মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণায় ভারতের উপর আরোপিত অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্কে (Tarriff) নতুন করে দুঃশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের রফতানি-নির্ভর অর্থনীতিতে। এর ফলে রাজ্যের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ খাত—চামড়া, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেরিন শিল্প—যা দীর্ঘদিন ধরেই বিদেশি বাজারের উপর নির্ভরশীল, তারা বড় ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
বুধবার থেকে কার্যকর হওয়া এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারতের উপর মার্কিন ট্যারিফ (Tarriff) দাঁড়াল মোট ৫০ শতাংশে। রাশিয়ার তেল কেনাকে কেন্দ্র করে মার্কিন প্রশাসনের চাপ এবং ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির জেরে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে ভারতের বিভিন্ন রফতানি খাতে। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে, যেখানে শিল্পের বড় অংশ শ্রমনির্ভর এবং বিদেশি বাজারে অর্ডারের উপর নির্ভরশীল।
শ্রমনির্ভর খাত সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত
বাংলার চামড়া শিল্প (Tarriff) বহু দশক ধরে দেশের অন্যতম রফতানি-কেন্দ্রিক খাত হিসেবে পরিচিত। কলকাতা ও আশপাশের অঞ্চলে হাজার হাজার ছোট বড় ইউনিট রয়েছে, যেখানে কয়েক লক্ষ শ্রমিক কাজ করেন। মার্কিন বাজারে এই চামড়াজাত পণ্যের বড় চাহিদা থাকলেও, শুল্ক বেড়ে যাওয়ায় সেই রফতানি(West Bengal’s Leather) কার্যত থমকে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে উৎসবের মরসুমে যেখানে অর্ডার বাড়ার কথা ছিল, সেখানে উল্টে কারখানার উৎপাদনই ‘হোল্ড’-এ রাখা হয়েছে।
একই পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে রাজ্যের ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পেও। হাওড়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার শিল্পাঞ্চলে বহু মাঝারি ও ছোট শিল্প সংস্থা আমেরিকা-সহ ইউরোপের বাজারে যন্ত্রপাতি ও প্রকৌশলজাত সামগ্রী পাঠায়। বাড়তি ট্যারিফে সেই প্রতিযোগিতা ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ক্রেতারা বিকল্প বাজার খুঁজতে শুরু করেছেন।
মেরিন পণ্যের রফতানিতেও টানাপোড়েন
বাংলার মেরিন সেক্টরও আন্তর্জাতিক বাজারে দীর্ঘদিন ধরেই পরিচিত। বিশেষত মাছ ও সামুদ্রিক পণ্যের রফতানি থেকে প্রতিবছর হাজার কোটি টাকা আয় হয়। কিন্তু মার্কিন বাজারের (West Bengal’s Leather) উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা থাকায় সেই আয়ের বড় অংশ এখন ঝুঁকির মুখে। রফতানিকারকদের মতে, শুধু শুল্ক বৃদ্ধিই নয়, আন্তর্জাতিক শিপমেন্ট ও কনটেইনার পরিবহনের খরচও বাড়ছে। ফলে মোট ব্যয় এমন জায়গায় পৌঁছচ্ছে যেখানে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
ক্ষতির অঙ্ক ও সম্ভাব্য প্রভাব
বাণিজ্য মহলের হিসেব অনুযায়ী, অন্তত ৪৫,০০০ কোটি টাকার ভারতীয় রফতানি এই সিদ্ধান্তে প্রভাবিত হবে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গকে ‘সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত’ রাজ্যগুলির মধ্যে ধরা হচ্ছে। কারন, এখানে বহু শিল্পক্ষেত্র শ্রমনির্ভর হওয়ায় সরাসরি কর্মসংস্থানের উপর প্রভাব পড়বে। অনেক সংস্থা ইতিমধ্যেই নতুন অর্ডার গ্রহণ বন্ধ রেখেছে, ফলে উৎপাদন থমকে গিয়েছে। শিল্পমহলের আশঙ্কা, যদি দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি না হয়, তবে হাজার হাজার শ্রমিক উৎসবের মরসুমে কর্মহীন হয়ে পড়বেন।
শিল্পমহলের দাবি ও সরকারের ভূমিকা
রফতানিকারকদের একাংশ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অবিলম্বে হস্তক্ষেপের দাবি তুলেছেন। তাঁদের বক্তব্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক ছাড় পাওয়ার চেষ্টা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি বিকল্প বাজারে প্রবেশের উদ্যোগও জরুরি। বিশেষত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির সঙ্গে নতুন করে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
অন্যদিকে, রাজ্যের শিল্পমহলও মনে করছে, শুধু কেন্দ্র নয়, রাজ্য সরকারকেও ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিটগুলিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। বিশেষত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য বিশেষ প্যাকেজ না এলে বহু সংস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়েন না কমা পর্যন্ত পরিস্থিতি সহজ হবে না। মার্কিন ট্যারিফ বৃদ্ধির ফলে শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা ভারতের রফতানিই চাপে পড়েছে। তবে বাংলার শিল্পক্ষেত্রে এর প্রভাব তুলনামূলকভাবে বেশি। কারণ রাজ্যের বহু শিল্প খাত রফতানিনির্ভর এবং শ্রমনির্ভর। উৎসবের আগে এই আঘাত রাজ্যের অর্থনীতিকে কোথায় নিয়ে যাবে, তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে প্রতিদিন।