মাওবাদী আইইডি বিস্ফোরণে জখম দুই নিরাপত্তারক্ষী

ছত্তিশগড়ের (Chhattisgarh) বিজাপুর জেলায় রবিবার মাওবাদীরা একটি ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে। মাওবাদীরা একটি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিরাপত্তারক্ষীদের বহনকারী একটি গাড়িকে লক্ষ্য করে। এই…

Two Security Personnel Injured in Naxal IED Blast in Chhattisgarh's Bijapur

ছত্তিশগড়ের (Chhattisgarh) বিজাপুর জেলায় রবিবার মাওবাদীরা একটি ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে। মাওবাদীরা একটি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিরাপত্তারক্ষীদের বহনকারী একটি গাড়িকে লক্ষ্য করে। এই ঘটনায় রাজ্য পুলিশের বিশেষ টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) দুজন সদস্য আহত হয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, বিস্ফোরণের শক্তিশালী ধাক্কায় এই দুই জওয়ান আঘাতপ্রাপ্ত হন।

ঘটনাটি ঘটেছে সন্ধ্যা ৫:৪৫ নাগাদ, মাদ্দেদ থানার অধীনে গোর্লা নদীর কাছে। একটি এসটিএফ দল মাওবাদীবিরোধী অভিযান শেষ করে একটি পিক-আপ গাড়িতে ফিরছিল। এই সময় মাওবাদীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে আইইডি বিস্ফোরণ ঘটায়। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, অভিযানের পর ফেরার পথে এই হামলা চালানো হয়েছে, যা মাওবাদীদের হতাশা ও কোণঠাসা অবস্থার ইঙ্গিত দেয়।

   

আহত দুই এসটিএফ জওয়ানকে দ্রুত উদ্ধার করে নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার পর জানা গেছে, বিস্ফোরণের শকওয়েভের কারণে তাঁরা আঘাত পেয়েছেন। তবে তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। আধিকারিকরা জানান, আহতদের আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে রায়পুরে স্থানান্তর করা হতে পারে।

Advertisements

মাওবাদীরা প্রায়ই আইইডি ব্যবহার করে নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে। এই ধরনের হামলা তাদের গোপন এবং কাপুরুষোচিত কৌশলের অংশ। বিজাপুরের মতো মাওবাদী-আক্রান্ত এলাকায় এসটিএফ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী নিয়মিত অভিযান চালায়। এই অভিযানগুলো মাওবাদীদের কার্যকলাপ রোধে সফল হলেও, তারা প্রতিশোধমূলক হামলার চেষ্টা করে। রবিবারের এই ঘটনা তারই একটি উদাহরণ।

ছত্তিশগড়ে মাওবাদীবিরোধী অভিযান গত কয়েক বছরে তীব্রতর হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকেই নিরাপত্তা বাহিনী এই রাজ্যে একাধিক সফল অভিযান চালিয়েছে। জানুয়ারিতে বিজাপুরে একটি বড় হামলায় আটজন এসটিএফ জওয়ান এবং একজন বেসামরিক চালক নিহত হন। সেই ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনী আরও সতর্কতার সঙ্গে অভিযান চালাচ্ছে। তবে মাওবাদীরা এখনও আইইডির মতো গোপন অস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালানোর চেষ্টা করছে।

বিজাপুরের পুলিশ সুপার জিতেন্দ্র যাদব জানিয়েছেন, “মাওবাদীরা নিরাপত্তা বাহিনীর গাড়ি লক্ষ্য করে এই আইইডি বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। আমরা ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত বাহিনী পাঠিয়েছি এবং এলাকায় তল্লাশি অভিযান চলছে।” তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের হামলা মাওবাদীদের দুর্বলতা প্রকাশ করে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব।” ঘটনার পর এলাকায় নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে।

এই ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। বিজাপুরের বাসিন্দারা মাওবাদীদের এই ক্রিয়াকলাপের জন্য দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন। স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, “আমরা শান্তিতে বাঁচতে চাই। কিন্তু এই হামলাগুলো আমাদের জীবনকে বিপন্ন করে তুলছে।” নিরাপত্তা বাহিনী এবং মাওবাদীদের মধ্যে এই সংঘাত এলাকার উন্নয়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ছত্তিশগড় সরকার এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বারবার বলেছে যে, মাওবাদীবাদের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গত জানুয়ারিতে বলেছিলেন, “২০২৬ সালের মধ্যে ভারত থেকে মাওবাদীবাদ নির্মূল করা হবে।” এই লক্ষ্যে নিরাপত্তা বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে এবং স্থানীয়দের সমর্থন জোগাড়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প চালু করা হয়েছে।

বাঙালি ক্রিকেট ও খেলাধুলার প্রতি আগ্রহী হলেও, এই ধরনের খবর তাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে এই হামলার নিন্দা করেছেন এবং আহত জওয়ানদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন। একজন লিখেছেন, “এই ধরনের কাপুরুষোচিত হামলা বন্ধ হওয়া উচিত। আমাদের জওয়ানরা দেশের জন্য জীবন দিচ্ছেন।” এই ঘটনা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার প্রতি আরও মনোযোগ দেওয়ার দাবি তুলেছে।

বিজাপুরে এই আইইডি বিস্ফোরণ মাওবাদীদের বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ের একটি দুঃখজনক অধ্যায়। নিরাপত্তা বাহিনী তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে, তবে এই হামলা প্রমাণ করে যে, এই সমস্যার সমাধান এখনও অনেক দূরে। সরকার এবং জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই এই সংঘাতের অবসান ঘটাতে পারে। আপাতত, আহত জওয়ানদের আরোগ্য এবং এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠাই সবার প্রার্থনা।