“জানতাম কিছু হবে”- পাকিস্তানে জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলার প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প

ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে (পিওকে) জঙ্গি ঘাঁটিতে ‘অপারেশন সিঁদুর (Operation Sindoor) নামে নির্ভুল হামলা চালানোর পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald…

Donald Trump on India strikes

ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে (পিওকে) জঙ্গি ঘাঁটিতে ‘অপারেশন সিঁদুর (Operation Sindoor) নামে নির্ভুল হামলা চালানোর পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই ধরনের কোনো ঘটনার সম্ভাবনা সম্পর্কে পূর্বেই ধারণা করেছিল এবং তিনি আশা করেন “এটি দ্রুত শেষ হবে।” এই হামলা গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ২৬ জন নাগরিকের প্রাণহানির ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে পরিচালিত হয়েছে।

ওভাল অফিসে প্রবেশের সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “আমরা এই খবরটি ওভালে প্রবেশের সময়ই শুনেছি। আমার মনে হয়, অতীতের কিছু ঘটনার ভিত্তিতে আমরা জানতাম যে কিছু একটা ঘটতে পারে।” ভারত ও পাকিস্তানের প্রেক্ষাপটে একটি ভুল উল্লেখ করে তিনি যোগ করেন, “তারা কয়েক দশক, এমনকি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে লড়াই করে আসছে। তবে আমি শুধু আশা করি এটি খুব দ্রুত শেষ হবে।”

   

ভারতীয় সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পাবলিক ইনফরমেশন) বা এডিজি পিআই-এর বিবৃতি অনুযায়ী, ‘অপারেশন সিঁদুর-এর মাধ্যমে পাকিস্তান ও পিওকে-তে মোট নয়টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে। ভারত জানিয়েছে, এই হামলা কেন্দ্রীভূত, সুনির্দিষ্ট এবং অ-উত্তেজনামূলক প্রকৃতির ছিল। কোনো পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করা হয়নি, যা ভারতের সংযমী নীতির প্রতিফলন। এডিজি পিআই-এর এক্স পোস্টে বলা হয়েছে, “ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জয় হিন্দ!”

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, বাহাওয়ালপুরে চারটি স্থানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং মুজাফফরাবাদে একটি গ্রিড স্টেশন মিসাইল হামলার শিকার হয়েছে। তবে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এখনও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করেনি। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে, এবং দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ গত সপ্তাহে দাবি করেছিলেন যে ভারত লাইন অফ কন্ট্রোল (এলওসি) বরাবর হামলা চালাতে পারে।

ট্রাম্পের মন্তব্য ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এসেছে। তিনি উভয় দেশের মধ্যে শতাব্দীপ্রাচীন সংঘাতের উল্লেখ করলেও, এটি ঐতিহাসিকভাবে অতিরঞ্জিত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তবুও, তার “দ্রুত শেষ হওয়ার” আশা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগের প্রতিধ্বনি করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ উভয় দেশকে সংযম ও কূটনৈতিক সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি ইসলামাবাদ সফর করে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন।

পহেলগাঁও হামলার পর ভারত কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। ইন্দাস জলচুক্তি স্থগিত করা এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও জটিল করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ‘অপারেশন সিঁদুর পাকিস্তানের জঙ্গি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে ভারতের শক্তিশালী বার্তা। তবে এটি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

ট্রাম্পের মন্তব্য এক্স-এ ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে তার “এটি একটি লজ্জাজনক ঘটনা” মন্তব্যকে উভয় দেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান হিসেবে দেখছেন। তবে ভারতের সমর্থকরা মনে করেন, পহেলগাঁও হামলার পর ভারতের এই পদক্ষেপ ন্যায্য এবং প্রয়োজনীয় ছিল। পাকিস্তানের পাল্টা প্রতিক্রিয়া এখনও অনিশ্চিত, তবে এলওসি বরাবর উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব সম্প্রদায় নিবিড়ভাবে ভারত ও পাকিস্তানের পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করছে। ট্রাম্পের আশাবাদ সত্ত্বেও, আগামী দিনগুলোতে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের গতিপথ কোন দিকে যাবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।

Advertisements