উদয়পুরে রাজপরিবারের সম্পত্তি নিয়ে ব্যাপক সংঘর্ষ

উদয়পুরে (Udaipur) সোমবার ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজপরিবারের মধ্যে তীব্র সংঘাতের সাক্ষী হলো রাজস্থান। বিজেপি বিধায়ক বিশ্বরাজ সিং মেওয়ারকে ৭৭তম মহারানা…

Udaipur Palace Clash: Maharana Vishvaraj Singh Faces Off With Cousin

short-samachar

উদয়পুরে (Udaipur) সোমবার ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজপরিবারের মধ্যে তীব্র সংঘাতের সাক্ষী হলো রাজস্থান। বিজেপি বিধায়ক বিশ্বরাজ সিং মেওয়ারকে ৭৭তম মহারানা হিসাবে অভিষেক করার পর চাচাতো ভাই ডাক্তার লক্ষ্যরাজ সিং মেওয়ারের সঙ্গে তাঁর তীব্র বিরোধ দেখা দেয়। ঐতিহাসিক শহর প্রাসাদের গেটে প্রবেশাধিকার না পেয়ে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। পরিস্থিতি এমন জটিল রূপ নেয় যে রাত ১০টার পর বিদ্রোহী সমর্থকরা পাথর ছুঁড়ে গেট ভাঙার চেষ্টা করে, পাল্টা প্রতিরোধ আসে প্রাসাদের ভেতর থেকেও।

   

প্রাসাদ গেটের উত্তেজনা ও সংঘর্ষ
বিশ্বরাজ সিং প্রাসাদে প্রবেশ করতে গেলে শহর প্রাসাদ এবং এর মন্দির পরিচালনাকারী ট্রাস্টের অনুমতি না পেয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে তাঁর সমর্থকরা প্রাসাদের গেটের সামনে অপেক্ষা করেন। পরে সংঘর্ষ বাধে এবং দুই পক্ষই পাথর নিক্ষেপ শুরু করে। তিনজন আহত হন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হয়।

মেওয়ার রাজপরিবারের ঐতিহ্যবাহী অভিষেক
বিশ্বরাজ সিংকে মেওয়ার রাজবংশের নতুন মহারানা হিসাবে চিতোরগড় দুর্গে ঐতিহ্যবাহী রীতিতে অভিষেক করা হয়। রাজ তিলক অনুষ্ঠানে প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী একজন প্রাক্তন জমিদার তরোয়াল দিয়ে নিজের আঙুল কেটে রক্ত দিয়ে তিলক করেন। এই রীতিটি মেওয়ার রাজবংশের শত শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্য, যা অষ্টম শতাব্দীতে বাপ্পা রাওয়ালের আমল থেকে চলে আসছে।

মন্দিরে প্রবেশে বাধা ও বিরোধের সূত্রপাত
অভিষেকের পর বিশ্বরাজ সিং তাঁর পারিবারিক দেবতা ধুনিমাতা এবং একলিং শিব মন্দিরে আশীর্বাদ নিতে যান। এই দুটি মন্দির শহর প্রাসাদের অভ্যন্তরে এবং ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত। তবে তাঁকে মন্দিরে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হয়। স্থানীয় প্রশাসন ট্রাস্টকে অনুরোধ করেছিল যেন বিশ্বরাজ সিং ও কয়েকজন প্রাক্তন জমিদারকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু ট্রাস্ট অনুমতি না দেওয়ায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়।

ট্রাস্ট বনাম রাজপরিবারের দীর্ঘদিনের বিরোধ
মেওয়ার রাজপরিবারের অভ্যন্তরীণ সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিনের। ১৯৮৪ সালে প্রাক্তন মহারানা ভগবৎ সিংজি তাঁর ছোট ছেলে অরবিন্দ সিংকে ট্রাস্টগুলোর পরিচালক নিযুক্ত করেন, যা তাঁর বড় ছেলে মহেন্দ্র সিংকে কার্যত রাজপ্রাসাদ ও অন্যান্য সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে। বর্তমান এই বিরোধ সেই ঘটনারই ধারাবাহিকতা। বর্তমানে ট্রাস্টের অধীনে নয়টি প্রাসাদ, মন্দির ও দুর্গ পরিচালিত হয়, যার দেখভাল করেন অরবিন্দ সিং ও তাঁর ছেলে লক্ষ্যরাজ সিং।

ট্রাস্টের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি
সোমবার সকালে মহারানা মেওয়ার চ্যারিটেবল ট্রাস্ট স্থানীয় সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানায়, তাঁরা কোনোভাবেই তাঁদের সম্পত্তি রক্ষা করতে কাউকে প্রবেশ করতে দেবে না। তাঁরা আশঙ্কা করেন যে প্রবেশের চেষ্টা ট্রাস্টের সম্পত্তি দখল বা ক্ষতির উদ্দেশ্যে হতে পারে।

বিশ্বরাজ সিংয়ের প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পর বিশ্বরাজ সিং বলেন, “আজকের পরিস্থিতি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমি সকল সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু রাজপ্রথা ও সামাজিক রীতিনীতি অনুযায়ী আশীর্বাদ নেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এভাবে আমাদের ঐতিহ্য অবমাননা করা হচ্ছে।”

শহরজুড়ে প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনায় শুধু রাজপরিবার নয়, পুরো উদয়পুরের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। রাজপরিবারের এই ঐতিহাসিক বিরোধ শহরের বাসিন্দাদের মধ্যেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের পদক্ষেপ
জেলা প্রশাসন পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্রুত হস্তক্ষেপ করে। পুলিশ পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে।

মেওয়ার রাজপরিবারের সম্পত্তি ও ঐতিহ্য নিয়ে এই বিরোধ উদয়পুরের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় হিসেবে যোগ হয়েছে। তবে এর সমাধান আদৌ হবে কি না, তা সময়ই বলবে।