রাষ্ট্রীয় জনতা দল (RJD) নেতা তেজস্বী যাদবের বিরুদ্ধে দুটি ভোটার আইডি রাখার গুরুতর অভিযোগ তুলেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP) (Voter Cards)। রবিবার বিজেপি দাবি করেছে যে, তেজস্বী যাদব শনিবার একটি সাংবাদিক সম্মেলনে যে ইলেকশন ফটো আইডেন্টিটি কার্ড (ইপিক) নম্বর উল্লেখ করেছেন, তা তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবহার করা নম্বর থেকে ভিন্ন।
এই অভিযোগ এসেছে ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) তেজস্বীর দাবি খারিজ করার একদিন পর, যেখানে তিনি বলেছিলেন যে বিহারের খসড়া ভোটার তালিকায় তাঁর নাম নেই। এই ঘটনা বিহারের বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ার মধ্যে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
বিজেপির অভিযোগ ও তেজস্বীর দাবি
বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্র এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “কংগ্রেস এবং আরজেডির মুখোশ খুলে গেছে। তেজস্বী যাদব কি শপথের অধীনে মিথ্যা বলেছেন? তিনি কি নির্বাচন কমিশনের কাছে ভুল তথ্য উপস্থাপন করেছেন?” পাত্র উল্লেখ করেন যে, তেজস্বী ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনের হলফনামায় যে ভোটার আইডি নম্বর (ইপিক নম্বর RAB0456228) জমা দিয়েছিলেন, তা শনিবার তিনি সাংবাদিক সম্মেলনে উল্লেখিত নম্বর (RAB2916120) থেকে ভিন্ন।
তিনি দাবি করেন, এই ভিন্ন নম্বর ব্যবহার করে তেজস্বী ভোটার তালিকা থেকে তাঁর নাম মুছে ফেলা হয়েছে বলে ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন। বিজেপি প্রশ্ন তুলেছে, এটি কি একটি ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা ছিল জনগণকে বিভ্রান্ত করার এবং নির্বাচন কমিশনের উপর দোষ চাপানোর?
নির্বাচন কমিশনের প্রতিক্রিয়া
নির্বাচন কমিশন তেজস্বীর অভিযোগকে “ভিত্তিহীন” এবং “তথ্যগতভাবে ভুল” বলে উড়িয়ে দিয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, তেজস্বী যাদবের নাম বিহারের খসড়া ভোটার তালিকায় সিরিয়াল নম্বর ৪১৬-এ রয়েছে এবং তিনি ২০১৫ এবং ২০২০ সালের নির্বাচনে ব্যবহৃত ইপিক নম্বর RAB0456228-এর সঙ্গে তালিকাভুক্ত।
পাটনার জেলা প্রশাসনও নিশ্চিত করেছে যে তেজস্বীর নাম পাটনা সাহিব লোকসভা কেন্দ্রের দিঘা বিধানসভা এলাকার ভোটার তালিকায়, পোলিং স্টেশন নম্বর ২০৪, বিহার অ্যানিমাল সায়েন্স ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরি ভবনে রেকর্ড করা আছে।
দ্বিতীয় ভোটার আইডি নিয়ে তদন্ত
তেজস্বী যে দ্বিতীয় ইপিক নম্বর (RAB2916120) সাংবাদিক সম্মেলনে দেখিয়েছেন, তা নিয়ে নির্বাচন কমিশন তদন্ত শুরু করেছে। কমিশনের সূত্র জানিয়েছে, গত দশ বছরের রেকর্ড পরীক্ষা করেও এই নম্বরের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
এটি “অফিসিয়াল চ্যানেলের মাধ্যমে জারি করা হয়নি” বলে মনে করা হচ্ছে এবং এটি একটি জাল নথি হতে পারে বলে তদন্ত চলছে। যদি তেজস্বীর কাছে দুটি ভোটার আইডি থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হতে পারে।
তেজস্বীর অভিযোগ ও রাজনৈতিক বিতর্ক
শনিবার পাটনায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে তেজস্বী তাঁর ফোন থেকে ইপিক নম্বর দিয়ে নির্বাচন কমিশনের পোর্টালে সার্চ করে দেখান যে তাঁর নাম ভোটার তালিকায় নেই। তিনি দাবি করেন, “আমার নাম ভোটার তালিকায় নেই। আমি কীভাবে নির্বাচনে লড়ব?
এটি গণতন্ত্রের হত্যা।” তিনি আরও অভিযোগ করেন যে বিহারে এসআইআর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রায় ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, যা রাজ্যের মোট ভোটারের ৮.৫%। তেজস্বী প্রশ্ন তুলেছেন, এই নাম বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া কি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, এবং নির্বাচন কমিশন কি বিজেপির পক্ষে কাজ করছে?
বিজেপি ও সরকারি প্রতিক্রিয়া
বিজেপির আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য এক্স-এ পোস্ট করে তেজস্বীর অভিযোগকে “ভুয়ো খবর” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন এবং খসড়া ভোটার তালিকার স্ক্রিনশট শেয়ার করে দেখিয়েছেন যে তেজস্বীর নাম সিরিয়াল নম্বর ৪১৬-এ রয়েছে।
বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরীও তেজস্বীকে কটাক্ষ করে বলেছেন, “তিনি সঠিকভাবে সার্চ করার ক্ষমতা রাখেন না। তাঁর নাম তাঁর বাবা লালু প্রসাদের পাশেই রয়েছে।” জেডি(ইউ) নেতা সঞ্জয় কুমার ঝা বলেন, “নির্বাচন কমিশন স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে যে তেজস্বীর নাম তালিকায় রয়েছে।”
উত্তরপ্রদেশে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা অনুদান ঘোষণা মোদীর
বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধন বিতর্ক
বিহারে এসআইআর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রায় ৩৫ লক্ষ ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে। তেজস্বী দাবি করেছেন, প্রতি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে গড়ে ২০,০০০ থেকে ৩০,০০০ নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, এবং এই তালিকায় কোনো ঠিকানা বা বুথ নম্বর দেওয়া হয়নি, যা স্বচ্ছতার অভাব নির্দেশ করে।
তিনি আরও বলেন, এই প্রক্রিয়া গরিব এবং প্রবাসী ভোটারদের জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিকর। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দাবি ও আপত্তি জানানোর জন্য এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে, এবং কোনো নাম বিনা কারণে বাদ দেওয়া হবে না।
তেজস্বী যাদবের দুটি ভোটার আইডি নিয়ে বিজেপির অভিযোগ এবং নির্বাচন কমিশনের তদন্ত বিহারের রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। এই বিতর্ক আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
তেজস্বীর অভিযোগ এবং বিজেপির পালটা আক্রমণ গণতন্ত্রের স্বচ্ছতা এবং ভোটার তালিকার নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। নির্বাচন কমিশনের তদন্তের ফলাফল এবং তেজস্বীর প্রতিক্রিয়া এই ঘটনার পরবর্তী দিক নির্ধারণ করবে।