ইউক্রেনের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Pm Modi) শুভেচ্ছাবার্তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) এক সামাজিক মাধ্যম পোস্টে জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে সম্মানের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে কিয়েভ আশাবাদী।
শান্তি ও সংলাপের প্রতি ভারতের অঙ্গীকারের প্রশংসা
জেলেনস্কি তাঁর বার্তায় বলেন, “ইউক্রেন ভারতের শান্তি ও সংলাপের প্রতি অঙ্গীকারকে গভীরভাবে সম্মান করে। আজ, যখন গোটা বিশ্ব মরিয়া হয়ে যুদ্ধ শেষ করে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, তখন আমরা ভারতের অবদানের ওপর নির্ভর করছি।”
তিনি আরও যোগ করেন, “প্রত্যেকটি সিদ্ধান্ত যা কূটনীতিকে শক্তিশালী করে, তা শুধু ইউরোপের নিরাপত্তা নয়, বরং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের মতো বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।”
ভারতের নিরপেক্ষ অবস্থান ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ভারত তুলনামূলকভাবে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। নয়াদিল্লি প্রকাশ্যে কোনো পক্ষকে সমর্থন না করলেও বারবার শান্তি ও আলোচনার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একাধিক আন্তর্জাতিক মঞ্চে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে, “এখন যুদ্ধের যুগ নয়, সংলাপ ও শান্তির পথেই সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব।”
ভারতের এই অবস্থান আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হয়েছে। ইউক্রেনও ভারতের এই কূটনৈতিক ভূমিকা ও শান্তি-প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারকে গুরুত্ব সহকারে দেখছে।
স্বাধীনতা দিবসে শুভেচ্ছা বিনিময়
১৬ আগস্ট ইউক্রেনের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইউক্রেনের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। তিনি একটি শান্তি ও উন্নয়নে ভরপুর ভবিষ্যতের কামনা করেন। সেই শুভেচ্ছার প্রতিউত্তরে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, কেবল শুভেচ্ছা নয়, বরং বাস্তব শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভারতের মতো প্রভাবশালী দেশের অবদানই বিশ্বকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
যুদ্ধের প্রেক্ষাপট ও ভারতের গুরুত্ব
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখন তৃতীয় বছরে প্রবেশ করেছে। এ যুদ্ধে হাজার হাজার প্রাণহানি ঘটেছে, কোটি কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ইউরোপজুড়ে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, আর বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।
ভারত শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, বরং বৈশ্বিক কূটনীতিতেও একটি ভারসাম্যপূর্ণ সেতুবন্ধনের কাজ করছে। রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব বজায় রেখেও ভারত পশ্চিমা দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করেছে। এই কারণে ভারতকে উভয় পক্ষই গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।
জেলেনস্কির প্রত্যাশা
জেলেনস্কি মনে করেন, যুদ্ধ শেষ করার প্রতিটি প্রয়াস যদি কূটনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড়ায়, তবে তা শুধু ইউক্রেন বা ইউরোপের নিরাপত্তাকেই শক্তিশালী করবে না, বরং এশিয়া, বিশেষ করে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলেও স্থিতিশীলতা আনবে। কারণ বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা এখন আর কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং একে অপরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত।তিনি ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, শান্তির এই প্রচেষ্টায় নয়াদিল্লি আরও সক্রিয় ভূমিকা নিক।