগং হ্রদের উত্তর ও দক্ষিণ তীর সংযোগকারী কংক্রিটের সেতু তৈরি করছে চিন। যা দিয়ে হালকা যানবাহনও চলাচল করছে। এই পোক্ত সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০ মিটার বলে জানা গিয়েছে।
প্যাংগং হ্রদের এই অংশ ১৯৫৮ সাল থেকেই চিনের দখলে। ২০২০ সালোর মে মাসে ভারতীয় সেনার সঙ্গে সংঘর্ষের পরে উত্তর এবং দক্ষিণ তীরের একাংশ জুড়ে সেতু তৈরির কাজে বেজিংয়ের তৎপরতা দেখা গিয়েছিল। উপগ্রহচিত্র বিশেষজ্ঞ ও দ্য ইন্টেল ল্যাবের গবেষক ড্যামিয়েন সিমোনের বক্তব্য, নতুন সেতুর মাধ্যমে প্যাংগং হ্র্দ অঞ্চলে অনেক দ্রুততার সঙ্গে রসদ এবং সামরিক সরঞ্জাম পৌঁছে দিতে পারবে লাল ফৌজ।
সিমোনের দাবি, ২০২০ নাগাদ প্যাংগং অঞ্চলে সংঘর্ষের সময় ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি’কে সেনার কাছে রসদ পৌঁছাতে হ্রদের পূর্বপ্রান্ত দিয়ে যাতায়াত করতে হত। যা সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে তাদের পাল্টা জবাব দেওয়ার বিষয়টিকে দেরি করিয়েছিল। নতুন সেতু নির্মাণের ফলে হ্রদের উভয় তীরের মধ্যে যাতায়াতের দূরত্ব প্রায় ৫০-১০০ কিলোমিটার কমেছে। এতে গন্তব্যে পৌঁছাতে কম সময় লাগছে। যা যুদ্ধের সময় বড় লাভ চিনার সেনার।
এই সেতু নির্মাণ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইছে বিদেশমন্ত্রক এনডিটিভি’কে জানায়, “এই সেতুটি এমন এলাকায় তৈরি করা হচ্ছে যেগুলি প্রায় ৬০ বছর ধরে চিনের বেআইনি দখলে রয়েছে৷ এই ধরনের অবৈধ দখল ভারত কখনও মেনে নেয়নি৷”
নতুন উপগ্রহ চিত্রগুলো অনুসারে, নতুন সেতুটির সঙ্গে প্যাংগং-এর উত্তর অংশে একটি সড়ককে সংযুক্ত করাহয়েছে। এই রাস্তা প্রাচীন তিব্বতীয় খুরনাক দুর্গের দিকে নিয়ে যায়। ১৯৫৮ সালের জুলাই মাসে এই অঞ্চলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্ববর্তী টহল সত্ত্বেও চিন খুরনাক দুর্গের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল।
প্যাংগং হ্রদের দক্ষিণতীরে, একটি নতুন রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। সেতুটির মাধ্যমে সেই রাস্তা দিয়ে চিনের দুর্গ শহর বলে পরিচিত রুটগ-এএ পৌঁছানো যায়। সমরাস্ত্র বিশেষজ্ঞদের দাবি, প্যাংগংয়ের নয়া সেতুটি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় চিনের শক্তি বাড়িয়েছে। লাল ফৌজের দখলকে আরও পোক্তভাবে নিশ্চিৎ করছে। যা চিন্তা বাড়াচ্ছে ভারতীয় সেনার।
২০২০ সালে জুনে প্যাংগং হ্রদের কাছে গালওয়ান উপত্যকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয় ভারতীয় সেনা ও চিনা ফৌজের। এই সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা শহিদ হন। পাল্টা চিন জানায়, ৪ জন লাল ফৌজেরও প্রাণ গিয়েছিল। কিন্তু, আদপে ওই সংখ্যা ৪০ বলে অনুসন্ধানমূলক নানা প্রতিবেদনে জানা গিয়েছিল।
নজির গড়ল দেশের আয়কর বিভাগ, বাড়ছে রিটার্ন জমার সময়সীমা?
এরপর উভয় দেশ আলোচনায় বসে। যার ফলস্বরূপ চিনা সেনা প্যাংগং-য়ের ফিঙ্গার ৪ থেকে ৮ পর্যন্ত যত কাঠামো বানিয়েছিল তা সরিয়ে নেয়। চিনের সঙ্গে সংঘর্ষের পর থেকে, ভারত লাদাখে কাঠামোগত উন্নয়নের গতি বাড়িয়েছে। এই অঞ্চলে সমস্ত মরসুমে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে টানেল খুলেছে। ২০২১ সালে, শুধুমাত্র লাদাখেই ৮৭টি সেতু নির্মিত হয়েছিল। ২০২২ সালে, সরকার লাদাখের ১৮টি মূল প্রকল্পের প্রসঙ্গে চিনা সীমান্ত বরাবর পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ২ হাজার কোটিরও বেশি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।