নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ৭৫তম জন্মদিনের প্রাক্কালে নাটকীয়ভাবে পাল্টে গেল কূটনৈতিক ছবিটা। মাসের পর মাস ভারতকে রুশ তেল আমদানি নিয়ে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ ভারতীয় রপ্তানির ওপর চাপিয়েছেন ৫০ শতাংশ শুল্ক৷ সেই তিনিই মঙ্গলবার একেবারে ভিন্ন সুরে মোদীকে ফোন করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালেন৷ শুধু তাই নয়, ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে শান্তি উদ্যোগে ভারতের সমর্থনের প্রশংসাও করলেন।
ট্রাম্পের বার্তা
ট্রাম্প নিজের প্ল্যাটফর্ম Truth Social-এ লিখেছেন, “আমার বন্ধু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দুর্দান্ত ফোনালাপ হল। আমি ওঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালাম। উনি অসাধারণ কাজ করছেন। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ থামাতে সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ, নরেন্দ্র!”
পাল্টা টুইট মোদীর Trump calls Modi on birthday
প্রধানমন্ত্রী মোদীও পাল্টা টুইটে লিখেছেন, “আমার প্রিয় বন্ধু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ফোনকল এবং শুভেচ্ছার জন্য ধন্যবাদ। আমিও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভারত-আমেরিকা সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে। ইউক্রেন সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রচেষ্টাকে আমরা সমর্থন করি।”
এই বিনিময়কে প্রতীকী গুরুত্বে ভরপুর বলেই দেখছেন বিশ্লেষকরা। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেও ওয়াশিংটন দিল্লিকে রাশিয়ান তেল কেনার জন্য “যুদ্ধের অর্থজোগানদাতা” বলে অভিযুক্ত করেছিল এবং শাস্তিমূলক শুল্ক বসিয়ে সম্পর্ককে ঠাণ্ডা ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই হাওয়া পাল্টাতে শুরু করে। ট্রাম্প ভারত-আমেরিকা সম্পর্ককে “বিশেষ” বলে বর্ণনা করেন, আর মোদী প্রতিউত্তরে আমেরিকাকে “ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও প্রাকৃতিক অংশীদার” আখ্যা দেন।
দিল্লিতে আবার বাণিজ্য আলোচনা শুরু
মোদীর জন্মদিনের আগের দিনই আরও এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা এল। নয়াদিল্লিতে ফের শুরু হলো ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য আলোচনা—যা গত আগস্টে থেমে গিয়েছিল শুল্ক বিরোধকে ঘিরে। সাত ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠকে মার্কিন বাণিজ্য দপ্তরের প্রধান আলোচক ব্রেন্ডান লিঞ্চ এবং ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রকের বিশেষ সচিব রাজেশ আগরওয়ালের নেতৃত্বে দুই পক্ষই আলোচনাকে “ইতিবাচক ও আগামীর দিকে দৃষ্টি রাখা” বলে বর্ণনা করেছেন।
যদিও এটি আনুষ্ঠানিক ষষ্ঠ দফার আলোচনা নয়, কিন্তু জমি প্রস্তুতের প্রয়াস বলেই জানানো হয়েছে। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উভয় পক্ষই একটি “পারস্পরিকভাবে লাভজনক” চুক্তিতে দ্রুত পৌঁছতে উদ্যোগী।
সব মিলিয়ে, দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর এই শুভেচ্ছা ও আলোচনার পুনরারম্ভ ইঙ্গিত দিচ্ছে—ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক আবারও সমঝোতা ও নতুন সম্ভাবনার পথে হাঁটতে শুরু করেছে।