জামিনে মুক্ত ছত্তিশগড়ে গ্রেফতার হওয়া দুই ধর্মযাজক

Chhattisgarh kerala nun got bail

ছত্তিশগড়ে মানব পাচার ও জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া কেরলের দুই ধর্মযাজক, সিস্টার প্রীতি মেরি এবং সিস্টার বন্দনা ফ্রান্সিস,(Chhattisgarh) শনিবার (২ আগস্ট, ২০২৫) ছত্তিশগড়ের বিলাসপুরে একটি বিশেষ এনআইএ (জাতীয় তদন্ত সংস্থা) আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন।

Advertisements

এই ঘটনা কেরল এবং ছত্তিশগড়ের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। জামিনের পর কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়ার (সিপিআই) সাংসদ পি সন্তোষ কুমার, কেরালা বিজেপি সভাপতি রাজীব চন্দ্রশেখর এবং অন্যান্য নেতারা তাঁদের স্বাগত জানিয়েছেন। এই ঘটনা ভারতের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় পরিস্থিতির উপর নতুন আলোকপাত করেছে।

গত ২৫ জুলাই ছত্তিশগড়ের দুর্গ রেলস্টেশনে বজরং দলের কর্মীদের অভিযোগের ভিত্তিতে সিস্টার প্রীতি মেরি এবং সিস্টার বন্দনা ফ্রান্সিসকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁরা আলাপ্পুঝার সিরো-মালাবার চার্চের অধীনে অ্যাসিসি সিস্টার্স অফ মেরি ইম্যাকুলেট (এএসএমআই)-এর সদস্য। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন একজন আদিবাসী যুবক সুখমান মান্দাভি এবং নারায়ণপুরের তিনজন আদিবাসী নারী, যাঁদের তাঁরা আগ্রার একটি কনভেন্টে রান্নাঘরের সহকারী হিসেবে কাজের জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন।

বজরং দল অভিযোগ করে যে, এই নারীদের জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা হচ্ছিল এবং মানব পাচারের উদ্দেশ্যে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করে এবং মানব পাচার ও জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণের অভিযোগে মামলা দায়ের করে।এই গ্রেফতার কেরালায় ব্যাপক প্রতিবাদের সূচনা করে।

কেরলের শাসক দল সিপিআই(এম)-নেতৃত্বাধীন এলডিএফ এবং বিরোধী কংগ্রেস-নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ একত্রিত হয়ে এই গ্রেফতারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। কেরালার খ্রিস্টান সম্প্রদায় এই ঘটনাকে তাঁদের উপর আক্রমণ হিসেবে দেখেছে।

ক্যাথলিক বিশপস কনফারেন্স অফ ইন্ডিয়ার (সিবিসিআই) সভাপতি আর্চবিশপ মার অ্যান্ড্রুস থাজাথ বলেন, “এই গ্রেফতার আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এই ধর্মযাজকেরাকোনো অপরাধ করেননি। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে সমাজসেবায় নিয়োজিত ছিলেন।”

জামিন ও মুক্তিবিলাসপুরের এনআইএ আদালত শনিবার প্রিন্সিপাল ডিস্ট্রিক্ট অ্যান্ড সেশনস জজ সিরাজুদ্দিন কুরেশির নেতৃত্বে তিন অভিযুক্ত সিস্টার প্রীতি মেরি, সিস্টার বন্দনা ফ্রান্সিস এবং সুখমান মান্দাভি—কে জামিন মঞ্জুর করে। আদালতের নির্দেশে তাঁদের প্রত্যেককে ৫০,০০০ টাকার বন্ড এবং দুটি জামিনদার জমা দিতে হয়েছে। এছাড়া, তাঁদের পাসপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে এবং দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

জামিনের পর সিপিআই সাংসদ পি সন্তোষ কুমার এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “এই ধর্মযাজকরা মিথ্যা অভিযোগে জড়িত হয়েছিলেন। এটি একটি অত্যন্ত ধাক্কাকর ঘটনা। আমরা আশা করছি, তাঁদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে।” তিনি বজরং দলের মিথ্যা অভিযোগের জন্য তদন্তের দাবি জানান।

কেরলের বিজেপি সভাপতি রাজীব চন্দ্রশেখরও এই জামিনকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “এটি একটি ভুল বোঝাবুঝির ফল। আমি শতভাগ বিশ্বাস করি, এই নানরা কোনো অপরাধে জড়িত নন।” তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে আলোচনার পর এই জামিনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সমর্থনের কথা উল্লেখ করেন।

Advertisements

এই গ্রেফতার কেরল এবং ছত্তিশগড়ের বিজেপি ইউনিটের মধ্যে মতবিরোধের জন্ম দেয়। ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেও সাই গ্রেপ্তারের পক্ষে বলেন, “আইন তার কাজ করছে।” তবে, কেরালা বিজেপি সভাপতি রাজীব চন্দ্রশেখর এই ঘটনাকে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হিসেবে বর্ণনা করে ধর্মযাজকদের পক্ষে অবস্থান নেন।

তিনি বলেন, “ছত্তিশগড়ে প্রাইভেট প্লেসমেন্ট এজেন্সি রেগুলেশন অ্যাক্টের অধীনে নিবন্ধনের ত্রুটির কারণে এই গ্রেপ্তার হয়েছে।” এই ভিন্নমত বিজেপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে সামনে এনেছে, বিশেষ করে কেরালায় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ভোটারদের সমর্থন আকর্ষণের প্রচেষ্টার প্রেক্ষাপটে।

কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারায়ি বিজয়ন এই গ্রেফতারকে ‘খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উপর হয়রানি’ হিসেবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাছে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “এই ঘটনা সংঘ পরিবারের প্রকৃত চরিত্র প্রকাশ করে।” কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও এই গ্রেফতারকে ‘বিজেপি-আরএসএসের জনতার শাসন’ হিসেবে সমালোচনা করে তাঁদের মুক্তির দাবি জানান।

সমাজে প্রভাবএই ঘটনা কেরালায় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে। কেরালা ক্যাথলিক বিশপস কনফারেন্সের নেতৃত্বে ব্যাপক প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সিপিআই(এম) এবং কংগ্রেসের নেতারা ছত্তিশগড়ে নানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান এবং তাঁদের মুক্তির জন্য প্রচেষ্টা চালান। সিপিআই(এম) নেতা বৃন্দা কারাত বলেন, “এটি সংবিধানের জয়। এই মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে।”

দুই কেরালার নানের জামিন ও মুক্তি এই বিতর্কিত ঘটনার একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটালেও, এটি ভারতের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। নির্বাচনের আগে কেরালায় বিজেপির খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সমর্থন আকর্ষণের প্রচেষ্টা এই ঘটনায় ধাক্কা খেয়েছে।

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত তরুণ ক্রিকেটার, শোকস্তব্ধ বাংলার ক্রিকেট মহল

তবে, রাজীব চন্দ্রশেখরের সক্রিয় ভূমিকা এবং সিপিআই সাংসদ পি সন্তোষ কুমারের সমর্থন এই ঘটনাকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটি জয় হিসেবে তুলে ধরেছে। ভবিষ্যতে এই ঘটনা ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সংখ্যালঘু অধিকার নিয়ে আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।