তীর্থযাত্রী বহনকারী ট্র্যাক্টর-ট্রলিতে ট্রাকের ধাক্কা, মৃত্যু ১০ জনের, আহত ৪১

উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় (UP Bulandshahr Accident) প্রাণ হারালেন অন্তত ১০ জন তীর্থযাত্রী, আহত হয়েছেন আরও ৪১ জন। সোমবার ভোররাতে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে…

তীর্থযাত্রী বহনকারী ট্র্যাক্টর-ট্রলিতে ট্রাকের ধাক্কা, মৃত্যু ১০ জনের, আহত ৪১

উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় (UP Bulandshahr Accident) প্রাণ হারালেন অন্তত ১০ জন তীর্থযাত্রী, আহত হয়েছেন আরও ৪১ জন। সোমবার ভোররাতে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে বুলন্দশহর-আলিগড় সীমান্তের অর্ণিয়া বাইপাসের কাছে। নিহতদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। দুর্ঘটনার পরপরই মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন। নিহতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেছেন তিনি।

জেলা পুলিশ সুপার (SSP) দিনেশ কুমার সিং জানিয়েছেন, রাত প্রায় ২টা ১০ মিনিট নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে। ট্র্যাক্টর-ট্রলিটি কাসগঞ্জ জেলার রফাতপুর গ্রাম থেকে রাজস্থানের জাহারপীর মাজারে তীর্থযাত্রার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল। ট্রলিটিতে প্রায় ৬১ জন যাত্রী ছিলেন। হরিয়ানার রেজিস্ট্রেশন করা একটি ক্যান্টার ট্রাক পেছন থেকে ধাক্কা মারে ট্র্যাক্টরটিতে, ফলে সেটি উল্টে যায়।

   

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ও প্রশাসনিক আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করেন। গুরুতর আহতদের বুলন্দশহর জেলা হাসপাতাল, আলিগড় মেডিকেল কলেজ এবং খুরজার কৈলাশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনাস্থলেই ৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল, পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দু’জনের মৃত্যু হয়। মৃতদের মধ্যে ট্র্যাক্টর চালক ই. ইউ. বাবু (৪০), রামবেতি (৬৫), চন্দনি (১২), ঘনিরাম (৪০), মোক্ষি (৪০), শিবাংশ (৬), যোগেশ (৫০), বিনোদ (৪৫), লেখরাজ (৪০) এবং উমাশঙ্কর (৬০)-এর নাম রয়েছে। এঁরা সকলেই কাসগঞ্জ জেলার বাসিন্দা।

জেলা শাসক (DM) শ্রুতি এবং এসএসপি সিং সোমবার সকালেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং পরে হাসপাতালে গিয়ে আহতদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আহতদের মধ্যে ৩ জনকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ১৮ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, যে ট্রাকটি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে সেটি ইতিমধ্যেই জব্দ করা হয়েছে এবং ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ট্র্যাক্টরের ট্রলিটি যাত্রী বহনের জন্য অবৈধভাবে দুই তলায় সাজানো ছিল। উত্তরপ্রদেশে ট্র্যাক্টর-ট্রলিতে যাত্রী পরিবহন আইনত নিষিদ্ধ। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে এখনও বহু মানুষ এই উপায়ে যাতায়াত করে থাকেন। এই অব্যবস্থাপনাই প্রায়শই প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

Advertisements

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কাসগঞ্জ জেলাতেই এক ট্র্যাক্টর-ট্রলির জলে উল্টে যাওয়ায় ২৩ জন তীর্থযাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তখনও এ ধরনের যানবাহনে যাত্রী পরিবহন বন্ধের কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তবুও গ্রামীণ অঞ্চলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যাত্রী পরিবহনের প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। তাঁর নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ উদ্ধারকাজ দ্রুত সম্পন্ন করে আহতদের হাসপাতালে পৌঁছে দেয়। তিনি এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ পোস্ট করে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করেছেন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন।

এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় গোটা কাসগঞ্জ জেলা ও বুলন্দশহর শোকস্তব্ধ। নিহতদের দেহ ময়নাতদন্তের পর তাঁদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। পুলিশ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান নিচ্ছে এবং ট্রাক চালকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।