বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, শিল্প এবং ব্যবসার জন্য একটি প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে, ভারতের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও পরিবর্তন ঘটছে। সাম্প্রতিক একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, উত্তরপ্রদেশ পশ্চিমবঙ্গকে পেছনে ফেলে ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম সক্রিয় কোম্পানির ঘাঁটি (West Bengal business hub) হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। অর্থাৎ, ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, উত্তরপ্রদেশে ১,৪৫,০০৯টি সক্রিয় কোম্পানি রয়েছে, যা পশ্চিমবঙ্গের ১,৪৪,৩৪৮টি সক্রিয় কোম্পানির সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে।
এখনকার এই অবস্থান পরিবর্তন ভারতের ব্যবসায়িক পর landscape দেখে বিশ্লেষকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তরপ্রদেশের এই অগ্রগতি বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি নতুন বিশ্বাস তৈরি করেছে। রাজ্যটির সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, ব্যবসায়ের সুবিধা বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ, এবং উন্নত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সবই এই অগ্রগতির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুত্র
উত্তরপ্রদেশের উন্নতির পেছনে প্রধান কারণগুলির মধ্যে রয়েছে রাজ্য সরকার কর্তৃক নেওয়া সক্রিয় পদক্ষেপ। রাজ্য সরকার একটি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এটি “আক্রমণাত্মক বিনিয়োগকারী যোগাযোগ” চালানোর মাধ্যমে রাজ্যের মিডিয়াম থেকে দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা বাড়িয়েছে। ফলে, নতুন কোম্পানি গঠন করা সহজ হয়ে গেছে, যা প্রবৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
মহারাষ্ট্রের পর, দিল্লি এবং এখন উত্তরপ্রদেশ সক্রিয় কোম্পানির তালিকায় তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে। এই পরিস্থিতি রাজ্যের জনগণের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে এবং ব্যবসায়িক অবকাঠামোর উন্নতি করেছে। ব্যবসায়ীদের জন্য সরকারী সহায়তা এবং নীতি পরিবর্তনের মাধ্যমে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বাড়ানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের চ্যালেঞ্জ
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান কিছুটা সংকটের মধ্যে রয়েছে। রাজ্যের ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতি এবং বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য আরও কাজ করতে হবে। যদিও পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং টেকসই শিল্পের জন্য পরিচিত, তবে বর্তমানে রাজ্যের ব্যুরোক্রেসি এবং অবকাঠামোগত সমস্যাগুলি নতুন কোম্পানির আগমনের পথকে বাধাগ্রস্ত করছে।
বিভিন্ন রিপোর্টে দেখা গেছে যে পশ্চিমবঙ্গের নতুন কোম্পানিগুলির সংখ্যা কমে যাচ্ছে, যা রাজ্যের অর্থনীতির জন্য একটি বিপদ সংকেত। বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করতে হলে রাজ্যটিকে ব্যবসায়িক সুবিধার উন্নতি করতে হবে এবং দক্ষ প্রশাসনকে প্রাধান্য দিতে হবে।
UP beats West Bengal, emerges 3rd largest to house ‘active’ companies in India
Experts have attributed the growing investor confidence to Uttar Pradesh’s robust economic growth in recent years, heightened focus on ease of doing business, vast and expanding consumer base and… pic.twitter.com/br6wclNveu
— World of Facts (@factostats) October 31, 2024
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
অবশ্যই, উত্তরপ্রদেশের বর্তমান অবস্থান প্রশংসার দাবিদার, তবে এটির সাফল্য সুনিশ্চিত করতে হলে রাজ্যকে আরও উন্নতমানের নীতি গ্রহণ করতে হবে। একটি ভালো পরিকল্পনা এবং কার্যকরী নীতি গ্রহণের মাধ্যমে, রাজ্যটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি আদর্শ উদাহরণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে উত্তরপ্রদেশের এই অগ্রগতি অন্যান্য রাজ্যের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হতে পারে। পশ্চিমবঙ্গ সহ অন্যান্য রাজ্যগুলির জন্য এটি একটি শিক্ষা যে, বিনিয়োগের জন্য একটি সদর্থক পরিবেশ তৈরি করতে হলে একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
উত্তরপ্রদেশের এই সাফল্য এবং পশ্চিমবঙ্গের অবস্থার পরিবর্তন ভারতীয় অর্থনীতির সামগ্রিক চিত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এই দুটি রাজ্যের মধ্যে প্রতিযোগিতা দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশকে আরও সমৃদ্ধ করবে এবং অবশেষে জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়নে সহায়ক হবে।
সুতরাং, উত্তরপ্রদেশের অগ্রগতি এবং পশ্চিমবঙ্গের চ্যালেঞ্জ আমাদের সকলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। রাজ্য সরকারগুলিকে ব্যবসায়ীদের জন্য একটি উন্মুক্ত ও সমর্থনমূলক পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যাতে তারা নতুন উদ্যোগ গ্রহণে আগ্রহী হয় এবং রাজ্যের অর্থনীতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।