২০০৬ সালের ৭ জুলাই মুম্বইয়ের ট্রেন বিস্ফোরণ (Mumbai Blast) মামলায় খালাস পাওয়া এহতেশাম কুতুবুদ্দিন সিদ্দিকী বলেছেন, তদন্তের শুরু থেকেই এই মামলায় ত্রুটি ছিল এবং তিনি সবসময় আশাবাদী ছিলেন যে একদিন সত্য প্রকাশিত হবে। সম্প্রতি এই মামলায় খালাস পাওয়ার পর তিনি বলেন, “প্রথম দিন থেকেই সবাই জানত যে তদন্তে সমস্যা ছিল। ভারতের সমস্ত সংস্থা বলে আসছিল যে এই বিস্ফোরণের পিছনে অন্য কেউ ছিল।
আমরা আশাবাদী ছিলাম যে একদিন সত্য বেরিয়ে আসবে। আজ প্রমাণিত হয়েছে যে আমরা নির্দোষ।” এই বিবৃতি ২০০৬ সালের মুম্বই ট্রেন বিস্ফোরণ মামলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা ভারতের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হিসেবে পরিচিত।২০০৬ সালের ৭ জুলাই মুম্বইয়ের স্থানীয় ট্রেনে সাতটি বোমা বিস্ফোরণে ১৮৯ জন নিহত এবং ৮০০-র বেশি মানুষ আহত হয়েছিল।
এই ঘটনা, যা ‘৭/১১ বিস্ফোরণ’ নামে পরিচিত, মুম্বাইয়ের পশ্চিমাঞ্চলীয় রেললাইনের মাটুঙ্গা, বান্দ্রা, খার রোড, জোগেশ্বরী, বোরিভলি, ভাইরোলি এবং মিরা রোড স্টেশনের কাছে ঘটেছিল। বিস্ফোরণগুলি সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়ে প্রায় ১১ মিনিটের ব্যবধানে সংঘটিত হয়, যা শহরের জনজীবনকে স্তব্ধ করে দেয়। এই হামলার জন্য মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, এবং এহতেশাম সিদ্দিকী ছিলেন তাদের একজন।
দীর্ঘ ১৯ বছরের বিচার প্রক্রিয়ার পর এহতেশাম সিদ্দিকীসহ বেশ কয়েকজন অভিযুক্তকে সম্প্রতি খালাস দেওয়া হয়েছে। এই রায়ে তিনি এবং তার পরিবার ত্রাণ এবং ন্যায়বিচারের অনুভূতি পেয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন যে তদন্তে গুরুতর ত্রুটি ছিল এবং ভারতের বিভিন্ন সংস্থা এই বিস্ফোরণের জন্য অন্য কাউকে দায়ী করেছে।
তিনি বলেন, “আমরা সবসময় নির্দোষ ছিলাম। তদন্তের শুরু থেকেই এটি স্পষ্ট ছিল যে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। আজ আদালতের রায়ে সত্য প্রকাশিত হয়েছে।”এই মামলায় তদন্ত পরিচালনা করেছিল মুম্বাই পুলিশের অ্যান্টি-টেররিজম স্কোয়াড (এটিএস)। তবে, তদন্ত প্রক্রিয়ায় একাধিক প্রশ্ন উঠেছিল।
বিরোধী মহল এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলি দাবি করেছে যে তদন্তে ভুলভাবে কিছু ব্যক্তিকে লক্ষ্য করা হয়েছিল এবং প্রমাণের অভাবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা চালানো হয়েছিল। এহতেশামের মুক্তি এই অভিযোগগুলিকে আরও জোরালো করেছে। তিনি বলেন, “আমরা এই দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে অনেক কষ্ট সহ্য করেছি। আমার পরিবার এবং আমি সবসময় বিশ্বাস করেছি যে ন্যায়বিচার পাব। আজ আমরা তা পেয়েছি।”
মামলার প্রেক্ষাপট
৭/১১ বিস্ফোরণ মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারা এবং আনলফুল অ্যাকটিভিটিস (প্রিভেনশন) অ্যাক্ট (ইউএপিএ)-এর অধীনে অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল। তদন্তকারী সংস্থাগুলি দাবি করেছিল যে এই হামলার পিছনে ছিল নিষিদ্ধ সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা এবং স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া (সিমি)।
তবে, এই মামলায় প্রমাণের অভাব এবং তদন্তে অসঙ্গতির কারণে বেশ কয়েকজন অভিযুক্ত খালাস পেয়েছেন। এহতেশামের মতে, তদন্তে ভুল ব্যক্তিদের লক্ষ্য করা হয়েছিল, এবং এই রায় তদন্তের ত্রুটিগুলিকে প্রকাশ করেছে।
সমাজ ও আইনি প্রভাব
এই খালাসের রায় ভারতের সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী তদন্ত প্রক্রিয়ার উপর নতুন প্রশ্ন তুলেছে। মানবাধিকার কর্মীরা দাবি করেছেন যে এই ধরনের মামলায় প্রায়ই দ্রুত গ্রেপ্তার এবং অপর্যাপ্ত প্রমাণের ভিত্তিতে মামলা গঠন করা হয়, যা নির্দোষ ব্যক্তিদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। এহতেশামের খালাস এই ধরনের ত্রুটিপূর্ণ তদন্তের শিকার ব্যক্তিদের জন্য একটি আশার আলো হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এই রায়ের পর এহতেশাম এবং তার পরিবার স্বস্তি প্রকাশ করলেও, তিনি বলেন, “এই ১৯ বছর আমাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন ছিল। আমরা সমাজের কাছে আমাদের নির্দোষিতা প্রমাণ করতে পেরেছি, কিন্তু এই সময়ে আমাদের জীবনের অনেক কিছু হারিয়ে গেছে।” তিনি তদন্তকারী সংস্থাগুলির কাছে আরও স্বচ্ছ এবং ন্যায্য তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
নিমিশা প্রিয়া মামলায় ভারত সরকারের সক্রিয় প্রচেষ্টা
৭/১১ মুম্বই ট্রেন বিস্ফোরণ মামলায় এহতেশাম কুতুবুদ্দিন সিদ্দিকীর খালাস একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এই রায় শুধু তার নির্দোষিতাই প্রমাণ করেনি, বরং ভারতের তদন্ত প্রক্রিয়ার ত্রুটিগুলিকেও উন্মোচিত করেছে। এই ঘটনা ভবিষ্যতে আরও সতর্ক এবং স্বচ্ছ তদন্তের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে। এহতেশামের এই বিজয় নির্দোষ ব্যক্তিদের ন্যায়বিচারের জন্য লড়াইয়ের একটি প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।