দ্বিতীয় হড়পা বানের আঘাত উত্তরকাশীতে, আরও ক্ষতির আশংকা

উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলায় মঙ্গলবার দুটি মেঘভাঙা বৃষ্টির ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে (Uttarkashi)। প্রথম মেঘভাঙা বৃষ্টি ধরালি গ্রামে আঘাত হানে, এবং এর কয়েক ঘণ্টা পর সুকি…

Uttarkashi cloud burst

উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলায় মঙ্গলবার দুটি মেঘভাঙা বৃষ্টির ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে (Uttarkashi)। প্রথম মেঘভাঙা বৃষ্টি ধরালি গ্রামে আঘাত হানে, এবং এর কয়েক ঘণ্টা পর সুকি টপ এলাকায় দ্বিতীয় মেঘভাঙা বৃষ্টি সংঘটিত হয়। এই দুটি ঘটনায় কমপক্ষে চারজনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৫০ জনের বেশি নিখোঁজ রয়েছেন।

ধরালি গ্রামে খির গঙ্গা নদীর উৎস এলাকায় মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধসে বাড়িঘর, হোটেল এবং দোকান ধ্বংস হয়ে গেছে। উত্তরকাশী প্রশাসন জরুরি ভিত্তিতে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে, এবং এই বিপর্যয় মোকাবিলায় রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার সমন্বিতভাবে কাজ করছে।

   

ধরালি গ্রামে মঙ্গলবার দুপুর ১:৪৫ মিনিটে প্রথম মেঘভাঙা বৃষ্টি আঘাত হানে, যা খির গঙ্গা নদীর উৎস এলাকায় ঘটে। এর ফলে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে ধরালি বাজার এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। স্থানীয় বাসিন্দা রাজেশ পানওয়ার জানিয়েছেন, প্রায় ২০-২৫টি হোটেল এবং হোমস্টে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে, এবং ১০-১২ জনের বেশি মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকতে পারেন।

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, কাদা ও ধ্বংসাবশেষ মিশ্রিত জলের স্রোত গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গিয়ে বাড়িঘর ও রাস্তা ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। দ্বিতীয় মেঘভাঙা বৃষ্টি সুকি টপে, ধরালি থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে, ঘটে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি এই ঘটনাকে “অত্যন্ত দুঃখজনক এবং বেদনাদায়ক” বলে উল্লেখ করে জানিয়েছেন, রাজ্যের দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনী (এসডিআরএফ), জাতীয় দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনী (এনডিআরএফ), ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসন যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, “আমি সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি এবং পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি।” উত্তরকাশী জেলা প্রশাসন জরুরি নম্বর (০১৩৭৪২২২১২৬, ০১৩৭৪২২৭২২, ৯৪৫৬৫৫৬৪৩১) জারি করেছে এবং নদীর তীর থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার জন্য সতর্কতা জারি করেছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মুখ্যমন্ত্রী ধামির সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতির খোঁজ নিয়েছেন এবং উদ্ধার কার্যক্রমে কেন্দ্রের পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ (আইটিবিপি) এবং এনডিআরএফের দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করেছে।

Advertisements

আইটিবিপি’র একটি ১৬ সদস্যের দল ইতিমধ্যে ধরালিতে পৌঁছেছে, এবং এনডিআরএফের তিনটি দল মানেরা, বাটকোট এবং দেরাদুন থেকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইবেক্স ব্রিগেডও হারসিলের কাছে ধরালিতে উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে।

ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর (আইএমডি) উত্তরাখণ্ডে ১০ আগস্ট পর্যন্ত ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে। এই অব্যাহত বৃষ্টির কারণে উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, এবং বদ্রীনাথ জাতীয় সড়কের পাগলনালা ও ভানেরপানি এলাকায় ধ্বংসাবশেষের কারণে রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে গেছে।

ধরালি গ্রাম, যা গঙ্গোত্রী ধামের তীর্থযাত্রার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান, এখন সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পর্যটনের জন্য অতিরিক্ত নির্মাণের ফলে প্রাকৃতিক নিষ্কাশন ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে, যা বন্যার প্রকোপ বাড়িয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। মোদি বলেন, “রাজ্য সরকারের তত্ত্বাবধানে ত্রাণ ও উদ্ধার দলগুলি সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে।”

রাহুল গান্ধী কংগ্রেস কর্মীদের ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছেন। উত্তরকাশী পুলিশ স্থানীয়দের নদীর তীর থেকে দূরে থাকার এবং শিশু ও গবাদি পশুদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

এই ঘটনা উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ি অঞ্চলে মৌসুমি বৃষ্টির তীব্রতা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জগুলোকে সামনে এনেছে। উত্তরকাশী প্রশাসন এখন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করছে। তবে, অব্যাহত বৃষ্টি এবং অবরুদ্ধ রাস্তার কারণে উদ্ধার কার্যক্রমে বিলম্ব হচ্ছে।