ট্রাম্পের ফোনে শুভেচ্ছা, মোদীর জন্মদিনে নতুন কূটনৈতিক বার্তা

নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন ১৭ সেপ্টেম্বর ৭৫ বছরে পা রাখছেন, তার আগের দিনই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Trump Greets Modi) ফোন করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা…

India-America Trade Dispute

নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন ১৭ সেপ্টেম্বর ৭৫ বছরে পা রাখছেন, তার আগের দিনই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Trump Greets Modi) ফোন করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালেন। শুভেচ্ছা বিনিময়ের এই ঘটনাই কূটনৈতিক মহলে নতুন বার্তা দিল— ভারত-আমেরিকা সম্পর্কের টানাপোড়েন কমে আসছে এবং বাণিজ্য চুক্তির আলোচনায় নতুন গতি ফিরছে।

মোদী সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে লিখেছেন, “আপনার মতো আমিও ভারত-আমেরিকা সর্বাঙ্গীণ অংশীদারিত্বকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইউক্রেন সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আপনার প্রচেষ্টাকে আমরা সমর্থন করি।”

   

ট্রাম্পও তাঁর ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লিখেছেন, “আমার বন্ধু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে অসাধারণ ফোনালাপ হলো। আমি তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালাম। তিনি একেবারে চমৎকার কাজ করছেন। ধন্যবাদ নরেন্দ্র, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আমার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য।”

ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের উপর ৫০% পর্যন্ত আমদানি শুল্ক বসিয়ে রেখেছিল। এর পেছনে যুক্তি ছিল রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্প ইউরোপকে বেশি চাপ দিচ্ছেন, তবুও ভারত এখনও রাশিয়ার শীর্ষ তেল ক্রেতাদের অন্যতম। এই কারণে মার্কিন বিশ্লেষকরা দিল্লি-মস্কো সম্পর্ককে বড় সমস্যা হিসেবেই দেখছেন।

ভারত নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছে— কৃষক ও দুগ্ধশিল্পের স্বার্থের প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাইছে ভুট্টা-সহ একাধিক কৃষিজাত পণ্য রপ্তানির সুযোগ। কিন্তু মোদী পুনরায় আশ্বাস দিয়েছেন, কৃষকের স্বার্থে সরকার অটল।

Advertisements

ট্রাম্পের উপদেষ্টা পিটার নাভারো ও মার্কিন ট্রেজারি সচিব স্কট বেসেন্ট ভারতের বিরুদ্ধে কটূ মন্তব্য করেছিলেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রীকেও নিশানা করা হয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প-মোদীর ব্যক্তিগত সৌহার্দ্য ধীরে ধীরে সেই উত্তেজনা প্রশমিত করেছে। জন্মদিনের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর দিল্লিতে দুই দেশের প্রতিনিধিদের বৈঠক হয় এবং সেখানে জানানো হয় আলোচনার পরিবেশ ছিল “ইতিবাচক”।

ট্রাম্প প্রায় তিন ডজনবার দাবি করেছেন, তিনি বাণিজ্যকে হাতিয়ার করে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ থামিয়েছিলেন। তিনি বলেন, কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার পর ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর সময় যুদ্ধ ঠেকানোই ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় ভূমিকা। ভারত এই দাবি নস্যাৎ করেছে। এমনকি পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রীও মঙ্গলবার একই মন্তব্য করেন।

তবে ট্রাম্প আবারও দাবি তুলেছেন যে তিনি অন্তত সাতটি বড় যুদ্ধ থামিয়েছেন। সেই দাবির কয়েক ঘণ্টা পরেই মোদীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। ফলে জন্মদিনের শুভেচ্ছা বিনিময় এক অর্থে বাণিজ্য, তেল, ইউক্রেন ও পাকিস্তান প্রসঙ্গ মিলিয়ে এক কূটনৈতিক বার্তায় পরিণত হয়েছে।

মোদী ও ট্রাম্পের ব্যক্তিগত equation আবারও দেখাল, রাজনৈতিক মতপার্থক্য সত্ত্বেও কূটনৈতিক সম্পর্কের সেতু রক্ষা করা সম্ভব। জন্মদিনের শুভেচ্ছার মতো সৌজন্যও কখনও কখনও দীর্ঘমেয়াদি দ্বন্দ্বের সমাধানে ভূমিকা রাখে। ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য আলোচনার নতুন শুরু তাই বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।