Monday, December 8, 2025
HomeBharat১৫০ বছর পর ফের কেন বিতর্কে ‘বন্দে মাতরম’? জাতীয় গানের নেপথ্য রাজনীতি

১৫০ বছর পর ফের কেন বিতর্কে ‘বন্দে মাতরম’? জাতীয় গানের নেপথ্য রাজনীতি

- Advertisement -

ভারতের জাতীয় গান বন্দে মাতরম-এর ১৫০তম বর্ষপূর্তিতে আজ লোকসভা ও রাজ্যসভায় শুরু হচ্ছে ১০ ঘণ্টা করে বিশেষ আলোচনা। স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে জাতীয় পরিচয়ের অংশ—এই গানটি রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুও বটে। আজকের আলোচনার সূচনা করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিজেপি দাবি করেছে যে তারা বন্দে মাতরম–সংক্রান্ত “গুরুত্বপূর্ণ ও অজানা” কিছু তথ্য জাতির সামনে উপস্থাপন করবে।

বিতর্কে অংশ নেবেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংও। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢ়ড়া এবং গৌরব গগৈ নেতৃত্ব দেবেন। ফলে দুই কক্ষেই রাজনৈতিক টানাপোড়েন তুঙ্গে পৌঁছানোর সম্ভাবনা।

   

কেন আবার ফিরল ১৫০ বছরের পুরনো বিতর্ক?

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী মোদী অভিযোগ করেন, কংগ্রেস ১৯৩৭ সালে বন্দে মাতরম-এর একাধিক স্তবক বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং এ সিদ্ধান্ত “বিভেদের বীজ বপন করেছিল”, যা আজও দেশের সামনে চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। উল্লেখ্য, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত গানের মূল রূপে বহু স্তবক ছিল, যার মধ্যে মাত্র দু’টি গ্রহণ করা হয়েছিল।

অন্যদিকে, কংগ্রেসের পাল্টা দাবি—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরামর্শেই গানটি দুই স্তবকে সীমিত করা হয়েছিল। কারণ, বাকি স্তবকগুলি সাহিত্যিকভাবে জটিল এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু অংশের আপত্তির কারণ হয়ে উঠেছিল। কংগ্রেসের মতে, পদক্ষেপটি ছিল অন্তর্ভুক্তিমূলক ভাবনা থেকে, বিভেদের নয়।

বিজেপির অভিযোগ—নেহরুর “আসল অবস্থান” লুকিয়ে রাখা হয়েছে। দলের অভিযোগ, নেহরু মনে করতেন আনন্দমঠ উপন্যাসের সঙ্গে গানের সম্পর্ক মুসলিমদের ‘উত্তেজিত’ করতে পারে এবং তিনি কিছু স্তবক বুঝতেও অসুবিধা হতো বলে মন্তব্য করেছিলেন।

রাজনীতির প্রেক্ষাপটে নতুন মাত্রা Vande Mataram Parliament Debate

ইতিহাসের পাশাপাশি রাজনীতিও এই বিতর্ককে উত্তপ্ত করছে। বঙ্কিমচন্দ্রের রচনা আর নেতাজির সমর্থন—এই দুই ইস্যু আগামী বছরে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিজেপির প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হতে পারে। বঙ্গীয় সংস্কৃতির ‘রক্ষক’ হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে চাইছে বিজেপি।

অন্যদিকে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) এবং সমাজবাদী পার্টির মতো বিরোধী দলগুলি আরএসএসের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভূমিকা, এবং হিন্দুত্ব নেতাদের অতীত অবস্থান তুলে ধরে বিজেপির বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শানাতে পারে। তাদের অভিযোগ—বিজেপি সাংস্কৃতিক প্রতীককে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে বর্তমান সমস্যাগুলি থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে চাইছে।

মুসলিম লীগের আপত্তি এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

ঐতিহাসিকভাবে মুসলিম লীগ বন্দে মাতরম-এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায়, কারণ গানটিতে হিন্দু ধর্মীয় প্রতীকের উপস্থিতি। এই আপত্তিই কংগ্রেসকে প্রথম দুই স্তবক গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেছিল—যে সিদ্ধান্তকেই আজ নতুন করে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।

কেন বিজেপি এখন এই ইস্যু তুলছে?

বিজেপির মতে, বন্দে মাতরম ভারতের অসাম্প্রদায়িক, সভ্যতাগত ঐতিহ্যের প্রতীক—যা দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে। ১৯৩৭ সালের সিদ্ধান্তকে তারা ‘অপ্রয়োজনে তোষণমূলক’ বলে অভিহিত করছে। সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান জোরালো করাই বিজেপির মূল লক্ষ্য।

কংগ্রেস কেন রক্ষণাত্মক?

কংগ্রেস দাবি করছে, বন্দে মাতরম—এর মর্যাদা প্রথম তারাই স্থাপন করেছিল এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে গানটি সামনে রেখেছিল। তাদের বক্তব্য, গানকে দুই স্তবকে সীমিত করা হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের পরামর্শে৷ লক্ষ্য ছিল সব সম্প্রদায়কে একত্র রাখা৷ বিজেপি ইতিহাসের আংশিক ব্যবহার করে রাজনৈতিক লাভ তুলতে চাইছে।

শেষ কথা

১৫০ বছর পূর্তিতে সংসদের এই বিশেষ আলোচনা ইতিহাস, পরিচিতি ও বর্তমান রাজনীতির সন্ধিক্ষণে দাঁড় করিয়েছে বন্দে মাতরম—কে। এই বিতর্ক জাতীয় প্রতীকের নতুন ব্যাখ্যার পথ খুলে দেবে, নাকি আরও এক রাজনৈতিক সংঘর্ষে পরিণত হবে—তা নির্ভর করছে আজকের আলোচনার উপর। তবে দেশের বহুস্তরীয় ঐতিহ্য ও বৈচিত্র্যের প্রেক্ষাপটে জাতীয় গানের প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির সুযোগ এনে দিয়েছে এই মুহূর্ত।

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular