এক দেশ এক নির্বাচন, প্রস্তাব কার্যকরের দিকে এক ধাপ এগোল কেন্দ্র

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন (One Nation One Election) ব্যবস্থা আরও সহজ এবং সাশ্রয়ী করতে, মোদি সরকার বৃহস্পতিবার ‘ওয়ান নেশন, ওয়ান ইলেকশন’ বা এক দেশ, এক…

Delhi Assembly Election 2025

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন (One Nation One Election) ব্যবস্থা আরও সহজ এবং সাশ্রয়ী করতে, মোদি সরকার বৃহস্পতিবার ‘ওয়ান নেশন, ওয়ান ইলেকশন’ বা এক দেশ, এক নির্বাচন (One Nation One Election) প্রস্তাবটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের পর, একত্রিত নির্বাচন করার প্রস্তাবটি (One Nation One Election) শীঘ্রই সংসদে পেশ হতে পারে। সূত্রের মতে, কেন্দ্র সরকার শীতকালীন সংসদ অধিবেশনের মধ্যেই এই বিলটি পেশ করতে পারে।

পূর্ব রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল, যা ‘ওয়ান নেশন, ওয়ান ইলেকশন’ (One Nation One Election) এর সম্ভাবনা নিয়ে পর্যালোচনা করে একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছিল। এই রিপোর্টের ভিত্তিতে, মোদি সরকার এই সংস্কারের জন্য মন্ত্রিসভার (One Nation One Election0 অনুমোদন পেয়েছে। মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, আগামী দিনে দেশের সব নির্বাচন একসাথে করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা হবে।

   

‘ওয়ান নেশন, ওয়ান ইলেকশন’ প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্য হল, দেশে যেকোনো নির্বাচন যেমন— লোকসভা নির্বাচন, রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন, পৌর নির্বাচন ইত্যাদি— সমস্ত নির্বাচন একসাথে পরিচালনা করা। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন নির্বাচনী প্রক্রিয়া আরও সুষ্ঠু হবে, তেমনি বারবার নির্বাচন পরিচালনার জন্য যে বৃহৎ খরচ হয়, তা থেকে সাশ্রয়ও করা যাবে।

এছাড়া, একসঙ্গে নির্বাচন হওয়ার ফলে নির্বাচনী প্রচার, ভোটগ্রহণ, এবং ভোটপরবর্তী গণনা সবই একসঙ্গে করা হবে, যা প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিকভাবে দেশের জন্য সুবিধাজনক হবে। নির্বাচনী প্রক্রিয়া একক দফায় সম্পন্ন হলে, তাতে সরকারের প্রশাসনিক ব্যয়ও উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া আরও কার্যকর হবে।

তবে, এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা সহজ হবে না। এর জন্য সংসদে অন্তত ছয়টি বিল পাস করতে হবে, কারণ সংবিধানে সংশোধন করতে হবে। বর্তমানে, ভারতের সংবিধানে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নির্বাচন আলাদাভাবে নির্ধারিত। তাই, সংবিধানে পরিবর্তন আনতে হবে, যাতে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নির্বাচন একসঙ্গে হতে পারে। এই প্রস্তাবকে কার্যকর করতে হলে, সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন হবে।

মুখ্যত, রাজ্যসভায় সরকারের জন্য প্রয়োজন হবে ১৬৪ ভোট, কারণ সেখানে এনডিএর ১১২টি আসন রয়েছে, আর বিরোধী পক্ষের ৮৫টি আসন। এই পরিপ্রেক্ষিতে, সরকার চায় যে, সকল রাজনৈতিক দল ও পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে, এই প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হোক।

যদিও মোদি সরকার একসাথে নির্বাচন করানোর পক্ষে সাফাই দিয়েছে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি একসঙ্গে নির্বাচন করানোর বিরোধিতা করেছে। তাদের মতে, একসঙ্গে নির্বাচন হলে, রাজ্যগুলির স্বায়ত্তশাসন ক্ষুণ্ন হতে পারে, কারণ রাজ্য নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি স্বাধীন ক্ষমতা রাখে। এছাড়া, এতে জাতীয় নির্বাচনকে রাজ্য নির্বাচনগুলির উপর প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে, যা রাজ্যগুলির উপর চাপ সৃষ্টি করবে।

বিরোধীদের দাবী, একসাথে নির্বাচন করা হলে একদিকে যেমন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রভাব বাড়বে, তেমনি রাজ্য সরকারের নিজস্ব উন্নয়ন কার্যক্রমে তা বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত করতে, সরকার চাইছে যে সমস্ত রাজনৈতিক দল ও সমাজের চিন্তাবিদদের মতামত নেওয়া হোক। সরকার শুধু রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে আলোচনা নয়, বরং দেশের বুদ্ধিজীবী, আইনজ্ঞ, এবং রাজ্য বিধানসভার সভাপতিদের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করতে চায়। এইভাবে, সমস্ত পক্ষের মতামত নিয়ে প্রস্তাবটির একটি সমন্বিত রূপ তৈরি করা হবে।

এই প্রক্রিয়া নিয়ে চলমান আলোচনা এবং পর্যালোচনার পর, সরকার আশা করছে যে সমস্ত দল একসাথে নির্বাচন করার পক্ষে সহমত হবে। তবে, বিরোধী দলের পক্ষ থেকে এখনও এ বিষয়ে আপত্তি প্রকাশ করা হচ্ছে, যা সরকারের সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।